বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুন অর রশিদ বলেছেন, রমজানের আগেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে বলবো, জনগণের জানমাল রক্ষায় কাজ করুন। ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করুন। তা না হলে প্রয়োজনে থানা ঘেরাও করবো, এসপি অফিস ঘেরাও করবো। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এতে দেশ ভালো থাকবে, জনগণ ভালো থাকবে।

সোমবার বিকেলে গাইবান্ধা শহরের পৌর শহীদ মিনারে আয়োজিত এক গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

হারুন অর রশিদ বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার দেশে আয়নাঘর তৈরি করেছিল। হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে গুম করেছে। বিনা বিচারে হত্যা করেছে। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা হয়েছে। দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা যখন ৯৬ সালে নির্বাচনে এসেছিলাম, তখন জামায়াত ইসলামী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ দিয়ে জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছিল। তারা মোনাফেকি করেছে। তারা মোনাফেক দল।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেছেন। সেদিন সারাদেশে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নাম-নিশানা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এখনো তাদের দোসররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। হাটেঘাটে চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশ প্রশাসন এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আমরা আপনাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

আমরা রমজানের পূর্বে সারাদেশে সমাবেশ করছি। দেখুন, সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। এখন জনতার আকাঙ্ক্ষা, দ্রুত বাংলাদেশে একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। নির্বাচনের ঘোষণা আসলেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠিত হবে, সরকার গঠিত হবে। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আরেকটি রাজনৈতিক দলের কথা না বললেই নয়। আমি নাম নিয়ে বলছি জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সাল থেকে এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তাদের দায়িত্ব এবং ভূমিকা সবসময় বিতর্কিত। 

আপনারা ইতোমধ্যে নিজেদের যথেষ্ট বিতর্কিত করে ফেলেছেন। আপনারা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা ক্ষমতায় থেকে দল গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি যদি করতে চান, এদেশের জনগণ তা গ্রহণ করবে না। নতুন দল তৈরি হোক, জনগণ গ্রহণ করলে আপত্তি নেই আমাদের। কিন্তু এদেশে গত ৪০ বছরে প্রমাণ হয়েছে, যখনই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, তখনই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ম্যান্ডেড নিয়ে বিজয়ী হয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে। সুতরাং ষড়যন্ত্র করবেন না। ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করলে, ক্ষমতায় থেকে
নতুন দল করতে চান, দেশে আগুন জ্বলে যাবে। এ আগুন নেভানোর জন্য আপনারা লোক খুঁজে পাবেন না।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান সাদিক। এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবু, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, সহ-সভাপতি শহীদুজ্জামান, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক বিপুল কুমার দাস প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের সাতচল্লিশের আজাদির লড়াই—এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।’

আজ বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেবল ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যাতে সেই সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে না দিই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একধরনের নির্বাচনকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিচার ও সংস্কারের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে, অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনর্বাসনের জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি, এই সবকিছুকেই প্রতিহত করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।’

উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচার ও অধিকারের জন্য। আমরা মনে করি, আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং বারবার যেটি বেহাত হয়েছে এবং আমাদের বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, যাতে সামনের দিনগুলোতে আর রক্ত দিতে না হয় জনগণের, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা আজকের দিনে।’

আরও পড়ুনদ্বিতীয় স্বাধীনতা যাঁরা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান: মির্জা আব্বাস১ ঘণ্টা আগে

এর আগে আজ সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। যাঁরা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি যে একাত্তর ও চব্বিশ আলাদা কিছু নয়, বরং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই একাত্তরের স্পিরিট পুনর্জীবিত হয়েছে। একাত্তরে আমরা যেটি চেয়েছিলাম, সেটি ৫৪ বছরে অর্জিত হতে পারেনি। একটি ফ্যাসিবাদ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চেপে বসেছিল। তাই আরেকটি গণ–অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়েছিল। একাত্তরের যে সাম্যের কথা বলা হয়েছিল, চব্বিশেও কিন্তু সেই বৈষম্যহীন সমাজের কথাই আমরা বলছি। ফলে যারা একে পরস্পরবিরোধী বা মুখোমুখিভাবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ এবং আমরা মনে করি, তারা চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানকে, ছাত্রজনতার বিজয়কে প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি।’

সংস্কার ও বিচারবিহীন জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হলে সেটি মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কেবল কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য (যদি) নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয় সংস্কার ও বিচার ছাড়া, তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে না।’

৫ আগস্টের আগে ও পরে দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্যের কিছুটা ফাটল ধরেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় ঐক্যের যে সুযোগ এবং ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, আমরা এখনো সেই ভিত্তিতেই আছি। কিন্তু এখন হয়তো বিভিন্ন দলের এজেন্ডা আলাদা হচ্ছে। তবে আমরা যদি চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাই, দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের একই পাটাতনে থেকে পরস্পর ভিন্ন মত ও ভিন্ন লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের সামনের দিনে একসঙ্গে এগোতে হবে। যদি কেউ আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জনগণের যে সংস্কার ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, তা থেকে সরে যায়, তাহলে অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে আর ঐক্যের সুযোগ থাকবে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার, বললেন রিজভী
  • ইউক্রেনে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব পুতিনের
  • নির্বাচন সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে: রিজভী
  • বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার মালদ্বীপের
  • রাজনীতির ‘নতুন বন্দোবস্ত’ দেখতে কেমন?
  • সিদ্ধিরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মদলের দোয়া ও ইফতার মাহফিল
  • সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই যখন প্রয়োজন
  • চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে পেতে চাই: প্রেস সচিব
  • মহান স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়: নাহিদ ইসলাম