মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। ‘তাক বাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত এই ঘটনার জন্য এবারই প্রথম জনসমক্ষে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন তিনি। সেই ঘটনায় সাত সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ বাদ দেওয়ার প্রায় চার মাস পরে এই ক্ষমাপ্রার্থনা সামনে এলো। খবর এএফপির।

খবরে বলা হয়েছে, গণহত্যার সময় থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। সাবেক এই সরকারপ্রধান বলেছেন, তিনি এমন যে কোনও কাজের জন্য ক্ষমা চান; যা মানুষকে ‘অস্বস্তি বোধ করাতে পারে’। ‘ডিপ সাউথ’ নামে পরিচিত এই থাইল্যান্ডের এই এলাকায় গত ১৯ বছরের মধ্যে প্রথম সফরের সময় গণহত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তখন স্থানীয় মানুষের দিকে খেয়াল রাখাই ছিল আমার প্রধান উদ্দেশ্য। যদি আমার দ্বারা কোনও ভুল বা কোনও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমা চাইতে চাই।’

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর থাইল্যান্ডের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাক বাই শহরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেসময় নিরাপত্তা বাহিনী মালয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে নারাথিওয়াত প্রদেশের তাক বাই শহরে একটি থানার বাইরে বিক্ষোভরত জনতার ওপর গুলি চালায়, এতে সাতজন নিহত হয়। পরবর্তীতে আটককৃত ৭৮ জনকে হাত-পা বেঁধে সামরিক ট্রাকের পেছনে ঠাসাঠাসি করে নেওয়ার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। সেসময় এটি ‘তাক বাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত হয় এবং এতে তৎকালীন সময়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণহত য গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেড় শতাধিক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। 

অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩৪১টি অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত সংস্থা জড়িত তিন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪০ মামলার তদন্ত করছে। 

অবশ্য জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, কারাগারে বন্দি লোকগুলো তো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। অযথা একটা লোককে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে কেন আটকে রাখা হবে। তাদের ‘অ্যাকুইটাল’ (বিচারে খালাস) দিয়ে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।

জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বছরে ৫৫ মামলার রায়ে আসামি ছিলেন ১৬৯ জন। যার মধ্যে রায় হওয়ার আগেই মারা যান ১৮ জন; তাদের মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন, পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দু’জন। আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেয়েছেন। যার মধ্যে একজন শিশু বিবেচনায়। বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন ১০৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ৭ আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড।  

গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ দেড় শতাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।  

এদিকে নতুন মামলার ভারে স্থবির হয়ে যায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পুরোনো মামলা। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ১১৩ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ও তদন্ত সংস্থায় ২৫ মামলা তদন্তাধীন ছিল। অনুসন্ধানের অপেক্ষায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চার হাজার অভিযোগ। গত বছর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন।  

এদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয়জনের বিচার ছিল চলমান। যাদের অধিকাংশ জামায়াত ইসলামীর নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজনের বিচার চলমান। 

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৩টি আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আগামী ৮ মে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহীদ হোসাম শাবাতের সাহস
  • অর্থ ফেরত ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ঢাকার
  • গিরিশৃঙ্গে জাফর সাদেকের হাতে উড়ল ফিলিস্তিনের পতাকা
  • সম্পদ ফেরত ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ঢাকার
  • একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা
  • নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির