আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে
Published: 24th, February 2025 GMT
দেশে খুন-ধর্ষণ-ছিনতাই-ডাকাতি ও মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মব সন্ত্রাস জনগণের জানমালের নিরাপত্তাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার চরম দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যকর অবস্থার পর গত রাত (২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে) সাড়ে তিনটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বাসভবনে নাটকীয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু দায়িত্বহীন নয়, সত্যের অপলাপ মাত্র। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আর দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার নেই।’
ধর্ষণসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিনি, বরং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, যেখানে নারী ও মেয়েরা যৌন হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিও। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বর্তমান সময়ে ঘরে–বাইরে কোথাও নারী ও শিশুরা নিরাপদ নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জুলাই–পরবর্তী স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর এ ধরনের অরাজক অবস্থায় দেশ ও জাতি মর্মাহত।
এদিকে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র। সোমবার গণমাধ্যমকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ভয়াবহ ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা, পুলিশের কাছে গিয়ে আরও হেনস্তা, একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল তুলতে গিয়ে শিশু ধর্ষণসহ সারা দেশে নারী নিগ্রহের ঘটনা জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতি তৈরি করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্দেশনার পাশাপাশি তৎপরতাও বাড়াতে হবে
নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের জন্য এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যে ১৪টি নির্দেশনা জারি করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তারা বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পাহারা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে।
আমরাও মনে করি, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিকেরা কোথায় কী মালামাল রেখে যান, সেটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের জানার কথা নয়। কিন্তু ডিএমপি যখন নাগরিকদের এসব নির্দেশনা ও সদুপদেশ দিচ্ছে, তখনই ঢাকা শহরে র্যাবের নামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বুধবার ভোরে র্যাবের নাম করে একদল ডাকাত ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি ঘটনার সময় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে ডাকাতেরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে ৯ মার্চ ও ১২ ডিসেম্বরও র্যাবের পরিচয়ে যথাক্রমে পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আবাসিক এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা কী বার্তা দেয়? র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর সাতজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই ‘উড়ে’ গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশে কোনো বাহিনী বাতিল বা পরিত্যক্ত ঘোষণার উদাহরণ আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় রক্ষীয় বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের সদস্যদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।
ঈদে বাড়ি বা সড়কে মানুষ নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশি তৎপর থাকবে না। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে চলেছে। তদুপরি যে খবরটি আমাদের বিচলিত করে, সেটি হলো এসব অপরাধের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্যদের যুক্ত থাকা। যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় নামে, তখন আর জনগণ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না।
ডিএমপি ঢাকার বাসিন্দাদের ঈদের সময় সজাগ থাকতে বলেছে। আশা করি, অন্যান্য বড় শহরেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কেবল বাসাবাড়ি বা পর্যটন এলাকা নয়, চলাচলের পথও নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কপথে ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশকে এখানে আরও তৎপর হতে হবে। ঈদের সময় যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে এবং কোনো কোনো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক সময় পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশও থাকে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিজেদের সজাগ রাখুক।