সাংবাদিকের ওপর হামলা: প্রধান আসামির জামিন নামঞ্জুর
Published: 24th, February 2025 GMT
শরীয়তপুরে দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনের ওপর ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা এবং আরও তিন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় প্রধান আসামি নুরুজ্জামানের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তন্ময় গাইন জামিন আবেদন খারিজ করে নুরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শিমুল সরকার জানান, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক প্রধান আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি ছয়জনকে চার্জশিট জমা না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ জানুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলেন। এ ঘটনাটি দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে ‘দৈনিক গহিনের সংবাদ’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে চিকিৎসকের পক্ষে একটি প্রতিবেদন করেন নুরুজ্জামান শেখ। এ নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে দৈনিক সমকালের জেলা কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিক সুজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় নুরুজ্জামান শেখ, তাঁর ভাই শামীম শেখ, পালং মেডিকেল সেন্টারের মালিক ইব্রাহিম মোল্লা, তাঁর ছেলে জিহাদ মোল্লাসহ ১০-১২ জন অংশ নেন। হামলাকারীরা সুজনকে ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে তাঁর বাম কানে হাতুড়ি এবং পিঠের ডান পাশে ছুরির আঘাত লাগে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস এবং দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশও হামলার শিকার হন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আহত চার সাংবাদিককে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। যেখানে গুরুতর আহত সুজনকে ভর্তি করা হয় এবং অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনায় সুজন বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
সোমবার আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত প্রধান আসামি নুরুজ্জামান শেখের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি পাঁচ আসামিকে চার্জশিট জমা না হওয়া পর্যন্ত ৫০০ টাকা মুচলেকায় জামিন দেওয়া হয়।
মামলার পরও আসামিরা জনসমক্ষে ঘুরে বেড়িয়েছে, অথচ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, ‘আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ন্যায়বিচার আশা করছি। নুরুজ্জামানের কঠোর শাস্তি চাই এবং অন্য আসামিদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। যদি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে সাংবাদিক সমাজ সত্য প্রকাশের সাহস হারাবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, “বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে।”
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওঠা প্রশ্নের ব্যাখ্যায় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন।
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দী ধরে অসংখ্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাত মিলিয়েছে। একই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে বোমাবর্ষণ করেছিল, কিন্তু পরে তারা মিত্রে পরিণত হয়।”
আরো পড়ুন:
অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি
পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি পাকিস্তানপন্থী হয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের মোটেও অবাক করেনি। এমন কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে খুব কমই বিশ্বাস করবে।”
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেন, “আমাদের জবাব স্পষ্ট ছিল। অতীতে দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যা–ই ঘটুক না কেন, এখন থেকে এটি বাংলাদেশপন্থী নীতি হবে, যা আমাদের নিজস্ব স্বার্থে পরিচালিত হবে।”
এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে অন্য প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া একটি স্বাধীন জাতির পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, “সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচকে দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার কথাগুলোকে কাজে রূপ দিতে ২৪ ঘণ্টার কম সময় নিয়েছে। একই সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মতি জানিয়েছে।”
আজাদ মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী একটি আবেগঘন বিষয় হলো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি। এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ক্ষমা চাওয়া-সদিচ্ছা ও উদারতার একটি কাজ হবে। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সামরিক আমলাতন্ত্র সর্বদা এই ধরনের কথার বিরোধিতা করেছে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি।”
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ সম্পদের বিভাজনের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে, যা অতীতের শাসকদের কাছে ভুলে যাওয়া একটি বিষয় ছিল। অতীতে শাসকেরা এটি আলোচনার চেয়ে বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করতেন।
তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন (৪৩২ কোটি) মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ মূলধন সৃষ্টি, বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ ধরে রাখার অনুমিত হিসাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়।”
আজাদ মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশের আরো প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে, যা ১৯৭০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ/সংস্থা অনুদান দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এই অর্থ ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের অফিসে পড়ে ছিল।”
আজাদ মজুমদার তার পোস্টে উল্লেখ করেন, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন আরেকটি বিষয় ছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছিল। অতীতে পাকিস্তান তাদের লোকদের মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার জন ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ৭৯টি শিবিরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার জন ছিল।
তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ ও ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম বিকল্প হলো আলোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এটাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আলোচনায় এনেছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছে।”
উপ-প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ডিসেম্বরে মিশরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠক করার সময় তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের সুবিধার্থে অতীতের ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য সম্ভবত এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এক সঙ্গে কাজ করা ও এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।”
ঢাকা/হাসান/সাইফ