রংপুরে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘এলাকাবাসীর’ সংঘর্ষ, ৬ বাড়িতে হামলা
Published: 24th, February 2025 GMT
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের’ সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকালে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদামবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিযবুত তাওহীদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা মঙ্গলবার। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিস্ট লোকজনও সম্ভবত এদের সঙ্গে আছে। আজকে কিছু লোকজনের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে গ্রামবাসী বুঝতে পারেন, তাওহীদের লোকজন জড়ো হচ্ছে। তখন তাঁরা সেখানে গেলে হিযবুত তাওহীদের লোকজনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করি।’
ওসির ভাষ্য, দুই পক্ষকে সরিয়ে দিলে তখন আরেকটি পক্ষ আরেক গ্রাম থেকে এসে হিযবুত তাওহীদের লোকজন যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, পেছন থেকে সেই বাড়িতে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে চার-পাঁচটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হিযবুত তাওহীদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পান ছিদামবাজার এলাকার আবদুল কুদ্দুস। এ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে সংগঠনের নেতাদের দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে স্থানীয় ডেকোরেটর থেকে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলমের হুমকির কারণে ডেকোরেটরের মালিক জিনিসপত্র ফেরত নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে রাতেই জানতে পারেন, সোমবার তাঁর বাড়িতে হামলা হবে। তিনি রাতেই পীরগাছার ওসি ও উপজেলা জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানান।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তাঁর ভাষ্য, ‘হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিষ্টানের আস্তানা, ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও’ স্লোগান দিয়ে তাঁর ও কয়েকজন কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সেখানে হিযবুত তাওহীদের ১০-১৫ জন কর্মী ছিলেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বার সংগঠিত হয়ে এসে হামলা করেন।
তবে ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের দাবি, ‘ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। গন্ডগোল করার জন্য সবাই একখানে হইছে। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি।’ নূর আলমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। হামলার আশঙ্কার কথা আবদুল কুদ্দুস জানিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি।
আগে থেকে কোনো পক্ষই বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি দাবি করে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তার আগেই যেটুকু হয়েছে, আশপাশে হয়েছে। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।
পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ আাছে কি না, জানতে চাইলে নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন তাঁরা চিকিৎসাধীন।
তবে হিযবুত তাওহীদ নেতা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন, তাঁরা ভুক্তভোগী হলেও পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন ও তাঁর বাড়ি থেকে চারজনকে আটক করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ দ স র ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ফুটপাতে চাঁদাবাজি
ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে মানুষের ঢল নেমেছে কেনাকাটায়। ভিড় সামাল দিতে নিউমার্কেট ও লিবার্টি মোড়ে যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে জেলা পুলিশ। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মূল সড়কের বড় অংশ দখল করে বসেছে ভাসমান দোকান। আর এসব দোকান বসাতে প্রতিদিনই গুণতে হচ্ছে চাঁদা!
এদিকে কান্দিরপাড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে জনস্রোত। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে দোকান বসানোর কারণে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যান চলাচল বন্ধের উদ্যোগ ভালো, তবে সেটার সুফল পেতে হলে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত রাখা জরুরি। অবৈধ দোকান উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র প্রকাশ্যেই এ চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা দিলে দোকান, না দিলে উচ্ছেদ।
অনুসন্ধানে জানা যায় গেছে, নিউমার্কেট থেকে টাউনহল পর্যন্ত দুই শতাধিক ভাসমান দোকান গড়ে উঠেছে। ফুটপাতের পর এবার সড়কের মাঝেও দোকান বসেছে। অথচ এসব দোকান বসাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে। বড় দোকানগুলো থেকে ২০০ টাকা, ছোট দোকান থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, “আমরা এখানে বসার অনুমতি পাইনি। টাকা দিয়েই বসতে হয়েছে। পুলিশের নাম নিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। টাকা না দিলে দোকান তুলে দেওয়া হয়।”
অন্য এক বিক্রেতা বলেন, “পুলিশ আগে সরাসরি টাকা নিত। এখন তাদের নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক এসে চাঁদা তোলে। না দিলে দোকান সরানোর হুমকি দেওয়া হয়।”
ভিড়, জট আর হাঁটার দুর্ভোগ কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের জন্য এসব দোকান এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফারজানা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, “প্রতি বছর ঈদের আগে আসি, কিন্তু এবার হাঁটাও যাচ্ছে না। ফুটপাত দখল ছিলই, এখন তো রাস্তার মাঝেও দোকান বসেছে!”
রাজীব হাসান নামে আরেক ক্রেতার প্রশ্ন, “পুলিশ যদি যান চলাচল বন্ধ করে, তবে তারা রাস্তা দখল করেও দোকান বসতে দিচ্ছে কেন? জনসাধারণের চলাচলের জন্য যে উদ্যোগ, সেটাই তো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। কেউ পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করলে প্রমাণসহ অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, “পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি করতে পারবে না। অভিযোগ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/রুবেল/এস