Samakal:
2025-04-18@00:13:07 GMT

শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব সংগত

Published: 24th, February 2025 GMT

শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব সংগত

রবিবার এনবিআর-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক-বাজেট বৈঠকে সংবাদপত্রের স্বত্বাধিকারীগণের সংগঠন ‘নোয়াব’ যেই সকল দাবি জানাইয়াছে, সেইগুলির যৌক্তিক সমাধান জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোয়াব নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ হইতে কমাইয়া ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়াছে। ইহার সহিত সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্পরূপে বিবেচনাপূর্বক করপোরেট কর সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপনেরও অনুরোধ করিয়াছে নোয়াব। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ তাহাদের দাবির সপক্ষে যেই সকল যুক্তি উপস্থাপনা করিয়াছেন, সেইগুলিও প্রণিধানযোগ্য। তাহারা যথার্থই বলিয়াছেন, বর্তমানে সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হইলেও এই বাবদ ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এইগুলির সহিত অগ্রিম আয়কর ও পরিবহন বীমা যুক্ত করিলে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুধু কর-শুল্ক বাবদ প্রকৃত ব্যয় প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছে। তদুপরি যুক্ত হইয়াছে নিউজপ্রিন্ট ও ডলারের বর্ধিত দাম। কয়েক বৎসর পূর্বে এক টন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৬০০ ডলারের কম। এখন তাহা ৭০০ ডলার অতিক্রম করিয়াছে। টাকা-ডলারের বিনিময় হারও পূর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে। সংবাদপত্রের মূল আয় যেই বিজ্ঞাপন, উহার উপরেও কর-ভ্যাট অধিক। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল বৎসরের পর বৎসর আটকাইয়া থাকে। বিবিধ কারণে ব্যক্তি খাতের বিকাশ রুদ্ধ হইবার কারণে এই খাত হইতে বিজ্ঞাপনও হ্রাস পাইয়াছে। এইদিকে এই সংকটসমূহ এমন সময়ে সংবাদপত্র শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে যখন বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মাধ্যমের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়াছে; হ্রাস পাইয়াছে সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা।
স্মরণে রাখিতে হইবে, সংবাদপত্র নিছক শিল্প নহে; দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিবেদিত জরুরি সেবাও বটে। এনবিআর চেয়ারম্যান স্বয়ং স্বীকার করিয়াছেন, কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে জনপরিসরে সচেতনতা সৃষ্টির যেই ব্যাপক কার্যক্রম চলিতেছে উহাতে সংবাদপত্র উল্লেখযোগ্য অবদান রাখিতেছে। বহু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দিবসের সূচনায় দেশ-বিদেশের বিবিধ ঘটনা সবিস্তারে মানুষ সংবাদপত্র হইতেই পায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিবিধ ঘটনা সম্পর্কিত বিজ্ঞজনদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্লেষণও সংবাদপত্র তুলিয়া ধরে। সংবাদপত্র সঠিক তথ্য মুদ্রণ করে বলিয়াই রাষ্ট্র বা সরকার ক্ষতিকর গুজব প্রতিরোধ করিতে পারে। সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজের যেই কোনো টেকসই উন্নয়নের বিষয়ও সংবাদপত্র শিল্পের সতেজতার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু বাস্তবে দেশের সংবাদপত্র শিল্প এক প্রকার রুগ্‌ণ হইয়া পড়িয়াছে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, বিগত সরকার সংবাদপত্রকে সেবা শিল্পের মর্যাদা দিলেও এই শিল্প-সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তাবের প্রতি উহারা কর্ণপাত করে নাই। এই প্রেক্ষাপটে এই শিল্প-সংশ্লিষ্ট সকলের কথা শ্রবণ করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এই কথাও স্মরণে রাখিতে হইবে, যেই গণঅভ্যুত্থান বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পথ সুগম করিয়াছে, মতপ্রকাশ তথা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের দাবিটি সেই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম জ্বালানিস্বরূপ কাজ করিয়াছে। অর্থাৎ অন্তত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের অংশরূপেও সংবাদপত্র শিল্পের যথার্থ বিকাশের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করিতে হইবে। আমরা জানি, সংবাদপত্রের সহিত শুধু সাংবাদিক বা অন্যান্য কর্মীই জড়িত নন; ইহার মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ, বিজ্ঞাপনসহ বহু কাজে অগণিত মানুষ যুক্ত। এই সকল মানুষের পরিবারগুলিও এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। আমাদের বিশ্বাস, আসন্ন বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পের অব্যাহত অগ্রগতি ও মসৃণ পরিচালনার স্বার্থে বিদ্যমান শুল্ক ও কর নীতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হইবে। নোয়াবের অন্য প্রস্তাবগুলি সম্পর্কেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসিবে। একটা বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের নিকট এমনটা আশা করা আদৌ বাহুল্য নহে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব দপত র স ব দপত র শ ল প স ব দপত র র কর য় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ