প্রায় দুই যুগ পর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংক
Published: 24th, February 2025 GMT
২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরের কিছু অংশে আগামী কয়েক বছর সেনা মোতায়েন থাকবে—ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের এমন ঘোষণার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সময় রোববার থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর ঢুকতে শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, রোববার একযোগে জেনিন শহরে বেশ কিছু ট্যাংক ঢুকতে দেখেন তাঁরা। পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র মনে করা হয় জেনিনকে।
গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে বড় পরিসরে সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রাণঘাতী এ অভিযানে পশ্চিম তীরের নগরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা। কয়েক সপ্তাহের এ অভিযানের মুখে অনেক ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এসব ফিলিস্তিনিকে তাঁদের বাড়িঘরে ফিরতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ রোববার পশ্চিম তীরের বেশ কিছু অংশে তৎপরতা বাড়াতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে’ এসব এলাকায় আগামী কয়েক বছর অবস্থান করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের একটি অন্তর্বর্তী শান্তি সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী পশ্চিম তীরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। অন্য অংশের ‘সীমিত’ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ শতকের শুরুর দিকের পর এটাই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দীর্ঘ ও বড় পরিসরের সেনা অভিযান।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পর এসব ভূখণ্ড অধিগ্রহণের যে দাবি উঠেছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি ও ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়ছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
‘বন্দী মুক্তি ছাড়া আলাপ নয়’
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কয়েক শ ফিলিস্তিনি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করেছে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার সশস্ত্র এই প্রতিরোধ সংগঠন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর মুক্তি ছাড়া কোনো আলোচনা করবে না তারা।
হামাস নেতা বাসেম নাঈম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে শত্রুদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনার শর্ত হচ্ছে আগে ৬২০ বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।’
গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করা হয়। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্প প্রশাসনের
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির কাছে নতি স্বীকার না করার পর, এবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছে মার্কিন সরকার। খবর বিবিসির।
হোয়াইট হাউজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিয়োগ, ভর্তি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, নতুন সংস্কার ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আরো পড়ুন:
মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব, মনে করছে বিএনপি
৫০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ শোধ করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বুধবার (১৬ এপ্রিল) মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং ‘ইহুদি-বিদ্বেষের কাছে নতজানু’ হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
তিনি হার্ভার্ডকে দেওয়া এক চিঠিতে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবৈধ ও সহিংস কার্যকলাপ সম্পর্কিত রেকর্ড দাবি করেছেন।
ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, “যদি হার্ভার্ড তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাবে।”
চলতি বছর হার্ভার্ডে ভর্তির ২৭ শতাংশেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী।
গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
গত সোমবার হার্ভার্ড কমিউনিটিতে দেয়া একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এর স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকারকে পরিত্যাগ করবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যারা নীতি পরিবর্তনে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপকে প্রত্যাখান করেছে।
হার্ভার্ড তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া, নিয়োগ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সরকারি তদারকি মানতে অস্বীকার করায় ট্রাম্প এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ।
মার্কিন সরকার ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে। এছাড়াও ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির করমুক্ত মর্যাদাও বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে হার্ভার্ড।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, “হার্ভার্ডকে আর শিক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না এবং বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনো তালিকায় এটিকে বিবেচনা করা উচিত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রসিকতা। এখানে ঘৃণা ও বোকামি শেখানো হয়। হার্ভার্ডের আর ফেডারেল তহবিল পাওয়া উচিত নয়।”
হার্ভার্ডের ওপর প্রশাসনের আক্রমণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, ট্রাম্প বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলোকে রক্ষণশীলদের প্রতি শত্রু হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, তার প্রশাসন বিশেষ করে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নজর দিয়েছে যেখানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন যে, তারা অনিরাপদ বোধ করেছেন এবং ক্যাম্পাসে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে গঠিত সরকারের ইহুদি-বিরোধী টাস্ক ফোর্স পর্যালোচনার জন্য কমপক্ষে ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় চিহ্নিত করেছে।
গত মাসে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়। ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দিলে ট্রাম্পের দাবির কাছে নতজানু হয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ দাবির প্রতি প্রকাশ্যে সাড়া দেয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ