সারাদেশে অব্যাহত হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ও বামপন্থি সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন বিচার ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ধর্ষকদের শাস্তি, দিতে হবে দিতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে ঢাবি শিক্ষার্থী পলি বলেন, “যে সরকার জুলাই বিপ্লবে নারীদের বিপ্লবী ঘোষণা দিয়েছে, সেই সরকার কি বুঝতে পারছে না আমরা বাইরে নিরাপদ নই। গতদিন স্ত্রীকে ধর্ষণের জন্য ধর্ষককে হত্যা করায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু সেই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”

শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, “আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি, যেখানে ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী করা হয়। ধর্ষণের পর অপদস্থ হতে হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের বানে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। সারা দেশে ধর্ষণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এ সঙ্কট আরো বাড়বে।”

অন্যদিকে, সন্ধ্যা ৭ টায় অব্যাহত হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে যৌথ মশাল মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে পুনরায় টিএসসিতে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে তারা ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, করতে হবে করতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, “সরকারকে যখন ধর্ষণের কথা বলা হয়, তখন তারা ইংল্যান্ডের উদাহরণ দেন। তারা বলেন, ইংল্যান্ডে সারাদিনে যত ধর্ষণ হয়, বাংলাদেশে তার চেয়ে কম। এই একই কথা বিগত স্বৈরাচারী সরকার বলত। গতকাল রাত ৩টার সময় সংবাদ সম্মেলন করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্লজ্জভাবে সমস্ত দায় আওয়ামী লীগকে দিয়েছেন। এভাবে দায় এড়ানো যায় না।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আজ সবচেয়ে বেশি জুলুমের ঘটনা ঘটছে নারীদের উপর। এটা কোন তুচ্ছ ঘটনা নয়।”

তিনি বলেন, “আপনারা যদি জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে অনতিবিলম্বে চেয়ার ছেড়ে দিন। যতগুলো মব ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার আমরা দেখতে চাই‌। এই ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ করতে হবে‌।”
 

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা: ৩ আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে

ঢাকার বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা মামলায় তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.ছানাউল্যাহ রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন-আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তারা সবাই বনানী বিদ্যানিকেতনের সাবেক শিক্ষার্থী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে ভোরে মহাখালীর ওয়ারলেস গেটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে রবিবার নিহতের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বনানী থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়।

২৪ বছর বয়সী জাহিদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়।

জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ নিহত হন। তবে টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে পারভেজকে।

পারভেজের ছুরিকাঘাত হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির টেক্সটাইল বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের পাশে একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন পারভেজ। তাদের পাশে সদ্য ভর্তি হওয়া ইংরেজি ও ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বন্ধু ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী ছিলেন। এক পর্যায়ে দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন পারভেজ তাদের উত্যক্ত করেছেন। তারা বিষয়টি প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রক্ট্ররকে জানান।

এরপর প্রক্টর পারভেজকে ডেকে নেন। প্রক্টর অফিসে পারভেজ দাবি করেন, তিনি বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের আলাপের বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন, কাউকে উত্যক্ত করেননি। এক পর্যায়ে ওই দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হলে পারভেজ ক্ষমাও চান।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, সেখানেই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পারভেজকে হুমকি দেন। প্রক্টরের অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পর কিছু বহিরাগত এসে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে ধারালো কিছু দিয়ে পারভেজের বুকে আঘাত করে তারা পালিয়ে যান।

পরে রক্তাক্ত পারভেজকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, সেখানে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ