দ্রব্যমূল্যে সিন্ডিকেটের কথা সম্ভবত জন্মের পর থেকেই  শুনে এসেছি। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই সিন্ডিকেটের দোষ দেওয়া হয়। আবার সব সরকারই বলে, আমরা সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করব। কিন্তু বাস্তবে পারে না। সিন্ডিকেটের টিকিটি ধরা কি এত সহজ? দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া সবজির কারণে কিছুটা স্বস্তি আসছে বটে। কিন্তু রমজান উপলক্ষে দাম বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোপূর্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। বাজারদর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের দিকে নিয়ে আসার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। পণ্য পরিবহন সিন্ডিকেট ও যাদের হাত ঘুরে বাজারে পণ্যসামগ্রী আসছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না হলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা পারে না এমন কিছু নেই। প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ।


মিল মালিকরা বলে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে। বাস্তবে কিছু মিল মালিক চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের  নামে বাজারে চাল সরবরাহ করা হয়। সরকারি চাপ বেশি থাকলে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে, অন্যথায় ইচ্ছেমতো চালের দাম বেড়েই যায়। প্রথমে ধান সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন মজুত করে রাখা হয়, তারপর সংকট তৈরি হলে বাজারে ধান থেকে চাল করে অদের ইচ্ছেমতো মূল্য বেঁধে ছাড়া হয়। এই সব প্রতিষ্ঠান আকারে বড় ও ক্ষমতাবান। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে সহজে। এদের ঠেকানোর একটি কৌশল আছে সরকার যদি বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারে তাহলে এদের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব। বাজার মনিটরিং কিংবা অভিযান পরিচালনা করে এইসব সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। 
বিগত সরকারের আমলে সিন্ডিকেট তেলের বাজার থেকে কোটি  কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সিন্ডিকেটে কারা থাকে তা সবার জানা। আসলে সিন্ডিকেট বলতে কী বুঝায়? খুঁজে পাওয়া গেল– ‘একটি সিন্ডিকেট হলো ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন বা সংস্থাগুলির একটি সুসংগঠিত গোষ্ঠী যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসা লেনদেন করার জন্য, একটি ভাগ করা স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচার করার জন্য গঠিত হয়।’ 


ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা/ প্রতিনিধি, মৎস্য কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি।
সর্বস্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সততা দিয়ে কাজ শুরু করলে সফলতা আসবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু কাজ হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের ওপর বাজার সিন্ডিকেটের নানা ফন্দি-ফিকির বন্ধ হলে দেশে অস্থির ও নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হবে না।  
মানুষ যদি সাধ্যের মধ্যে তার  দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে তাহলে স্বস্তি ফিরে আসবে। রমজান ঘিরে বাজার যাতে ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অতীতে ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও রমজানে পণ্যের দাম বেড়ে যেত। তখনও দোষ দেওয়া হতো সিন্ডিকেটকে। এখন যদি সিন্ডিকেট বন্ধ না হয়, তবে কখন হবে? আর রমজান উপলক্ষে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেগুলোর জোগানও বাড়াতে হবে।

সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক
saifuzzaman.

[email protected]


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর রমজ ন রমজ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: পুষ্পস্তবক অর্পণসহ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজন

যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হবে। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কালো পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্মারক, গ্রাফিতি ও পোস্টার প্রদর্শনীরও আয়োজন থাকছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে এক সভায় বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ২০মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ।

এরপর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বেলা সোয়া ১১টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়াসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।

আরও পড়ুনশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ৮ মিনিট আগে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দিবসটি উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান সকাল সাড়ে আটটায় পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন।

শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে।

ঢাকা শহরে বসবাসকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদানের সুবিধার্থে ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ ছাড়া কোনো আলোচনা সভা, শোকসভা বা অন্য কোনো কর্মসূচি নেই। বিগত বছরগুলোতেও এ ধরনের কোনো আয়োজন ছিল না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আজ রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদদের স্মরণে ‘শোক র‌্যালি’ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেলা ১১টায় উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে  ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পতাকা উত্তোলন, সকাল আটটায় সিনেট ভবন চত্বর থেকে পদযাত্রা, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করবে সব বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, সহায়ক কর্মচারী সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন, পরিবহন টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি, স্কুল ও অন্যান্য সংগঠন। সকাল সোয়া ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণা, সম্মাননা স্মারক প্রদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত রয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে রয়েছে নাটক আলোর পাহারাদার। আর জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্মারক, গ্রাফিতি ও পোস্টার প্রদর্শনী ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: পুষ্পস্তবক অর্পণসহ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজন
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
  • জবিতে ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, উপস্থিতি ৮১ শতাংশ
  • ‘আজ যে শিশু’ থেকে ‘ঘুম ভাঙা শহরে’: শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর সাত দশকের গল্প
  • আজ শেষ হচ্ছে কম্পিউটার সিটির মেলা
  • ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো
  • ‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণ
  • মওলানা ভাসানী মজলুমদের পক্ষে ছিলেন, কখনো আপোষ করেননি: টুকু 
  • বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি
  • আজ মওলানা ভাসানীর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী