স্থানীয় সরকার না থাকলে খাদ্যঘাটতি কেন বাড়বে
Published: 24th, February 2025 GMT
কোনো এক দেশে নাকি জীবনঘাতী যুদ্ধ হয়েছিল আন্ডা ফাটানো নিয়ে। আন্ডা বা ডিমের চিকন দিক থেকে সেটা ভাঙা হবে, না মোটা দিক থেকে ফাটানো হবে, সেটাই ছিল দ্বন্দ্বের বিষয়। দেশে এখন বিতর্কের বিষয় বড় নির্বাচন, মানে সংসদ নির্বাচন আগে, না ছোট নির্বাচন; অর্থাৎ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে।
একাত্তরের পর এযাবৎ রাজনৈতিক সরকারগুলো চেয়ে এসেছে, আগে আমাদেরটা হোক, তারপর হবে ‘ছোটদের’টা। দেশের প্রথম স্বাধীন সরকার চুয়াত্তরের আগে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার দিতে পারেনি অথবা চায়নি, যদিও ১৯৬৯ সাল থেকে এ দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার ছিল না। ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়াউর রহমান অবশ্য আগে স্থানীয় নির্বাচন দেন। পরের জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও সাধারণ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। হতে পারে তাঁরা দুজনেই নতুন পার্টি গোছানোর জন্য সময় নিতেই এই কৌশল নিয়েছিলেন।
কেউ মনে করতে পারেন, রাজনীতিকে ‘ডিফিকাল্ট’ করার দর্শনে বিশ্বাসী জিয়ার এটা একটা সূক্ষ্ম রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ‘এক্সপেরিমেন্ট’ ছিল। তিনি জনগণের ইচ্ছাটা বুঝতে পেরেছিলেন। আগ্রহী পাঠকদের মনে থাকবে, স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়ার আগে অন্য কেউ তাঁর মতো মাইলের পর মাইল হেঁটে গ্রামগঞ্জে ছুটে বেড়াননি। গাড়িতে অভ্যস্ত আমলারা হাঁপিয়ে উঠতেন। সেই সময় তিনি বলার চেয়ে শুনতেন বেশি।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে থাকা তখনকার বাসসে (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) কর্মরত সাংবাদিকদের একজন একবার জিয়ার সঙ্গে লম্বা সফর থেকে ঘুরে এসে মন্তব্য করেছিলেন, ‘উনি দেখি একদম কথা বলেন না, শুধুই শোনেন! “সমস্যা কী? আর আপনারা কী চান?” এর বাইরে তেমন কিছুই বলেন না।’
জিয়ার সঙ্গে হাঁটা সংবাদিকেরা আশ্চর্য হয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, গ্রামের মানুষ বলছেন স্থানীয় সরকারের কথা। দেশে তখন কোনো কার্যকর স্থানীয় সরকার ছিল না। সারা দেশে একটা ভজকট অবস্থা।
দেশে তখন ‘ঘরোয়া’ রাজনীতি বৈধ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘নিবন্ধন’, মানে রাজনীতি করার ‘লাইসেন্স’ নিতে বলা হয়েছে। বাকশাল থেকে মুক্তি নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ নিবন্ধন নেওয়া উচিত বলে মনে করে। নিষিদ্ধ জাসদ, ভাসানী ন্যাপ ইত্যাদিও নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধ হয়। তবে যার রং যা–ই থাক, সবাই চাইছিল জাতীয় নির্বাচন।
অনেকটা এখনকার মতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের আমলের কথিত ‘নির্বাচিত’ সিটি ও পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় জেলা ও উপজেলা পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বাতিল হতে হতে বেঁচে গেলেও পার্টির ‘মার্কা’ নিয়ে ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পলাতক বা কাজে অনুপস্থিত।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশে স্বাভাবিকভাবেই সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। পৌরসভা আর সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কাজের দায়িত্ব বর্তিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনওর ওপর। দেশের ৬৪টি জেলায় মোট ৪৯৫টি উপজেলার সঙ্গে আছে ৪ হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন; সেই হিসাবে গড়ে একেকটি উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ।
গ্রামের মানুষ কেন স্থানীয় সরকার আগে চান
এটাই তাঁদের সবচেয়ে কাছের সরকার। ১৯৭৬ সালে ইউপির কর্মপরিধি এখনকার মতো বিস্তৃত ছিল না। তারপরও মানুষ চেয়েছিলেন তাঁদের কাছের সরকারটি আগে হাল ধরুক। রোজকার চাহিদা আগে মিটুক। এখন ইউপির অবশ্যকরণীয় আর ঐচ্ছিক কাজের পরিধি এত বড় হয়েছে যে ‘নিশ্বাস ফেলতেও পরিষদের কড়া নাড়তে হয়’।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩–এর ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৩ ধারায় ইউপির কার্যাবলির কথা বলা আছে। ইউপির কাজগুলো মূলত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অধ্যাদেশ মোতাবেক ইউনিয়ন এলাকায় পৌর, পুলিশ ও নিরাপত্তা; রাজস্ব ও প্রশাসন; উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিচারকাজ করে ইউপি।
পালিয়ে যাননি—এমন একজন চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইউএনও দিয়ে কাজ চালাতে অসুবিধা কোথায়? তিনি বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান যদি না থাকেন, তাহলে মানুষের যে কী পরিমাণ দুর্ভোগ, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আমি প্রতিদিন নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধনসহ অন্তত ৫০ জনকে এই সেবা দিয়ে থাকি। এখন ইউএনও বা সরকারি কোনো কর্মকর্তার পক্ষে এই সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা তো মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাগজে সই করে দিই। আর ইউএনওদের কাছে সই নিতে উপজেলায় যেতে হয়। তা-ও আবার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সই দেন না। আগে সেক্রেটারির কাছে জমা দিতে হয়, তাঁর সেক্রেটারি সম্মতি দিলে এক দিন বা দুই দিন পর তিনি সই দেন। এ কারণে মানুষের ভোগান্তি যেমন বেড়ে যায়, তেমনি উপজেলায় যাওয়া-আসার খরচও বাড়ে।’
কারওয়ান বাজারে রাতে যাঁদের চা বা পান খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাঁরা অনেকেই মর্জিনাবুর গলার আওয়াজ শুনে থাকবেন। একদিন তাঁকে বেহুদার মতো পরামর্শ দিয়েছিলাম, ‘গলাটা একটু নামাইয়া কথা কওন যায় না?’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বেটাগোর চাইতে জোরে চিক্কুর না দিলে দাম নাইগো, ভাইডি। পুরুষের সমাজে চলতে গেলে মিনমিন কথায় কাম হয় না।’
ময়মনসিংহের মর্জিনা সপ্তাহে তিন দিন আসেন সবজি নিয়ে অন্যান্য পাইকারের সঙ্গে শেয়ারে। গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের লাউতৈল এলাকায় তাঁর বাড়ি ছিল। আগস্টের আগুনে মর্জিনা বিবি ঢাকায় আটকা পড়েছিলেন। অভ্যুত্থানের আগুন দেখেছেন। কষ্ট দেখেছেন মানুষের। তখন মনকে বুঝ দিয়েছেন, ‘কাঁটা’টা নেমে গেলেই বুকটা ‘কিলিয়ার’ হয়ে যাবে। কাঁটাটা নেমেছে, কিন্তু বুকটা ‘কিলিয়ার’ হচ্ছে কই?
শীতকালীন সবজিতে মার খেয়ে অনেক চাষি এখন আর গ্রীষ্মের সবজির কথা ভাবছেন না। সবজি উৎপাদন না হলে মর্জিনাবুর ব্যবসা লাটে উঠবে। চাষিরা মার খেলে পেটে পাথর বেঁধে হলেও জমি ছাড়েন না। এবার কেন হতাশ তাঁরা?
গরমের চাষে সেচ লাগে বেশি। সেচ নেই। কমিটি নেই। কেমনে কী হবে। তাঁর কথায় মনে পড়ল লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর আর বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচসংকটের কথা। লাপাত্তা কমিটির কারণে অনেক জায়গায় নতুন ভুঁইফোড় ‘ওয়াটার লর্ড’–এর জন্ম আর তাদের কামড়াকামড়িতে অতিষ্ঠ এখন চাষিরা।
স্থানীয় সরকার না হলে কি খাদ্যঘাটতি বাড়বে
আমাদের কৃষিতে বিএডিসি আর ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার এখন ‘রিয়েলিটি’। এটা মেনে নেওয়া ছাড়া চাষিদের পথ নেই। ভূগর্ভস্থ পানি আইন-২০১৮ ও তদীয় বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে কৃষিকাজে ব্যবহারের সেচযন্ত্রের লাইসেন্স নিতে হয় বিএডিসির কর্তাদের কাছ থেকে। এখন অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায়। কম্পিউটার–সাক্ষরদের কাছে ‘সিস্টেম ডাউন’ না থাকলে এটা কোনো ব্যাপারই নয়।
বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের বেশির ভাগ চাষির ভাগ্যে সব সময়ই ‘সিস্টেম ডাউন’ থাকে। লাইসেন্সের আবেদন করলে বিএডিসি ভূগর্ভস্থ পানি মনিটরিংয়ের জন্য অটো ওয়াটার লেভেল রেকর্ডার ও ডেটা লগার স্থাপন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ স্থিতিশীল পানির স্তর পরিমাপ করে ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপ’ তৈরি করে। এসব কাজ আগস্টের আগে চেয়ারম্যান–মেম্বার আর তাঁদের চেলাচামুণ্ডারা সামলাতেন। চাষিরা টাকা দিয়ে সেচের পানি নিতেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষকে বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক অপশাসনকে দায়ী করেছেন। অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি কার্যকর স্থানীয় সরকারের অনুপস্থিতিও খাদ্যাভাবের জন্য দায়ী, সেটা না মানার কোনো কারণ নেই। উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের সময় আইয়ুবের ‘দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তৎকালীন স্থানীয় সরকার বা ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচিত মেম্বার–চেয়ারম্যানদের। অনেকের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করে ছাত্রদের খুশি করতে যেমন তাঁদের জন্য সিনেমা হলের টিকিটের দাম হাফ করে দেন, তেমনি স্থানীয় সরকার ভেঙে দেন। সৃষ্টি হয় এক শূন্যতার। বিচার–সালিস, চৌকিদারি, হাটবাজারের কাইজ্যা মেটানোর মতো কোনো ব্যবস্থা আর থাকল না। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে জানালা দিয়ে ‘এখন আমি রাজা’ টাইপের লোকজনের উৎপাত শুরু হয়ে যায়।
এদের অনেকেই তখনকার জনপ্রিয় মার্কার লোক বলে নিজেদের জাহির করতে থাকে। আসল প্যাঁচটা বাধে দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর। পুনর্বাসনের কাজে স্থানীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ঠিক হয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কমিটি রিলিফ কমিটি হিসেবে কাজ করবে। আগে সংবিধান রচনা, তারপর রাজাদের নির্বাচন—এসবের ফেরে পড়ে হারিয়ে যায় স্থানীয় সরকারের কথা।
স্থানীয় সরকারের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনের সম্পর্ক
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন নামে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৬১–এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাত্র ১ হাজার ৫৫৫টি শক্তিচালিত পাম্পের মাধ্যমে বিএডিসি কর্তৃক দেশে আধুনিক সেচ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ–ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। আস্তে আস্তে সেচযন্ত্রের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এসব পাম্প গ্রামভিত্তিক কমিটির মাধ্যমে সেচের জন্য দেওয়া হতো। সেচের মৌসুম শেষে যন্ত্র ফেরত যেত বিএডিসির কাছে।
স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা চাষি ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতেন। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর জমি ছিল, চাষিরা ছিলেন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ছিল, সেচযন্ত্রও ছিল; কিন্তু সেতুবন্ধের কাজ করার গ্রামপর্যায়ে কোনো সংগঠন ছিল না। উনসত্তরে ভেঙে দেওয়া ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন হতে হতে চুয়াত্তর এসে যায় (প্রথম ইউনিয়ন নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ১৯ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত)।
মাঝখানে চলে যায় তিন–তিনটা আউশ–বোরোর মৌসুম। দুর্ভিক্ষের মহাচক্রে পড়ে যায় অগোছালো, বিধ্বস্ত আর ‘চাটার দলের জিবের মধ্যে থাকা’ বাংলাদেশ। ভুলে গেলে চলবে না, ইউনিয়ন পরিষদের অবশ্যকরণীয় কর্মতালিকার মধ্যে ‘সেচ’ অন্যতম।
এখানে ছোট করে একটা সত্য ঘটনা বয়ান করা যায়, বাহাত্তরের সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে কতিপয় তরুণ সেচসংকট আর খাদ্য উৎপাদনের জটিল বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ঢাকার কাছে বৈদ্যের বাজারে (এখন সোনারগাঁ উপজেলা) তাঁরা থাকতেন। তাঁদের এলাকায় তাঁরা স্থানীয় সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই বিএডিসির সেচযন্ত্র নিয়ে এসে চাষিদের সংঘবদ্ধ করে ধান চাষ শুরু করেছিলেন।
প্রথম বছরেই তাঁরা অবিশ্বাস্য সফলতা পান। খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁরা আর তাঁদের প্রকল্প। বৈদ্যের বাজারের এই তরুণেরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে না থাকায় তাঁদের চরম মূল্য দিতে হয়। প্রকাশ্যে নির্মমভাবে তাঁদের খুন করা হয়।
কৃষি ছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। স্থানীয় সরকারের অবর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘দোসর’মুক্ত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সম্প্রতি বরিশাল মহানগরের একজন রাজনৈতিক নেতাকে স্কুল পরিচালনার প্রস্তাবিত কমিটির দ্বিতীয় নম্বরে রাখায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ রকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
সবচেয়ে বড় জটিলতায় পড়েছে জন্মনিবন্ধনের ব্যবস্থা। আজকাল জন্মনিবন্ধনের সনদ না থাকলে স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। এ ছাড়া পাসপোর্ট, বিবাহনিবন্ধন, সরকারি–বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ভোটার তালিকা, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স, গ্যাস–পানি–টেলিফোন ও বিদ্যুৎ–সংযোগ, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), ঠিকাদারি লাইসেন্স, বাড়ির নকশা অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি—সব ক্ষেত্রেই জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.
আজ থেকে ৪৮–৪৯ বছর আগে গ্রামে গ্রামে হাঁটার সময় মানুষের কাছে প্রায় একই কথা শুনেছিলেন জেনারেল জিয়া, ‘আগে আমাদের সরকারটা হোক।’ সেটাই তাঁদের আগে দরকার, যেটাকে তাঁরা নিজের মনে করেন। ‘রাজা নির্বাচনে’ তাঁদের আগ্রহ থাকলেও উৎসাহ কম। মর্জিনাবুর ভাষায়, ‘তাগো আমার দেখা হয়ে গেছে।’
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র র স থ ন য় সরক র ন স চযন ত র র জন ত ক ব যবস থ ক জ কর শ ন যত আম দ র র জন য ইউপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুবদলের কমিটিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের জায়গা হবে না : সজল
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেছেন, যুবদলের কমিটিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের জায়গা হবে না। আমরা চিনি ও জানি কারা যুবদলের বিগত সময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
রাজপথে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদেরকে যুবদলের স্থান দেওয়া হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে কেউ আশ্রয় প্রশ্রয় দিবেন যুবদলের সেই সুযোগ নাই।
সোমবার ( ২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানা ও উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন যুবদলের কর্মীসভা ১০নং ওয়ার্ড যুবদল ও ১নং ওয়ার্ড উদ্বোধন শেষে কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, আর যারা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন তাদের আমলনামা কিন্তু আমাদের কাছে জমা দিতে হবে। বিগত দিনে কারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তার ছবিসহ আমলনামা দিতে। আমাদের সাথে রাজনীতি করতেন আর আওয়ামী লীগের নেতার সাথে আঁতাত করে আপনারা কাজ করেছে সেই সব নেতারাও কিন্তু কমিটিতে স্থান পাবেন না।
আর অর্থের লেনদেনে কাউকে যুবদলের কমিটিতে স্থান দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে কেউ বলতে পারবে না যে একটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১দফা যে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে কিন্তু যুবকদের কথা বলা হয়েছে। যুব সমাজকে আত্মিকভাবে ও ব্যবসায়িকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। আপনারা আমাদের ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠমো মেরামতের দাবি গুলো তোমাকে মানুষের মাধ্যমে তুলে ধরবেন এবং তাদেরকে বুঝাবেন।
তিনি বলেন, আজকে যে রেমিটেন্স যোদ্ধা আমাদের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে তার অবদান কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের। তিনি বলেছিলেন আমি করুণা চাই না আমার দেশের ১০ কোটি লোক আছে ২০ কোটি হাত কাজ করে খেতে চায় আমাদেরকে কর্মস্থানের ব্যবস্থা সুযোগ করে দেন। সেই সময়ে তিনি আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য আমাদের দেশের লোকদেরকে বিদেশে কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যুবদলের রাজনৈতিক করতে গিয়ে বিগত এই ১৬টি বছর অনেক বিএনপি ও হাজার হাজার যুবদলের নেতাকর্মী হত্যা ও গুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সর্বশেষে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমাদের মহানগর যুবদল নেতা স্বজন নিহত হয়েছে।
আর আমাদের শত শত নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এই কষ্টের ফলকে আপনারা ধ্বংস করতে পারবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন দলের নীতি ও আদর্শ মেনে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে। আর সেই নির্দেশনা যুবদলের নেতাকর্মীদেরকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আমি আর শাহেদ হয়তোবা একদিন থাকবো না কিন্তু এই আমাদের এই সংগঠন যুবদল কিন্তু থাকবে। সুতরাং কাউকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দিব না।
তিনি আরও বলেন, যারা বিগত দিনে রাজপথে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তারা সমাজের জন্য কাজ করতে হবে। সমাজের মানুষের উপকার করতে হবে তাদের কাছে যেতে হবে তাদের কথা শুনতে হবে ।
সে যদি সমাজে কাজ না করে মানুষের সাথে থামবিজ্ঞতা দেখাও অহংকারী দেখায় নিজেকে বড় বড় নেতা জাহির করে বেড়ায় আমরা তাদেরকে যুবদলের স্থান দেব না। কারণ তাদের জন্য যুবদল না তাদের স্থান অন্য জায়গায়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের সভাপতিত্বে কর্মী সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান খলিল শ্যামল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন সেন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান মৃধা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ, শহিদুল ইসলাম,ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, পারভেজ খান, মোঃ আরমান হোসেন, কামরুল ইসলাম রনি, মিনহাজ মিঠু, আশিকুর রহমান অনি, জুয়েল রানা, কামরুল হাসান মাসুদ, এরশাদ আলী, ফয়েজ উল্লাহ সজল,আলী ইমরান শামীম, তরিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম আপন, শাহীন শরীফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুনায়েদ আলম ঝলক, ফয়সাল আহমেদ, সাইদুর হাসান রিপন, আরিফ খান, কায়সার আহমেদ, এড. শাহিন খান, কাজী নাইসুল ইসলাম সাদ্দাম, আলী হোসেন সৌরভ, বাদশা মিয়া, মাসুদ রানা, মাকসুদুর রহমান শাকিল, রুবেল সরদার, রিয়াজুল আলম ইমন, জুনায়েদ মোল্লা জনি, হাবিবুর রহমান মাসুদ, আঃ কাদির, আশরাফুল হক তান্না, জাহিদুল হাসান শুভ, মাহফুজুর রহমান ফয়সাল প্রমুখ ।
এছাড়াও মহানগর যুবদলের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানা ও উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড যুবদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।