সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। রাতের আলো ঝলমলে রাস্তায় জনসমক্ষে পিস্তল, রিভলবার বের করে গুলি চালিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া হচ্ছে স্বর্ণালংকার, টাকা। ব্যাংক থেকে টাকা তোলা, টাকা পরিবহন, মূল্যবান সামগ্রী বহন করা যে কারও জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছোট ব্যবসায়ী, দোকানিদেরও দেখার যেন কেউ নেই।

গতকাল সোমবার রাজধানীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে জীবন-জীবিকা মারাত্মক ব্যাহত হবে। এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা চলছে। ফুটপাতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ছোট দোকানিরা সারাদিন বিক্রি করে যে টাকা পান, তা নিয়ে রাতে বাসায় ফেরাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারীরা চাকুসহ নানা ধরনের অস্ত্র ঠেকিয়ে মুহূর্তেই সব লুটে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানা গেছে। গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকানি মো.

ইউসুফ সমকালকে বলেন, তিনি বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জের নিজ বাসা থেকে এসে দোকান করেন। প্রতিদিন বিক্রি হয় ৫-৬ হাজার টাকা। এই টাকা বহন করে রাতে বাসায় যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়ি ফেরার সময় প্রতিমুহূর্তে আতঙ্ক কাজ করে মনের মধ্যে। রাত হলেই ভয় বেড়ে যায়। দিনে পুলিশের দেখা মেলে, তবে রাতে পুলিশ দেখা যায় না বললেই চলে। রাতে পুলিশ, সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ভেনাস জুয়েলার্সের বিপ্লব পাল সমকালকে বলেন, পরিস্থিতি ভালো না। সব দিকেই নিরাপত্তাহীনতা। এই জুয়েলার্সের অন্য একজন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ক্রেতারা টাকা নিয়ে দোকানে আসতে চান না। এ কারণে বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায় চলছে মন্দা।

এলিফ্যান্ট রোডে বাটা শো-রুমের ম্যানেজার রাজীব হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। সে কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন মানুষ আতঙ্কে থাকে। কারওয়ানবাজারের ছোট দোকানি আবদুর রহিম বলেন, এমনিতেই বেচাকেনা কমে গেছে। এ সময় কষ্ট করে সারাদিনে নানা পণ্য বিক্রির পর যে টাকা পাওয়া যায়, তা নিয়ে বাসায় ফিরতে ভয় হয়। আতঙ্কের মধ্যে বাড়ি ফিরতে হয়। কখন, কে রাস্তায় দাঁড় কারিয়ে ছুরি ঠেকিয়ে ব্যবসার পুঁজিটুকু কেড়ে নেয়, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দিন চলা যায় না।
ভোলা থেকে রাজধানীতে আসা ভ্যানচালক মো. নয়ন সমকালকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই চারদিকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে গেছে। ভ্যানচালক হলেও আমাদের মাঝে আতঙ্ক আছে। আমরা মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাই। ভ্যান দাঁড় করিয়ে কখন কে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায়, তার নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি আরও বলেন, নিজের পকেটে যে পরিমাণ টাকাই থাকুক, ছিনতাইকারী চাইলে দিতে হবে। মানুষ এখন সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। দিনে দিনে এসব বাড়ছেই। পুলিশ আগের মতো ভূমিকা রাখে না। আগে কোথাও কিছু হলে পুলিশ দৌড়াদৌড়ি করে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিত। এখন তারা তাদের মতো দাঁড়িয়ে থাকে, টহল দেয়; এটুকুই।

মোতালিব প্লাজার কাছে হাতিরপুল মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. আলমগীর সমকালকে বলেন, ‘প্রতিদিন নানা কিছু সামলাতে হয়। কেউ বলে আমি সমন্বয়ক, কেউ বলে চেয়ারম্যান, কেউ বলে আমি ওমুক দলের ওমুক কমিটির সভাপতি, আবার কেউ বলে আমি এলাকার প্রভাবশালী। তারা খেয়াল-খুশিমতো কাজ করতে চায়। বাধা দিলেই ঘটে বিপত্তি। হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। এরাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। কোনো না কোনো প্রভাবশালীর সঙ্গে এদের যোগসাজশ আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশের শতভাগ সদিচ্ছা, প্রচেষ্টা আছে। পুলিশ যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চায়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ নত ই পর স থ ত র ব যবস য় ক উ বল আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থনীতি সমিতিতে হামলায় জড়িতদের বিচার চাইল অন্তর্বর্তী কমিটি

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিচার চাইলেন সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ অডিটরিয়ামে আজ সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ, সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সদস্য মোস্তফা সাইফুল আনোয়ার বুলবুল প্রমুখ। কমিটির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলনের নাম করে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে হামলা চালায় সমিতির স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটি, যা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী ও বিধিবহির্ভূতভাবে গঠিত। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার দিকে সমিতির কার্যালয়ে সশস্ত্র আক্রমণ, সিসিটিভি ভাঙচুর এবং ব্যাংকের চেকবইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব করা হয়।

সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা দাবি করেন, এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আজিজুর রহমান এবং ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের নেতৃত্বদানকারী সাবেক যুগ্ম সচিব সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের ৫০-৬০ জন সশস্ত্র ক্যাডার। অর্থনীতি সমিতিতে আবারও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়েই যে এই লোকজন একত্র হয়েছেন। গঠিত তথাকথিত অ্যাডহক কমিটিতে ৮–১০ জন আছেন, যাঁরা অর্থনীতি সমিতির সদস্যই নন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৯ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছে গত ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায়ী কমিটি।

অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ বলেন, সমিতির যেকোনো সদস্য যেকোনো দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন; দাবি জানাতে পারেন। এ ধরনের অপেশাদার মনোভাব নিয়ে দখল, হামলা ও জিম্মি করে কিছু আদায়ের হীন প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বর্তমান সরকারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। খুব দ্রুতই একটি অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যাঁরাই নেতৃত্বে আসবেন, তাঁদের কাছে সমিতির দায়িত্ব তুলে দেওয়াই অন্তর্বর্তী কমিটির মূল লক্ষ্য। অর্থনীতি সমিতির ঐতিহ্য রক্ষায় সব সদস্যকে দায়িত্বশীল আচরণ ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে
  • নিজেদের মধ্যে বিবাদের কোনো সুযোগ এখন নেই: রুমিন ফারহানা
  • অর্থনীতি সমিতিতে হামলায় জড়িতদের বিচার চাইল অন্তর্বর্তী কমিটি
  • সন্ত্রাসী-ধর্ষকদের শাস্তি দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ
  • দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ
  • ঝিনাইদহে জাসদ গণবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
  • পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’
  • রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে মানববন্ধন