রাশিয়াকে উল্লেখ করার মতো সহায়তা করছেন বা আর্থিক সহায়তা করেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে দেশটি। আজ সোমবার নতুন এসব নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর তিন বছর পূর্তিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ সরকার বলছে, রুশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিরাও নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেওয়া রুশ ‘অভিজাত’ ব্যক্তিদের’ বিরুদ্ধে আগে থেকেই যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আছে। এর সম্পূরক হিসেবে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ঘোষণা করা হবে।

ব্রিটিশ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ড্যান জার্ভিস বলেছেন, মস্কোতে পুতিনের বন্ধুদের জন্য একটি সহজ বার্তা দিচ্ছেন তিনি। আর তা হলো ‘আপনাদের যুক্তরাজ্যে স্বাগত জানানো হবে না।’

এক বিবৃতিতে জার্ভিস বলেন, যেসব অভিজাত ব্যক্তি রুশ জনগণকে অগ্রাহ্য করে অবৈধ ও অন্যায্য এই যুদ্ধে অর্থায়নের মধ্য দিয়ে নিজেরা আরও ধনী হয়েছেন, তাঁদের জন্য যুক্তরাজ্যের দুয়ার বন্ধ করতে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনরাশিয়ার ওপর যত নিষেধাজ্ঞা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আগামী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যাবেন। ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে এ সফর করবেন তিনি। তাঁর আগে আজ সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ হোয়াইট হাউসে যাবেন মাখোঁ।

পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তাড়াহুড়া না করতে ইউরোপীয় এই দুই নেতা যেকোনো মূল্যে ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির এ প্রক্রিয়ায় ইউরোপকে সঙ্গে রাখার জন্য তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে সামরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা করতে পারেন তাঁরা।

আরও পড়ুনরাশিয়া, ইরান যেভাবে নিষেধাজ্ঞাকে হাস্যকর বানিয়ে ছাড়ছে২০ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২২ বছর পর তালেবানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার রাশিয়ার

রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের শাসকদল তালেবানের ওপর থেকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তকমা প্রত্যাহার করেছে। ফলে এখন থেকে রাশিয়ায় তালেবান বৈধভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে।

চার বছর আগে দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণকারী তালেবানকে ২০০৩ সাল থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রাশিয়া। তাই এত দিন পর্যন্ত গোষ্ঠীটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা রাশিয়ার আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর বাহিনী প্রায় দুই দশক অবস্থানের পর ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে তালেবান। এরপর থেকে তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত মধ্য এশিয়ার দেশটিকে স্থিতিশীল করতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলারও আহ্বান জানাতে থাকেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা।

 ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত চার বছরে তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা একাধিকবার রাশিয়া সফর করেছেন। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আফগানিস্তানের ‘বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা প্রয়োজনীয়’। কারণ আফগানিস্তানে বর্তমানে তাঁরাই ক্ষমতায়।

২০২৪ সালের মে মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিচার মন্ত্রণালয় তালেবানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। চলতি মাসের শুরুতে প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব জমা দেয়। গতকাল প্রস্তাবটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান সুপ্রিম কোর্ট। 

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রায় এক দশক আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সেনা মোতায়েন ছিল। তখন তাঁরা দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অর্থাৎ তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতময় অতীত রয়েছে। তবে মস্কোর সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার তালেবানকে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য করতে সহায়তা করবে।

গত কয়েক বছরে এশিয়ার অন্যান্য দেশও তালেবানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে কাজাখস্তান তালেবানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার করে। পরের বছর একই পথে হাঁটে কিরগিজস্তান। 

তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। নারীদের প্রতি তালেবানের মনোভাব আন্তর্জাতিক মহলে চরমভাবে সমালোচিত হয়ে আসছে।

স্বীকৃতি না দিলেও কাবুলে বর্তমানে চীন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ইরানের দূতাবাস রয়েছে। তালেবানের অধীনে ২০২৩ সালে আফগানিস্তানে প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে চীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ