দেশকে আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না: মির্জা ফখরুল
Published: 24th, February 2025 GMT
ছবি: প্রথম আলো
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘পরিবেশবান্ধব’ দাবি করে পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে মারমেইড বিচ রিসোর্টের অবস্থান। এটিকে ‘ইকো রিসোর্ট’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ দাবি করা হলেও পরিবেশ ধ্বংস করে নির্মাণ হচ্ছে নানা স্থাপনা। কক্সবাজারের আলোচিত এ রিসোর্ট সম্প্রসারণে কাটা হয়েছে ঝাউগাছ, দখল করা হয়েছে খাল ও সরকারি জমি। বন বিভাগ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তিন শতাধিক ঝাউগাছ কেটে ফেলেছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
জানা গেছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ বদরমোকাম পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী, ইসিএ এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় কোনো অনুমতি না নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। সেখানে রয়েছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় সড়কের পশ্চিম পাশে নামতেই মারমেইড বিচ রিসোর্ট। উত্তর-পশ্চিম পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় নদী ও সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক স্থাপনা। কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সে জন্য ঢালাইয়ের ওপর এক ফুট বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্তোরাঁ। পশ্চিমে ঝাউবন সমৃদ্ধ সৈকতটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ জায়গায় যাতায়াতের জন্য পাহাড় থেকে নেমে আসা রেজু খালের ওপর রয়েছে কাঠের সেতু। অবৈধভাবে ঝাউগাছ কেটে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের তথ্যমতে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্যাঁচারদ্বীপ এলাকাটি লাল কাঁকড়ার বিচরণ ক্ষেত্র এবং কচ্ছপের ডিম পাড়ার আবাসস্থল। কিন্তু পর্যটকের যাতায়াত ও মারমেইড কর্তৃপক্ষের রাতে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উচ্চ আওয়াজ ও লাইটিংয়ের কারণে কচ্ছপ এখন আর সেখানে যায় না। হারিয়ে গেছে লাল কাঁকড়াও।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি এ জায়গায় সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ডিজে পার্টি। যে কারণে ওই এলাকায় আর লাল কাঁকড়া দেখা যায় না। এ ছাড়া সংকট তৈরি হয়েছে গভীর সাগর থেকে ডিম পাড়তে আসা কচ্ছপের জায়গার।
সরকারি জমি দখল করে নির্মিত মারমেইড বিচ রিসোর্টের স্থাপনাগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে নিতে ৯ ফেব্রুয়ারি নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু ১০ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা করেনি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া প্যারাবন কেটে অবৈধভাবে কটেজ নির্মাণের অভিযোগে মারমেইডের মালিক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ ও তাঁর ভাই জহিরুল হক চৌধুরী শাহীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি রামু থানায় মামলাটি করেন অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন পরিদর্শক জাহানারা ইয়াসমিন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে মামলার প্রতিবেদন দেয় অধিদপ্তর। তদন্তে প্যারাবন কেটে স্থাপনা নির্মাণের সত্যতা পাওয়া যায়।
এদিকে ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রামু উপজেলার ধেচুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) মারমেইড বিচ রিসোর্টের বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সলিম উল্লাহর সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, মারমেইড কর্তৃপক্ষ সরকারি এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমিতে বর্তমানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। নির্মাণকালে বাধা দিলে সাময়িকভাবে বন্ধ করে; কিন্তু পরে আবার কাজ শুরু করে। এর আগে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) একটি লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গিয়াস উদ্দিনের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় মারমেইড কর্তৃপক্ষের দখলে সাত একর সরকারি জমি রয়েছে। বিধি অনুযায়ী উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন আকারে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানাতে বলা হয় চিঠিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, চিঠিতে সাত একরের কথা বলা হলেও, মারমেইড কর্তৃপক্ষের দখলে অন্তত ১০ একর সরকারি জমি রয়েছে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক সমকালকে বলেন, মারমেইড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ যা করছে, তার সবই পরিবেশবিধ্বংসী। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার রানা কর্মকার বলেন, এখানে পরিবেশবিধ্বংসী কোনো কাজ হয় না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, তিন শতাধিক ঝাউগাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি পাঠানো নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে রিসোর্ট মালিকের পক্ষ থেকে লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইয়ামিন হোসেন জানান, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে সেখানে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে।