অর্থনীতি সমিতিতে হামলায় জড়িতদের বিচার চাইল অন্তর্বর্তী কমিটি
Published: 24th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিচার চাইলেন সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ অডিটরিয়ামে আজ সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ, সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সদস্য মো.
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলনের নাম করে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে হামলা চালায় সমিতির স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটি, যা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী ও বিধিবহির্ভূতভাবে গঠিত। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার দিকে সমিতির কার্যালয়ে সশস্ত্র আক্রমণ, সিসিটিভি ভাঙচুর এবং ব্যাংকের চেকবইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব করা হয়।
সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা দাবি করেন, এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আজিজুর রহমান এবং ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের নেতৃত্বদানকারী সাবেক যুগ্ম সচিব সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের ৫০-৬০ জন সশস্ত্র ক্যাডার। অর্থনীতি সমিতিতে আবারও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়েই যে এই লোকজন একত্র হয়েছেন। গঠিত তথাকথিত অ্যাডহক কমিটিতে ৮–১০ জন আছেন, যাঁরা অর্থনীতি সমিতির সদস্যই নন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৯ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছে গত ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায়ী কমিটি।
অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ বলেন, সমিতির যেকোনো সদস্য যেকোনো দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন; দাবি জানাতে পারেন। এ ধরনের অপেশাদার মনোভাব নিয়ে দখল, হামলা ও জিম্মি করে কিছু আদায়ের হীন প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বর্তমান সরকারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। খুব দ্রুতই একটি অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যাঁরাই নেতৃত্বে আসবেন, তাঁদের কাছে সমিতির দায়িত্ব তুলে দেওয়াই অন্তর্বর্তী কমিটির মূল লক্ষ্য। অর্থনীতি সমিতির ঐতিহ্য রক্ষায় সব সদস্যকে দায়িত্বশীল আচরণ ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদযাত্রা: সদরঘাটে চিরচেনা ভিড়
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোম কিংবা মঙ্গলবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। ঈদের আনন্দ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকেই। যারা ঢাকা থেকে নৌপথে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান, তাদের বেশিরভাগের প্রথম গন্তব্য সদরঘাট নৌ টার্মিনাল। এখান থেকেই লঞ্চে করে যাত্রা করেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের উদ্দেশে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সেই চেনা দৃশ্য—যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চে প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই বাতিল করা হবে লঞ্চের লাইসেন্স।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাবে। দুপুরের মধ্যে বেশকিছু লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে।
টার্মিনালে দেখা গেছে, পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। যাত্রীদের চাপও অনেক। লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছেন। কেবিনের টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।
এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের সামনে কথা হয় রাজ্জাক হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। রাস্তায় যানজট হতে পারে, তাই আগেভাগেই বাসা থেকে চলে এলাম। চাহিদা বেশি থাকলেও কেবিন কম। আমাদের কেবিন বুকিং করা ছিল। লঞ্চের যাত্রায় কোনো কষ্ট নেই। তাই, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে প্রতিবছরই লঞ্চে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাই। যারা এখন আসছেন, তারা ডেকে বসে যাবেন।”
বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চে কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার বছর আগে ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যেত না। অনেক সময় ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হতো। আজ আগের মতো ভিড় না থাকলে যাত্রীর চাপ আছে মোটামুটি। লঞ্চ বলা হলেও এটা বিরাট একটা জাহাজ। হাজার হাজার লোক উঠলেও বোঝা যায় না। ডেকে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়। বাসে ভ্রমণ করলে আমার পা ব্যথা করে। এ কারণে বাসে আমি যাই না।”
এমভি জামাল-৮ লঞ্চের যাত্রী আলেয়া বেগম বলেন, “আমি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় যাব। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়। রাস্তায় জ্যাম হতে পারে, তাই আগেভাগে বাসা থেকে বের হয়ে চলে এসেছি। লঞ্চের যাত্রা আরামদায়ক। এবার আরামে বাড়ি যেতে পারব।”
এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার কালাম হোসেন বলেন, “আমাদের লঞ্চে ৮০টি কেবিন আছে। ইতোমধ্যে সব বুকিং হয়ে গেছে। যাত্রীর চাপ ভালোই আছে।”
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল শেখ বলেন, আজ যাত্রীর চাপ আছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালে বিশেষ সার্ভিস শুরু হয়েছে। যাত্রী পরিবহনে বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি চলাচল করছে ২৬টি লঞ্চ। ২৫ মার্চ শুরু হয়েছে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ২৬টি লঞ্চ তিন ভাগে ভাগ হয়ে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা আছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেছেন, নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি বরদাশত করা হবে না। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক