বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে, সে আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে। কারণ, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন গণ-আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

সোমবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নাগাইশ ফয়েজিয়া রাজ্জাকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও মিলাদ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। 

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে হাসনাত বলেন, আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন কারণ বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যারা সংসদ সদস্য হয় তাদের একটি প্রবণতা থাকে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের একটি প্রভাব বিস্তার করার। স্বজনরাও উপজেলা ও ইউপিতে নির্বাচন করে। 

তিনি বলেন, আমাদের অতীতে যেই অভিজ্ঞতা রয়েছে, স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় তেমন ভালো স্মৃতি নেই। সংসদ সদস্যদের অপ্রত্যাশিত একটি বলয় থাকে, সেই প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান সরকার জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা সেটি দেখার জন্য আমরা মনে করি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া উচিত। 

হাসনাত বলেন, আমাদের জাতীয় সংহতি ও ঐক্য যতদিন রয়েছে, পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুনর্বাসন আর এই বাংলাদেশে হবে না । হাসিনা যে স্বপ্ন দেখছেন এই স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়িত হবে না। 

এর আগে শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে হাসনাত বলেন, আমরা চাই না মেধাবীরা ঝরে যাক। মেধাবীরা ঝরে যেতে থাকলে অযোগ্য শাসকরা সমাজ শাসন করতে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, অযোগ্য ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মসজিদ কমিটির সভাপতি বানানো হয়, যেখানে-সেখানে চেয়ার দিতে হয়। 

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের পড়াশোনা করতে হবে। জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। আপনার মধ্যে যদি তথ্যের ভান্ডার থাকে, তাহলে যে কোনো জায়গায় আপনি মোকাবিলা করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। যতই কষ্ট হোক আপনারা পড়াশোনা করবেন। 

ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মোস্তাক ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রফিকুল ইসলাম ফয়েজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শশীদল আলহাজ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাশিদুল হাসানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদত য গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির
  • যে প্রলোভনে মিয়ানমারে দুই বছর জেল খাটলেন ২০ কিশোর–তরুণ
  • সিরাজগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পুরোহিত গ্রেপ্তার