বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমান বলেছেন, “সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে এমন কোনো পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি (স্বৈরাচার) আবারো সুযোগ পায়।”

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল থেকেই নানা আনুষ্ঠানিকতায় কর্মসুচি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে এজন্য বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনের উদ্বোধন 

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ আমাদেরকে আবারো সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি।”

রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রুপরেখা ৩১ দফাতে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পসহ সব সেক্টরে বিএনপি কাজ করবে। যুক্তরাজ্যে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে তাদের ৭৭ বছর লেগেছে।আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলব।”

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “স্বৈরাচার আমাদেরকে খাদের কিনারে পৌঁছে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষ প্রায় সবাই নির্যাতিত ছিল। মিথ্যা মামলা, গুম, খুন দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে দরকার স্থিতিশীলতা।”

নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দলে যতে বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করা হবে ততে ভালো মানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একইভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হলে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।”

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনাতে। অনেক বছর পরে আবারও খুলনায় কাউন্সিলে থাকতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারেক রহমান।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কে এম হুমায়ুন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল, কাজী মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন। 

সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সৈয়দা নার্গিস আলী। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা ফারুক হোসাইন। গীতা পাঠ করেন সত্যানন্দ দত্ত।

দ্বিতীয় অধিবেশনে খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৬টি পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ৫টি থানা কমিটির ৫০৫ জন ভোটার নির্বাচনের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এবং দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সাহাজী কামাল টিপু প্রার্থী হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন।

প্রার্থীরা হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর।

এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন প্রার্থী হলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সাদী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এর মধ্যে তারেক ছাড়া বাকিরা বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।

তবে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তার অনুসারীদের কেউ প্রার্থী হননি। কাউন্সিল ঘিরে তাদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এবং পরে ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড, তিনটি ইউনিয়ন ও পাঁচটি থানায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনের পর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের।

এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর।

খুলনা/নুরুজ্জামান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন গণতন ত র ল ইসল ম র রহম ন র সদস য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার মতো এখনও নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা শুরু হয়েছে: আব্দুস সালাম

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো দেশে এখনও নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা শুরু হয়েছে। নির্বাচন পেছানো মানে ফ্যসিস্টকে আবার ফিরে আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নির্বাচন না দিলে গণতন্ত্র ফিরবে না।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড়ে স্থানীয় একটি মোটেলে রাজশাহী বিভাগের সব জেলা-মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধারে বিএনপি ১৬ বছর রাজপথে ছিল। নির্বাচন নিয়ে কোনো তালবাহানা করলে বিএনপি তা মানবে না। তাই, নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলসহ দেশের জনগণ চায় অতিদ্রুত নির্বাচন। কিন্তু কেউ কেউ আবার চান নির্বাচন যেন দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কালক্ষেপণ করলে দেশে আবারও ফ্যাসিস্টরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। 

তিনি বলেন, এই দেশ জনগণের। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিএনপি বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করছে। তার মানে এই না জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভোট না দিয়ে ক্ষমতার গদি আঁকড়ে ধরবেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি সেখানে বসে বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। ফ্যাসিস্টদের কোনো ষড়যন্ত্র এই দেশে বাস্তবায়ন হতে দিবে না বিএনপি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্যই বিএনপি জন্মলাভ করেছে। যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে। যেখানে শেখ মুজিব ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সফল হয়েছেন। যেখানে শেখ হাসিনা ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে লড়াই করে সফল হয়েছেন। জনগণই তাকে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন বার বার।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, পতিত শেখ হাসিনাকে বলা হয়েছিল, বিনা ভোটে না গিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটুন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার দম্ভে নির্বাচনের পথে যাননি। আজকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজয় হলে পেছনের দরজা দিয়ে তাকে ভারতে পালাতে হতো না। ভারতে আশ্রয় নিতে হতো না। তাই ক্ষমতা দেখানোর কিছু নেই। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতা পেয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যা খুশি তা শুরু করেছিল। তাই ক্ষমতার দম্ভ কমাতে হবে। জনগণ কী চায় সেটা জানতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী দিনে ক্ষমতায় যেতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ বিএনপিকে খারাপভাবে, দোষারোপ করেন।

বিএনপি রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেকের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, কৃষক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি জাহির রায়হান আহমেদ, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাসার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার মতো এখনও নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা শুরু হয়েছে: আব্দুস সালাম
  • নির্বাচনের বিকল্প সংস্কার কেন, প্রশ্ন রিজভীর
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না
  • সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলল বিএনপি
  • নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দল
  • বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের জবাবে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
  • আজ ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই কর্মকর্তা 
  • নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা চায় বিএনপি
  • হাসিনার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন কতটা কঠিন