সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর থেকে শাবিপ্রবির ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে ভর্তি–ইচ্ছুরা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত তারিখে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চার দিন আগে থেকে প্রবেশপত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের জন্য ওয়েসাইটের ‘লগইন’র ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন কিংবা তা সংগ্রহ করতে পারছেন না। এ রকম প্রায় আড়াই হাজার আবেদনকারীর সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এ কারণে যাঁরা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন না, তাঁদের ভর্তি কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

এদিকে, শাবিপ্রবির ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেখানে পাসওয়ার্ড পুনরায় ফেরত পেতে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ (উচ্চমাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধনকৃত ফোন নম্বরসহ) দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনচায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ, প্রয়োজন নেই আইইএলটিএস৯ ঘণ্টা আগে

ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মো.

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এবার স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে শাবিপ্রবি। এবার মোট আবেদন পড়েছে ৮৬ হাজার ৪১৬টি। দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় এ-১ ইউনিটে (বিজ্ঞান) শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ২৭০ জন, ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ে ৩৪ হাজার ৩৬৯, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ১২, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ৩ হাজার ৭৮০ ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ৫ হাজার ৬২৭ জনসহ ওই ইউনিটে সর্বমোট ২৯ হাজার ১১৬ জন আবেদনকারী অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া এ-২ (স্থাপত্য) ইউনিটের ভর্তি ১ হাজার ২৪২ জন শাবিপ্রবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন।

অন্যদিকে, বি ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ) শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৯৮৩ জন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৬৩৬, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫৬, যবিপ্রবিতে ৩ হাজার ১৪ ও সিভাসুতে ১ হাজর ৪২৭ জনসহ মোট ৫৬ হাজার ৫৮ জন আবদেনকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা। একই দিন বেলা ৩টায় এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, এমসিকিউ ১০০, মেধাতালিকা ২০০ নম্বরে২০ জানুয়ারি ২০২৫আসন কত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাসহ মোট আসন ১ হাজার ৬৭১টি। ২৮টি বিভাগে মূল আসন ১ হাজার ৫৬৬। এ বছর এ ইউনিটে (বিজ্ঞান শাখা) মোট আসন ৯৮৫টি এবং বি ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা) মোট ৫৮১টি আসন রয়েছে। এসব আসন ছাড়াও অতিরিক্ত ১০৫টি কোটা আসন রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ২৮, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী/জাতিসত্তা/হরিজন-দলিত কোটা ২৮, প্রতিবন্ধী কোটা ১৪, পোষ্য কোটা ২০, চা–শ্রমিক কোটা ৫, বিকেএসপি (খেলোয়াড়) কোটা ১০।

আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষা–২০২৫ নতুন রুটিন প্রকাশ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখতে চান ব্লগার ওয়াশিকুরের বাবা

টিপু সুলতানের বয়স প্রায় ৮০ বছর। জীবনে একের পর এক আঘাত পেয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুর দিকে মারা যান বড় ছেলে। এরপর ১৯৯৫ সালের দুই সন্তানসহ তাকে রেখে চলে যান স্ত্রী। সন্তানদের ওপর সৎ মায়ের আঁচড় যেন না পড়ে, সেজন্য আর নতুন সংসার গড়েননি টিপু সুলতান। কোলে-পিঠে করে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন। ১০ বছর আগে ছেলে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ঘটনায় ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। পরের বছরের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক এস এম জিয়াউর রহমান। সাড়ে চার বছর বিচারকাজ চলার পর রায় ঘোষণার জন্য ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু, তখন চার্জ গঠনে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে পুনরায় চার্জ গঠন করা হয়। এরইমধ্যে মামলাটি ওই আদালত থেকে ১২তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। এরপর আর তেমন অগ্রগতি নেই এ মামলার বিচারকাজে। 

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ মামলায় চার আসামি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি মামলাটির ধার্য তারিখ ছিল। ওইদিন শুনানির তারিখ পিছিয়ে ৮ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা টিপু সুলতান বলেন, “ছোটবেলায় ছেলে-মেয়েকে ফেলে তার মা চলে যায়। কোলে-পিঠে করে ওদের বড় করেছি। ওয়াশিকুরকে ঢাকায় কলেজে ভর্তি করি, যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। সেই ছেলেটাকে খুন করল। ১০ বছর হয়ে গেছে। বিচার পেলাম না। বয়সও হয়েছে। মৃত্যুর আগে যেন ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি। বিচার হলে কিছুটা শান্তি পাব।”

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এসব মামলার বিচারে যত্ন নেয়নি৷ তারা মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব মামলার বিচার নিশ্চিতে কাজ করছে৷ ইতোমধ্যে মামলার তালিকা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে৷

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মরিয়াম লাকি বলেন, “আমাদের স্যার যথেষ্ট আন্তরিক মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। তিনি কোনো মামলা ঝুলিয়ে রাখার পক্ষে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও এলাকাবাসী। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করার কথা বলেছে আটককৃত দুই জন। ওয়াশিকুর রহমানের লেখালিখির অন্যতম বিষয় ছিল—ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনা। তার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতো।

ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান, সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর, মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে জুনায়েদ আহম্মেদ মামলার শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামিরা জামিনে আছেন।

আসামি জিকরুল্লাহ ও আরিফের আইনজীবী আব্দুর রশীদ মোল্লা বলেছেন, “তারা ঘটনাস্থলে ছিল না। এ হত্যাকাণ্ডের আগেই দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এ মামলায় প্রতিটি পদে পদে ভুল হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, বিচার প্রক্রিয়া শেষে তারা খালাস পাবেন।”

ওয়াশিকুর রহমান বাবু রাজধানীর মতিঝিলে ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাবার সঙ্গে বেগুনবাড়ীর ৪/৩-এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপেজলার উত্তর হাজীপুরে।

মামলার বাদী ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ ফ্রান্স প্রবাসী বলে জানিয়েছেন টিপু সুলতান। তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেননি।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ