ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছয়টি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব ব্যাংক হিসাবে ৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানায় দুদক।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের ছয়টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এর বাইরে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা জমা এবং ৮৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই তিনটি ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমানের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে ১০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। জমা হয় ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বর্তমানে জমা রয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এর বাইরে সালমান এফ রহমানের ভাই এ এস এফ রহমানের নামে চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে ২২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর উত্তোলন করা হয় ১০৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বর্তমানে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৭২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। এখন পর্যন্ত সালমান এফ রহমানের ১১ মামলায় মোট ৬০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তিনি কারাগারে রয়েছেন।

আরও পড়ুনসালমান পরিবারের ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক২৩ জানুয়ারি ২০২৫

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা এসব ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন।

গত ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্রোক করা এসব সম্পদের বেশির ভাগই রয়েছে ঢাকার দোহারে।

আরও পড়ুনসালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ৩৭২ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ৭ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র র সদস য এসব ব য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এফআর টাওয়ারে আগুন : ৬ বছরেও শুরু হয়নি আনুষ্ঠানিক বিচার

বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কের ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে দায়ের করা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার ৬ বছরেও শুরু হয়নি। কবে শুরু হয়ে মামলা শেষ হবে বলছে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা করছেন, বিচার শুরু হলে সাক্ষী হাজির করে মামলা শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ২৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৭১। সেই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার প্রায় তিন বছর ৯ মাস পর ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্ত শেষে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন ডিবি পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সমীর চন্দ্র সূত্রধর। তবে রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মামলাটির ধার্য তারিখ ছিলো। ওই দিন চার্জশিটটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তবে আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ না করে মামলাটি পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

এরপর পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে একই আসামিদের অভিযুক্ত করে ও লিয়াকত আলী খান মুকুলকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই এর ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রফিকুল ইসলাম।

গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত পিবিআই'র দেয়া ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।

চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন-এফআর টাওয়ার ভবনের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা এস এম এইচ আই ফারুক, তাজভিরুল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, মিসেস ওয়ারদা ইকবাল ও রফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে কাজী মাহমুদুল নবী এবং এস এম এইচ আই ফারুক মারা গেছেন।

আসামিদের মধ্যে ফারুক জমির মূল মালিক। বিএনপি নেতা তাজভীরুল ইসলাম ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। অপর ছয়জন ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্য। 

গত বছর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। মামলাটি ঢাকার ৯ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাসরুর সালেকীনের আদালতে এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন এবং চার্জশুনানির পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন এবং চার্জশুনানির জন্য ছিলো। তবে পুলিশ এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য আগামি ২৭ এপ্রিল মৃত্যু প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি দুই দফা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট এসেছে। মামলা বিচারের জন্যও প্রস্তুত হয়ে গেছে। চার্জগঠন করে বিচার শুরু হবে। এক আসামি মারা গেছেন। তার মৃত্যু প্রতিবেদন আসেনি। প্রতিবেদন আসলে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হবে। এরপর আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সাক্ষীদের হাজির করে যতদ্রুত সম্ভব মামলার বিচারকাজ শেষ করার।”

আসামি তাজভীরের আইনজীবী মাজেদুর রহমান মামুন বলেন, “ভবনে ২২ তলার ৩টি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন তাজভীর। আগুন লেগেছে ৮ম তলা থেকে। উনি তিনটি মাত্র ফ্ল্যাটে মালিক। উনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ভবন নির্মাণসহ কোনো অনিয়মের সঙ্গে ওনার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা আশা করি, চার্জগঠনের সময় উনি অব্যাহতি পাবেন। তারপরও যদি চার্জগঠন হয়ে যায় আইনি লড়াই করে তাকে খালাসের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।”

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও হাসপাতালে একজন নিহত হন। আহত হন ৭১ জন। ওই ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত ৩০ মার্চ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ