ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের জায়গা উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি ছেলেদের নামাজের জায়গার কার্পেট পরিবর্তন ও অজুখানা সংস্কার হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাবি উপাচার্যের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের ইমামতিতে জোহরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নামাজের জায়গা উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ডিন সিদ্দিকুর রহমান খান, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক (দক্ষিণ) অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক (উত্তর) অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার প্রমুখ।

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ঢাবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “আগে টিএসসিতে মেয়েদের জন্য নামাজের জায়গা ছিল না। এটা আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল। একবার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের বাঁধার কারণে টেকেনি। এবার আপুদের জন্য নামাজের জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছেলেদের নামাজের জায়গায় ব্যবহৃত বহুদিনের পুরনো কার্পেটও পরিবর্তন করা হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, “২০২২ সালের ১২ এপ্রিল রমজান মাসে টিএসসিতে প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে নামাজের জায়গার ব্যবস্থা করি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাও রাখতে পারিনি, ছাত্রলীগ সেটা ভেঙে দেয়। এরপর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নতুন বাংলাদেশে আমরা আবার টিএসসিতে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি।”

তিনি বলেন, “যারা এ কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদের প্রত্যেককে আল্লাহ উত্তম জাযা দান করুক। আমাদের কষ্টকে কবুল করে নিক। আজ আমরা মেয়েরা এবং ম্যামরা একসঙ্গে যোহর নামাজ পড়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।” 

তিনি আরো বলেন, “পর্যায়ক্রমে কার্জন, চারুকলা, সেন্ট্রাল ফিল্ডে আমরা মেয়েদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করব, ইনশাআল্লাহ। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বাস্তবায়নের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে, আল্লাহ আপনাদের সামগ্রিক কল্যাণ দিক।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “আজ এ অনুষ্ঠান আমাদের জন্য মহৎ ও অনন্য একটি মুহূর্ত। আমরা আজ এ নতুন নামাজের জায়গার উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের সবার জন্য একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং আত্মিক উন্নতির ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “বিগত প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এ নায্য দাবির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে পারব এবং নিজেদের আত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারব।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য ন ম জ র ট এসস ত আল ল হ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ