দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করেন তারা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনের জোহা চত্বরে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন তারা।

বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের ‘ধর্ষকদের আস্তানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের দিবো না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘আমরা আছি থাকব, যুগে যুগে লড়ব’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি মারুফ বলেন, “আপনারা যদি কাজ করতে না পারেন, তাহলে আমরা এ ধরনের এনজিও মার্কা সরকার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকার চাই না। দেশের জন্য একটা ইনক্লিউসিভ সরকার গঠন করুন। যদি আপনারা তা করতে ব্যর্থ হন, তবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। প্রয়োজনে ছাত্র সমাজ দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমরা যেমন ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাড়াতে পেরেছি, আপনাদের সরাতেও বেশি সময় লাগবে না।”

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রসনজিৎ সরকার বলেন, “দেশে এক ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কোন কাজই আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তিনি কাঠের পুতুলের মতো গদিতে বসে আছেন। আমাদের সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। কিন্তু তিনি গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিশুসুলভ কথাবার্তা বলেছেন। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই।”

ফার্সি ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজেদ শিশির বলেন, “ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অন্তর্বতী সরকার গঠিত হয়েছিল দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ সব মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করার জন্য। কিন্তু আমরা তার বিপরীত দিকটা দেখতে পাচ্ছি। ছিনতাই, ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কোন পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলে দিতে চাই, এ গদি তার বাবার না। তিনি যদি তার দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে ছাত্র-জনতার উপর ছেড়ে দেন।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “যেই নারীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছাত্রদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই নারীদের ধর্ষকরা ধর্ষণ করে পালিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা চোখ বুজে বসে আছি। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলী চেয়ারে বসে আমাদের সুশীলগিরী দেখায়। সুশীলগিরীর দিন শেষ, বিচার‌ চায় বাংলাদেশ।”

পরে শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাযা আদায় করে প্রতিবাদী কর্মসূচি শেষ করেন।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঘোষপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর লংকারচর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।  

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মেসিতে আসেন জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারাল অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে আমার ফার্মেসিতে এসে হামলা চালায়। 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯টি সিডিউল বিক্রি হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সহায়তায় মাত্র একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পান বোয়ালমারী যুবলীগের সদস্য মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। এই বালুমহাল ইজারার ১৯ জন সিডিউল ক্রেতার সঙ্গে কৃষকদল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের নেতৃত্বে ইজারা দরপত্র (নিকো) বোর্ড করে একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে রবিউলকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৮ জন ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা করে নিকোর টাকা নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এ বিষয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহালের ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর। ৩৬ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নেন রবিউল। 

স্থানীয় এক সিডিউল ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও ডিসির কাছে দেওয়া অভিযোগকারী) জানান, ১৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫ দরপত্র দাতাদের মাঝে এবং কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্র দাতাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভাগাভাগির টাকা বণ্টনের দায়িত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদের ওপর। তবে জুয়েল বিশ্বাস নামে একজন দরপত্র ক্রেতা অভিযোগ করেন তার পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে সালিশ বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। 

বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে মা ফার্মেসিতে আক্রমণ চালায়। এতে রবিন মোল্যা ও রিয়াজ মৃধা আহত হন। 

জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সেই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে এবং আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিন আঘাত পান। 

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে তিনি পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসেন। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা তার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ