জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর কে এ ফ্রিডরিখ মেৎর্স
Published: 24th, February 2025 GMT
জার্মানির রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দলের প্রধান ফ্রিডরিখ মেৎর্স। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সিডিইউ-সিএসইউ জয়ী হয়েছে। তিনিই যে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হচ্ছেন, তা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
কে এ মেৎর্সরক্ষণশীল মেৎর্স একজন ব্যবসায়ী। তিনি কখনোই মন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেননি। বেশ কয়েক বছর আগে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তাঁকে সরকার থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) এই নেতা তখন বেসরকারি খাতে নিজের ভাগ্য গড়তে শুরু করেন। পরে ৬৩ বছর বয়সে তিনি আবারও রাজনীতিতে ফেরেন। ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জার্মান নাগরিকেরা তাঁর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বসহকারে দেখেছিলেন।
যেভাবে উত্থানবর্তমানে ৬৯ বছর বয়সী মেৎর্সের জন্ম জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় জাওয়ালান্দ অঞ্চলে। এখনো সেখানেই থাকেন তিনি। পাহাড়, খাবারদাবার এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য এলাকাটির খ্যাতি আছে। ১৯৮৯ সালে জাওয়ালান্দ থেকেই প্রথম তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৯৪ সালে জার্মান পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন তিনি।
একই দলের নেতা হওয়ার পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে পুরোনো ধারার কট্টর রাজনীতিবিদ মেৎর্সের মতবিরোধ ছিল। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটের সংসদীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেৎর্স। তবে ম্যার্কেল তাঁকে উৎখাত করেছিলেন। এরপর মেৎর্স রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান এবং আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
আইনজীবী ও লবিস্ট হিসেবে কাজ করে মেৎর্স ধনী হয়ে ওঠেন। ম্যার্কেল যখন অবসর নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন মেৎর্স। ২০১৮ সালে রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরে মেৎর্স প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি অভিবাসন এবং অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাঁর দলকে আরও ডানপন্থী করে তোলার মধ্য দিয়ে কট্টর-ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দলের উত্থান ঠেকাবেন।
দুইবার ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর পর ২০২১ সালে আবারও পার্লামেন্টে ফেরেন মেৎর্স। ২০২২ সালে তিনি দলের নেতৃত্ব পান। তবে দলের নেতা হিসেবে তিনি বেশ কিছু ভুল করেছেন। যেমন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দাবি করেছিলেন, করদাতাদের দেওয়া করের অর্থে শরণার্থীরা তাঁদের দাঁত ঠিকঠাক করাচ্ছেন; অথচ নিয়মিত জার্মান রোগীরা দন্তচিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। যদিও জার্মান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ মেৎর্সের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
মেৎর্স আরও দাবি করেন, তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধারণ একজন মানুষ। তাঁর এ কথা নিয়ে জার্মান নাগরিকদের কেউ কেউ হাসিঠাট্টা করে থাকেন। এসব জার্মান নাগরিকের দৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের অনেককে যে ধরনের অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে সম্পর্কে মেৎর্সের ধারণাই নেই।
এরপরও মেৎর্স নিজ দলের সদস্যদের কাছে টানতে পেরেছেন। ম্যার্কেলের দীর্ঘ শাসন মেয়াদে অনেক বেশি বামপন্থী হয়ে ওঠা দলটিকে মেৎর্স পুরোনো চিন্তাধারার রক্ষণশীল দলে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জার্মান অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মেৎর্সের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবেচ্যান্সেলর হিসেবে, রক্ষণশীল হিসেবে এবং ট্রান্স আটলান্টিসিস্ট (উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাওয়া) হিসেবে বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের চেয়ে মেৎর্সের সঙ্গেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশি মিল আছে বলে মনে করা হয়। আশা করা হচ্ছে, মেৎর্স এমন একটি পররাষ্ট্রনীতির নেতৃত্ব দেবেন যা ট্রাম্পের ধারণার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ট্রাম্পের ধারণাটি হচ্ছে, ইউরোপ নিজস্ব প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিজেরাই নেবে।
তবে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি যেসব মন্তব্য করেছেন, তার ঘোরতর বিরোধী মেৎর্স। পাশাপাশি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের অবস্থানেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। ভ্যান্সের বক্তব্যকে জার্মানির নির্বাচনে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাহসী মনোভাব মেৎর্সের একটি বৈশিষ্ট্য। এর মধ্য দিয়ে তাঁর এ দৃঢ় বিশ্বাসটাই প্রতিফলিত হচ্ছে যে জার্মানিকে ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক বিষয়গুলোর সঙ্গে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। অন্যদিকে শলৎজ অস্থিরতা এবং সতর্কতার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি তাঁর নিজস্ব জোটের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনা ছিল।
ফ্রিডরিখ মেৎর্স.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জিনদের আহার্য
মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)
আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)
আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।
গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩