নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা। তাঁরা সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করুন। এ ছাড়া গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনার দাবি জানান তাঁরা।

গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি সব স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউস দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে কেবল সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি ও বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন বিটিএমএর নেতারা।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন বিটিএমএর (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) নেতারা। দেশীয় বস্ত্র খাতের সংকটাবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি মো.

আবুল কালাম, সালেউদ জামান খান, পরিচালক রাজীব হায়দার প্রমুখ।

বিটিএমএর সভাপতি বলেন, দেশের বস্ত্রখাত সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার–সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি থেকে উত্তরণের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা অস্বাভাবিক হ্রাস ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধনের সংকট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে জ্বালানিসংকটের জন্য বস্ত্রকলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস যাবৎ তীব্র গ্যাস–সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। এতে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এ খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারও বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশীয় বস্ত্রকলগুলো ১৭ কোটি মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করে। এতে ১২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়।

ভারত থেকে সে দেশের স্থানীয় বাজারের চেয়েও কম দামে সুতা ও কাপড় বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে বস্ত্র খাত সংকটের মুখে রয়েছে বলে জানান বিটিএমএর সভাপতি। তিনি বলেন, স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুতার কাউন্ট পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় আমদানি-রপ্তানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল সুতা আসছে; সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ফলে দেশীয় সুতার কলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধের পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশীয় বস্ত্র খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

বর্তমানে দেশের বস্ত্রকলগুলোয় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার সুতা মজুত আছে উল্লেখ করে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ ও ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক আরোপের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা আমদানি রোধে আমাদের স্থলবন্দরের সক্ষমতা না বাড়ানো পর্যন্ত সেখান দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হোক।’ ভারতীয় বস্ত্রকলগুলোর ডাম্পিং তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, মাটির নিচে গ্যাসের মজুত থাকা অবস্থায় এলএনজি আমদানি কার স্বার্থে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা করা হলে কারখানা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ল সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করা হলো

ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হলো। বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়। ওই সব স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে সুতা আমদানি হতো।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।

জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্রশিল্পকারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)।

জানা গেছে, চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে কমেছে পাসপোর্টযাত্রী পারাপার
  • ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধে বাংলাদেশের লাভ কী
  • স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ
  • হিলি বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি 
  • ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করা হলো