রমজানে মাসে ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে হবে
Published: 24th, February 2025 GMT
দ্রব্যমূল্যে সিন্ডিকেটের কথা সম্ভবত জন্মের পর থেকেই শুনে এসেছি। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই সিন্ডিকেটের দোষ দেওয়া হয়। আবার সব সরকারই বলে, আমরা সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করব। কিন্তু বাস্তবে পারে না। সিন্ডিকেটের টিকিটি ধরা কি এত সহজ? দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া সবজির কারণে কিছুটা স্বস্তি আসছে বটে। কিন্তু রমজান উপলক্ষে দাম বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোপূর্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। বাজারদর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের দিকে নিয়ে আসার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। পণ্য পরিবহন সিন্ডিকেট ও যাদের হাত ঘুরে বাজারে পণ্যসামগ্রী আসছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না হলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা পারে না এমন কিছু নেই। প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ।
মিল মালিকরা বলে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে। বাস্তবে কিছু মিল মালিক চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বাজারে চাল সরবরাহ করা হয়। সরকারি চাপ বেশি থাকলে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে, অন্যথায় ইচ্ছেমতো চালের দাম বেড়েই যায়। প্রথমে ধান সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন মজুত করে রাখা হয়, তারপর সংকট তৈরি হলে বাজারে ধান থেকে চাল করে অদের ইচ্ছেমতো মূল্য বেঁধে ছাড়া হয়। এই সব প্রতিষ্ঠান আকারে বড় ও ক্ষমতাবান। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে সহজে। এদের ঠেকানোর একটি কৌশল আছে সরকার যদি বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারে তাহলে এদের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব। বাজার মনিটরিং কিংবা অভিযান পরিচালনা করে এইসব সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
বিগত সরকারের আমলে সিন্ডিকেট তেলের বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সিন্ডিকেটে কারা থাকে তা সবার জানা। আসলে সিন্ডিকেট বলতে কী বুঝায়? খুঁজে পাওয়া গেল– ‘একটি সিন্ডিকেট হলো ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন বা সংস্থাগুলির একটি সুসংগঠিত গোষ্ঠী যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসা লেনদেন করার জন্য, একটি ভাগ করা স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচার করার জন্য গঠিত হয়।’
ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা/ প্রতিনিধি, মৎস্য কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি।
সর্বস্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সততা দিয়ে কাজ শুরু করলে সফলতা আসবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু কাজ হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের ওপর বাজার সিন্ডিকেটের নানা ফন্দি-ফিকির বন্ধ হলে দেশে অস্থির ও নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হবে না।
মানুষ যদি সাধ্যের মধ্যে তার দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে তাহলে স্বস্তি ফিরে আসবে। রমজান ঘিরে বাজার যাতে ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অতীতে ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও রমজানে পণ্যের দাম বেড়ে যেত। তখনও দোষ দেওয়া হতো সিন্ডিকেটকে। এখন যদি সিন্ডিকেট বন্ধ না হয়, তবে কখন হবে? আর রমজান উপলক্ষে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেগুলোর জোগানও বাড়াতে হবে।
সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক
saifuzzaman.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর রমজ ন রমজ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় ঈদের নামাজের আগে স্বাধীন ফিলিস্তিনির দাবিতে মিছিল
সারা ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে সামিল হন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার রেড রোডে। নামাজে ইমামতি করে কাজি ফজলুর রহমান। লাখো মুসল্লি এতে অংশ নেন। এছাড়াও নাখোদা মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদ, পার্ক সার্কাস, ময়দান, খিদিরপুরসহ রাজ্যের অসংখ্য মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষেই একে অপরকে আলিঙ্গন, কুশল বিনিময় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
তবে ঈদের নামাজ শুরুর আগেই স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দাবি করে কলকাতায় সংহতি মিছিলে অংশ নেন মুসল্লিরা। হাতে ব্যানার এবং স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল মিছিলটি। বিশাল মিছিল নিয়ে কলকাতার রেড রোডে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা। বড়দের পাশাপাশি অনেক বাচ্চারাও সেই মিছিলে শামিল হয়।
ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারী শেখ আমির নামে এক মুসুল্লি জানান, ‘আজকে আমাদের খুশির দিন, আনন্দের দিন। কিন্তু ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনেদের সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারাও যেন শান্তিতে থাকতে পারেন। আমরা যেভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করছি, ঠিক সেভাবে তারাও যেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে পারেন। আমি যেমন আমার বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এসে নামাজ আদায় করছি, ঠিক তারাও যেমন এ রকম করতে পারেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে অত্যাচার এবং জুলুম হচ্ছে। নিরপরাধ বাচ্চাদের হত্যা করা হচ্ছে সেটা কি অপরাধ নয়? ইসরায়েলের উচিত ওই বাচ্চাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা। ইসরায়েলের আক্রমণে যেসব বাচ্চারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি।’
পরে রেড রোডের ঈদের নামাজে অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খান, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা প্রমুখ।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ঈদ পালিত হচ্ছে দিল্লি, লখনৌ, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, জম্মু-কাশ্মীর, ভোপাল, পাটনাসহ দেশের প্রতিটি শহরে। দিল্লির জামা মসজিদে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজে অংশ নেন।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে দুইটি গোষ্ঠীর সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল নাগপুর, মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে। নাশকতা এড়াতে দিল্লিসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহরেই ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি।
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেও দেখা যায়।