সরকারের ওপর জঙ্গি-ভূত ভর করেছে: সোহেল
Published: 24th, February 2025 GMT
‘জঙ্গি-ভূত’ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ভর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেনে, ‘‘আপনাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, জঙ্গি-ভূত আপনাদের ওপর ভর করেছে। রগকাটারা আপনাদের ওপর ভর করেছে। সুতরাং ভোট নিয়ে টালবাহানা এই দেশের জনগণ সহ্য করবে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবেন না। কোটি কোটি তরুণ ভোটার এখনো ভোট দিতে পারে নাই। অতি দ্রুত নির্বাচন দিন, নচেৎ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’’
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিরোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার ও দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির উদ্যোগে রাঙামাটিতে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
আরো পড়ুন:
তর্ক-বিতর্কে যেন স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে না যায়: তারেক রহমান
নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘‘অনেক ছাত্র ভাই মনে করেন, সব তারাই করেছেন। আসলে বয়স কমতো তাই বোঝে না। ১৫ দিনে তারা সব করে ফেলেছে মনে করে। তারা তো এসেই গরম ভাত পেয়েছে কিন্তু ভাত তৈরি করতে যে কত কষ্ট; চারা রোপণ থেকে শুরু, আরো কত কী করতে হয়, তাতো তারা বোঝে না। বিগত ১৬ বছর তিল তিল কষ্ট করে যে আন্দোলন বিএনপি তৈরি করেছিল, সেই আন্দোলনের ওপর ভর করেই ছাত্ররা আন্দোলন করেছে।’’
দীর্ঘ ১৯ বছর পর রাঙামাটিতে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শহীদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়ামে বিএনপির জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সর্বশেষ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহাবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতি বিষয়ক সহ-সম্পাদক লে.
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ক ন দ র য় ব এনপ র ব এনপ র স র কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
দর্জিদের পতাকার নমুনা দিলাম
মার্চ মাসটা ছিল অগ্নিঝরা। আন্দোলন, মিছিল, জনসভা, হরতাল, কোনো সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের, কোনো সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মসূচিতে গোটা দেশবাসীর সঙ্গে খুলনা ছিল প্রথম কাতারে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছে এবং সংগ্রাম পরিষদ শুধু আন্দোলনই করছে না, প্রশাসনও এই সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশমতো কাজ করছে। অত্যন্ত আন্তরিকভাবেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর সংগ্রাম পরিষদের কথামতোই পরিচালিত হয়। সে সময়ে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মিলে একটা জেলা ছিল।
আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ পেয়ে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ দিবস ও পতাকা দিবস’ পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলাম এবং জনগণকে ওই দিন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনের আবেদন জানালাম। খুলনা শহরের দর্জিদের পতাকার নমুনা দিলাম। তারা পতাকা তৈরি করে দোকানের সামনে রাখলে সাধারণ মানুষ এই পতাকা ক্রয়ের জন্য ব্যস্ত হলো, এমনকি পতাকার মূল্য ১০ টাকা দাবি করলেও ক্রেতা ১২ টাকা দিয়ে খুশি হয়ে পতাকা কিনতে লাগল। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জনসাধারণ যাতে সময়মতো পতাকা পায়, তার জন্য পতাকা তৈরি ও বিক্রয় করে লভ্যাংশ সংগ্রাম পরিষদের তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য মরহুম শেখ আব্দুল কাইউমের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হলো। দিন নেই, রাত নেই সবাই ব্যস্ত। ২১ ও ২২ মার্চ আমরা অত্যন্ত ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করলাম। চাঁদা আদায়, পতাকা বিক্রয়, ফুল সংগ্রহ, গণসংযোগ ইত্যাদির ভেতর দিয়ে পুরো দিনটাই কেটে গেল। ২২ মার্চ রাতে কেউ আর তেমন ঘুমাল না, সারারাত ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করল। খুলনা থেকে জাহাঙ্গীর সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘দেশের ডাক’ পত্রিকা পূর্ণ পৃষ্ঠা স্বাধীন বাংলার রঙিন পতাকাসহ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করল। এই সংখ্যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল এবং সব কপি দুপুরের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেল।
২৩ মার্চ আমরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রভাতফেরি সমাপ্ত করে দ্রুত নাশতা-পানি খেয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় পার্কে এসে উপস্থিত হলাম। ছাত্র-শ্রমিক-জনতায় পার্ক যেন উপচে পড়ছে। পার্কের উভয় দিকের রাস্তায় এবং সোসাইটি সিনেমা হলের ধারে কয়েকটা মিলিটারি অবস্থান নিয়েছে।
আমরা ঠিক সকাল সাড়ে ৯টায় বাদ্যের তালে তালে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’– এই গান গেয়ে আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা তুললাম। জয় বাংলা বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের অভিবাদন জানিয়ে পতাকাকে স্যালুট করল, উপস্থিত জনতা করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে আমাদের এই পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান উপভোগ করল এবং কর্মসূচি শেষ হলো। স্বাধীনতার পতাকা তোলার ভেতর দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম তথা স্বাধীন বাংলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলো।
উল্লেখ করা আবশ্যক যে, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা তখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, কিন্তু স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার জন্য ছিল অনড়-অবিচল। বিকেলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পার্কে বিরাট জনসভা হলো। উল্লেখ্য, এই সভায় আমি সভাপতিত্ব করলাম, যেহেতু টসে জিতে ১২ মার্চের সভায় হুমায়ুন কবীর বালু সভাপতিত্ব করেছিলেন। সন্ধ্যায় আমরা পতাকা নামালাম, সন্ধ্যার পরও জনসভা চলল। আমরা বজ্র শপথ নিলাম– ‘দেশ স্বাধীন করবই।’
তারপর ২৫ মার্চের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ২৬ মার্চ সকালে খবর পেয়ে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তখন খুলনা খানজাহান আলী রোডে আলিয়া মাদ্রাসার সম্মুখে অবস্থিত ‘কবীর মঞ্জিল’-এ বৈঠকের পরিকল্পনা করলেন মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু। ওই দিন আমরা প্রাথমিক আলোচনা করে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন এবং যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিই।
২৭ মার্চ সকালে অতি সতর্কতার সঙ্গে একে একে টুকু ভাই, কাইউম, আমিসহ অন্যরা মিলিত হলাম এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হলো যুদ্ধ অনিবার্য। যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন অস্ত্র, রসদ, পরিকল্পনা, অর্থ ইত্যাদি। কিন্তু কে কীভাবে এ যুদ্ধ পরিচালনা করবে? তাই এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটা বিপ্লবী পরিষদ করা হোক। তখন সর্বসম্মতিক্রমে শেখ কামরুজ্জামান টুকুকে চেয়ারম্যান, ডা. আসিফুর রহমান, কে এস জামান, জাহিদুর রহমান জাহিদ, শেখ আব্দুল কাইউম ও আমাকে সদস্য করে এই বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হলো। আরও সিদ্ধান্ত হলো যে, এই পরিষদ যুদ্ধ চলাকালে সর্বোচ্চ পরিষদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পরিষদের সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত।
২৭ মার্চ সন্ধ্যায় হঠাৎ শেখ কামরুজ্জামান টুকু সিদ্ধান্ত নেন যে, খুলনা সার্কিট হাউসে ও তৎসন্নিকটস্থ ইউএফডি ক্লাবে পাকিস্তানি সেনাদের তাঁবুতে তিনি আক্রমণ পরিচালনা করবেন। আমরা তেমন কেউ ওই সময় তাঁর কাছে না থাকায় শেখ আব্দুল কাইউম, ডালিম, জ্যোতিষ, বিনয়, তপনসহ তিনি এই দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তপন, জ্যোতিষ ও বিনয় আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের তেমন সক্রিয় কর্মী না হলেও দেশপ্রেমের কারণে তারা আত্মদানের প্রস্তুতি নিয়ে টুকু ভাইয়ের সঙ্গে যোগ দেয় এবং তারা শক্তিশালী বোমা, মলোটভ ককটেল প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। সামান্য একটা ২২ বোর রাইফেল, গোটা দুয়েক দেশি বন্দুক আর ওদের তৈরি বোমা ও ককটেল নিয়ে ইউএফডি ক্লাবের সেনাছাউনিতে অভিযান চালানো হয়। অতর্কিতে ওই আক্রমণের জন্য খানসেনারা প্রস্তুত ছিল না। ফলে বহু খানসেনা এ হামলায় আহত হয়। হামলা শেষে সবাই নিরাপদে ফিরে আসি। খুলনায় পাকিস্তানি মিলিটারিদের ওপর এটাই ছিল প্রথম গেরিলা আক্রমণ।
অনুলিখন
হাসান হিমালয়
খুলনা ব্যুরো