দেশে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ–সংকট আছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জ্বালানি কেনার খরচ অনেক বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকি কমানোর উপায় হলো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা ব্যবহার কমানো। বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ব্যবহার কমানোয় জোর দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ কথাগুলো বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা। ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রথম দিনে ‘রিবিল্ডিং সাসটেইনেবল ফিউচারস: কানেকটিভিটি অ্যান্ড এনার্জি’ শীর্ষক তৃতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা।

ফাওজুল কবির খান বলেন, শীতের সময় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। গরমের সময় এটি ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ২৫ ডিগ্রির ওপরে রাখলে দুই হাজার মেগাওয়াট চাহিদা কমতে পারে। ইতিমধ্যে সবাইকে এটি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও ঘরে গিয়ে এটি তদারকি করা হবে না। তবে ফিডার (একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কেন্দ্রস্থল) থেকে চাহিদা ও সরবরাহ নজরদারি করা হবে।

দেশের কয়লা উত্তোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার ইতিমধ্যে ১৭০টির বেশি আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন আন্দোলনের সূত্রপাত করতে চাই না। এটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য রেখে দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ–সক্ষমতা অনেক, অথচ জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। মহাপরিকল্পনা করেই এসব করা হয়েছে। এতে জ্বালানি গুরুত্ব পায়নি। টাস্কফোর্সের সুপারিশেও জ্বালানি নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, এটা বিপজ্জনক।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম। সঞ্চালনাও করেন তিনি। শেষে তিনি বলেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা যাবে। এটি মাথায় রেখেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাতে হবে। বাস্তব পরিকল্পনা করতে হবে।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, একসময় গ্যাস ছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল না। পরে গত ১৫ বছরে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে, যা দরকার ছিল না। এখন সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি কেনার সামর্থ্য নেই।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের কান্ট্রি অপারেশনস হেড না উন কিম বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে অতটা জোর দেওয়া হয় না। জ্বালানির সঠিক ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধাপে ধাপে উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বাংলাদেশ দপ্তরের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, বাংলাদেশে ৪০টি মন্ত্রণালয় ও ৬০টি বিভাগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালিত হয়। এটা অনেক বেশি। জাপানে মাত্র ৩০টি মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুটি বিভাগ, তাদের মধ্যে সমন্বয়ে সমস্যা আছে।

বিদ্যুৎ খাতে আমদানিনির্ভরতাকে মূল সমস্যা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের চলমান সংকট থেকে উত্তরণ সহজে সম্ভব নয়। আরও কয়েক বছর এমনই থাকবে। কয়লা, এলএনজি–নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসাটা কঠিন।

এতে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুরুন নাহার চৌধুরী। পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্মেলনে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমির সদস্য মো.

শামসুল হক। তিনি বলেন, পরিবহন হচ্ছে একটি দেশের মেরুদণ্ড। এটি ছাড়া অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়। অধিকাংশ দেশে নদী, সড়ক, রেল—এই তিন মিলে একটি মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থাকে, একসঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়। আর দেশে হয় আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে। এতে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়, খাদ্যসংকটের দেশে জমির অপচয় হয়। অথচ একসঙ্গে পরিকল্পনা করা হলে জমির বহুমুখী ব্যবহার করা যায়।

বিল্ডিং সাসটেইনেবল ফিউচার কানেকটিভিটি অ্যান্ড এনার্জি শিরোনামে একটি লিখিত নিবন্ধ সরবরাহ করা হয় সম্মেলনে। টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমির সদস্য সেলিম রায়হানের এটি উপস্থাপন করার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। এতে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র উপদ ষ ট সরবর হ র কম ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল: সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা

মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ২০২১ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি তাঁদের এই বিচ্ছেদকে ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন।

সাবেক ধনকুবের ব্যবসায়ী স্বামী বিল গেটসের একটি মন্তব্যের কয়েক সপ্তাহ পর মেলিন্ডা ফেঞ্চ এই প্রথম মুখ খুললেন। ওই মন্তব্যে বিল গেটস তাঁদের এই বিচ্ছেদকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অনুতাপের বিষয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।

দ্য টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা গেটস এ কথা করেন। ওই সাক্ষাৎকার গত রোববার প্রকাশিত হয়। সেখানে বিল গেটসের মন্তব্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এমন কিছু, যা ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল।

মেলিন্ডা ফেঞ্চ বলেন, ‘আপনি যদি আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে নিজের মূল্যবোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে না পারেন, তাহলে সেটা ছেড়ে যাওয়াই প্রয়োজনীয় ছিল।’

অবশ্য মেলিন্ডা মানবহিতৈষী তাঁর সাবেক স্বামী বিল গেটসের মন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। তবে তিনি যোগ করেন, ‘আমি আসলে জানি না, তিনি ওই বক্তব্য দিয়ে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন। সুতরাং তাঁর বক্তব্য নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করছি না।’

মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘তাঁর নিজের জীবন আছে, আমার নিজের জীবন আছে। আমি এখন অনেক সুখী।’

মেলিন্ডা গেটস আরও বলেন, এই বিচ্ছেদ তাঁর ওপর আবেগপূর্ণ গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁদের আলাদা থাকা অবস্থায় তিনি ‘প্যানিক অ্যাটাক’–এর শিকারও হয়েছেন।

বিল গেটসের সাবেক স্ত্রী বলেন, একটা বিবাহবিচ্ছেদ খুবই কঠিন। আর আলোচনা-সমঝোতাও খুব কঠিন।’

মেলিন্ডা বলেন, ২০১৪ সালে বিল গেটসের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজের সময় তিনি প্রথম ‘প্যানিক অ্যাটাক’ অনুভব করেন। তার পর থেকেই তিনি থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া শুরু করেন। তখনো তাঁরা স্বামী–স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে ছিলেন।

শুরুর দিকে মেলিন্ডা থেরাপি নিয়ে সন্দিহান থাকলেও পরে এর উপকারিতা বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে আমি ভেঙে পড়েছি। এর অর্থ, আমি কঠিন বিষয়ের মধ্য দিয়ে গেছি, যেগুলো নিয়ে আমাকে বোঝাপড়া করতে হয়েছে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে এনবিসির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে নিজের নতুন বই ‘সোর্স কোর্ড’ নিয়ে কথা বলতে গেলে বিল গেটসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তিনি এই বিবাহবিচ্ছেদকে নিজের ‘সবচেয়ে বড় অনুশোচনা’ বলে মনে করছেন।

জবাবে বিল বলেছিলেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদটা ভালো কিছু ছিল না। কিন্তু আমাদের তিনটি সন্তান, আমরা একসঙ্গে যেসব কাজ করতে পেরেছি—এমনকি আমি যদি জানতাম যে এই সংসার চিরস্থায়ী হবে না, তবু আমি আবারও সেটাই করব।’

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ২০২১ সালে ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টানেন। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে—ফিবি গেটস (২২), ররি গেটস (২৫) ও জেনিফার গেটস নাসার (২৮)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে পাঁচ গান
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষ পাঁচ গান
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে ৫ গান, প্রীতমের সঙ্গে আছেন সিয়াম-হিমিও
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষ পাঁচ গান, প্রীতমের সঙ্গে আছেন সিয়াম-হিমিও
  • পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভাজন হতে দেব না, বললেন মমতা
  • মস্তিষ্ক ভালো রাখতে বাদামের সঙ্গে খাবেন কোন খাবার 
  • গরমে স্বস্তির পানীয়
  • লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমিরের সাক্ষাৎ
  • আংটি পরে জর্জিনা লিখলেন ‘আমিন’, তবে কি বিয়ে করছেন রোনালদো
  • বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল: সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা