২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরের কিছু অংশে আগামী কয়েক বছর সেনা মোতায়েন থাকবে—ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের এমন ঘোষণার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সময় রোববার থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর ঢুকতে শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, রোববার একযোগে জেনিন শহরে বেশ কিছু ট্যাংক ঢুকতে দেখেন তাঁরা। পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র মনে করা হয় জেনিনকে।

গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে বড় পরিসরে সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রাণঘাতী এ অভিযানে পশ্চিম তীরের নগরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা। কয়েক সপ্তাহের এ অভিযানের মুখে অনেক ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এসব ফিলিস্তিনিকে তাঁদের বাড়িঘরে ফিরতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ রোববার পশ্চিম তীরের বেশ কিছু অংশে তৎপরতা বাড়াতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে’ এসব এলাকায় আগামী কয়েক বছর অবস্থান করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের একটি অন্তর্বর্তী শান্তি সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী পশ্চিম তীরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। অন্য অংশের ‘সীমিত’ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ শতকের শুরুর দিকের পর এটাই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দীর্ঘ ও বড় পরিসরের সেনা অভিযান।

জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ

ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পর এসব ভূখণ্ড অধিগ্রহণের যে দাবি উঠেছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।

পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি ও ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়ছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

‘বন্দী মুক্তি ছাড়া আলাপ নয়’

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কয়েক শ ফিলিস্তিনি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করেছে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার সশস্ত্র এই প্রতিরোধ সংগঠন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর মুক্তি ছাড়া কোনো আলোচনা করবে না তারা।

হামাস নেতা বাসেম নাঈম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে শত্রুদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনার শর্ত হচ্ছে আগে ৬২০ বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।’

গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করা হয়। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রায় দুই যুগ পর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংক

২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরের কিছু অংশে আগামী কয়েক বছর সেনা মোতায়েন থাকবে—ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের এমন ঘোষণার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সময় রোববার থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর ঢুকতে শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, রোববার একযোগে জেনিন শহরে বেশ কিছু ট্যাংক ঢুকতে দেখেন তাঁরা। পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র মনে করা হয় জেনিনকে।

গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে বড় পরিসরে সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রাণঘাতী এ অভিযানে পশ্চিম তীরের নগরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা। কয়েক সপ্তাহের এ অভিযানের মুখে অনেক ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এসব ফিলিস্তিনিকে তাঁদের বাড়িঘরে ফিরতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ রোববার পশ্চিম তীরের বেশ কিছু অংশে তৎপরতা বাড়াতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে’ এসব এলাকায় আগামী কয়েক বছর অবস্থান করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের একটি অন্তর্বর্তী শান্তি সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী পশ্চিম তীরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। অন্য অংশের ‘সীমিত’ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ শতকের শুরুর দিকের পর এটাই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দীর্ঘ ও বড় পরিসরের সেনা অভিযান।

জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ

ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পর এসব ভূখণ্ড অধিগ্রহণের যে দাবি উঠেছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।

পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি ও ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়ছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

‘বন্দী মুক্তি ছাড়া আলাপ নয়’

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কয়েক শ ফিলিস্তিনি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করেছে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার সশস্ত্র এই প্রতিরোধ সংগঠন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর মুক্তি ছাড়া কোনো আলোচনা করবে না তারা।

হামাস নেতা বাসেম নাঈম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে শত্রুদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনার শর্ত হচ্ছে আগে ৬২০ বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।’

গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করা হয়। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ