কথা বলার শক্তি নেই বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নোমানুর রশিদের। জানাজা শেষে পাশাপাশি তিনটি কবরে শুইয়ে দিয়ে এসেছেন মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে। চলাফেরার শক্তিও যেন নেই। কয়েকজনের কাঁধে ভর দিয়ে কোনোমতে কবরস্থান থেকে ঘরে এলেন। এরপর ঘরের উঠানের এক পাশে গিয়ে বসলেন। কোনো কথা নেই মুখে। কেবল চোখ মুছছিলেন বারবার।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ফাজিলখার হাট মসজিদের উত্তর পাশে পাশাপাশি তিনটি কবর। আজ সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে সেখানে নোমানের মা ফাতেমা বেগম (৬৫), স্ত্রী আইরিন সুলতানা (৩০) ও শিশুপুত্র আরহাম বিন নোমানকে (৭ মাস) দাফন করা হয়। দুপুরের দিকে নোমানদের বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল, বাড়ির উঠান ভর্তি শোকার্ত মানুষের ভিড়। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেল, তা এখনো যেন বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনেরা। একসঙ্গে তিনটি মৃত্যুর শোকে কাতর নোমানকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবেন, তা–ও ভেবে পাচ্ছিলেন না।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নোমানের মা ফাতেমা বেগম মারা যান। এ খবর শুনে নোমান নিজের কর্মস্থল লক্ষ্মীপুর থেকে আর তাঁর স্ত্রী আইরিন শিশুপুত্র আরহামকে নিয়ে কক্সবাজারের রামুর বাবার বাড়ি থেকে কর্ণফুলী উপজেলার উদ্দেশে রওনা দেন। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে রাত তিনটার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকায় আইরিনদের বহনকারী বাসের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে সন্তানসহ নিহত হন তিনি। ওই সময় আইরিনের ছোট ভাই মো.

আদিলসহ (১৯) আরও চারজন আহত হন।

নোমানুর রশিদের স্বজনেরা জানালেন, ২০২৩ সালে তাঁর সঙ্গে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার আইরিন সুলতানার বিয়ে হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁদের একটি ছেলেসন্তান হয়। ছেলেসন্তানকে নিয়ে আইরিন বাবার বাড়ি থাকছিলেন। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও নেন তিনি। অপর দিকে স্বামী মো. নোমানুর রশিদ লক্ষ্মীপুরে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় চাকরি করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান আইরিন সুলতানার বাবা। এর ৯ দিন পরই এমন দুর্ঘটনা ঘটল।

নোমানের স্ত্রী আইরিন সুলতানা ও শিশুপুত্র আরহাম এখন কেবলই

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

চিৎকার শুনে ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেতে পড়ে আছে বোনের রক্তাক্ত মরদেহ

নোয়াখালী সদর উপজেলায় বসতঘরে ঢুকে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত নারীর নাম তাসলিমা বেগম (৫৪)। আজ সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে নয়টার দিকে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে সুধারাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে কে বা কারা ওই নারীকে হত্যা করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। পরিবারের দাবি, হয়তো ডাকাতি করতে এসে ডাকাতেরা তাঁকে হত্যা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত নারীর ছোট ভাই আহসান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির একটি ঘরে তাঁর বোন তাসলিমা বেগম একাই থাকতেন। আজ রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নয়টার দিকে তিনি এশার নামাজের জন্য অজু করে ঘরে ফেরেন। এরই মধ্যে ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পান আশপাশের ঘরের বাসিন্দারা। তাৎক্ষণিক তাঁরা ছুটে এসে দেখেন ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর বোন পড়ে আছেন। একই সময় ঘরে একটি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র (ধামা) পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আহসান উল্লাহ জানান, প্রতিবেশীরা মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর বোনকে উদ্ধার করে জেলা শহর মাইজদীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, তাঁদের কোনো শত্রু নেই। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। হয়তো কেউ ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে তাঁর বোনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করছেন তিনি।

ঘটনাস্থলে থাকা সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ‌ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কে বা কারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বাড়ির কেউ দেখেনি। তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছেন। ‌এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ