ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীদের হামলায় তৈরি পোশাক কারখানার এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর সহকর্মীরা। তবে পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তির স্বামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে এটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, ওই মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে কারখানাসংলগ্ন বারইপাড়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক  অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এতে সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। আড়াই ঘণ্টা পর সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নিহত সুবর্ণা আক্তার (৩৫) আশুলিয়ার বারইপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থাকতেন। তিনি স্থানীয় তৈরি পোশাক কারখানা তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিক ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম মো.

সুমন।

মো. সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর (সুবর্ণার) এক বান্ধবী বলছে, রাতে কাজ শেষ করে দুজন একলগে বের হয়। বান্ধবী হেঁটে যাচ্ছিল। আর সে মাহিন্দ্র গাড়িতে উঠে। পরে সড়ক থেকে এক ভ্যানওয়ালা (চালক) তাকে একটি হাসপাতালে নেয়। ওই হাসপাতাল থিকা পরে কুমুদিনী হাসপাতালে নিই। সেখানকার ডাক্তার ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলে। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার সময় রাস্তায়ই মারা গেলে লাশ নিয়া ফিরে আসি।’

কুমুদিনী হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) অনিমেষ ভৌমিক জানান, আজ ভোর ৪টার দিকে তাঁকে (সুবর্ণা) হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথার পেছনের দিকে আঘাত ছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সুবর্ণার লাশ তানজিলা টেক্সটাইলের কারখানায় আনা হয়। আটটার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানার সামনে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে পুলিশের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকেরা সড়ক থেকে সরে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক নারী শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওভারটাইম শেষে রাত ২টার সময় ছুটি দিলে সে (সুবর্ণা) বের হয় যায়। পরে শুনেছি, বাসায় যাওয়ার সময় তাঁকে ছিনতাইকারীরা ধরছে। সঠিক ঘটনা আমরা জানি না। সকালে কারখানার পোলাপান সড়ক অবরোধ করছে।’

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক অবরোধকারী শ্রমিকেরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। কেউ বলেছেন ছিনতাইকারীরা তাঁকে (সুবর্ণা) মেরে ফেলেছেন। কেউ বলছেন, তাঁকে জঙ্গলে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু নিহত ব্যক্তির স্বামী জানিয়েছেন ওই নারী মাথার পেছনে থেঁতলানো ও একটি পা ভেঙে থেঁতলে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সড়কে গাড়িচাপায় তিনি নিহত হয়েছেন।’

শ্রমিকদের বরাত দিয়ে এসআই আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে কারখানা ছুটির পর সুবর্ণা বাসার উদ্দেশে রওনা হন। গাড়ি থেকে বারইপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামার কথা থাকলেও তিনি ভুলে নন্দন পার্ক এলাকায় চলে যান। ফেরার পথে তিনি হয়তো গাড়িচাপায় মারা গেছেন। প্রথমে তাঁকে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সুবর্ণা কীভাবে নিহত হয়েছেন, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উত্তেজিত শ্রমিকদের বুঝিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সড়ক থ ক স বর ণ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের জেরে খুন হন গৃহবধূ সাথি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গৃহবধূ সাথি খাতুন আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে। ওই গৃহবধূকে (২২) পিটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্লেড দিয়ে কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাথি খাতুনের শ্বশুর মতিয়ার শেখ, স্বামীর খালু মো. ফারুক ও এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার সকালে উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। 

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সদকী ইউনিয়নের হুদা করাতকান্দি গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে সাথির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তাঁর স্বামী ইটভাটা শ্রমিক মো. সিমান্ত (৩০)। 

পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, প্রায় আট বছর আগে সিমান্তর সঙ্গে সাথি খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এ দম্পতির নাহিদ (৬) ও আফসানা (৪ মাস) নামে দুই সন্তান রয়েছে। প্রায় এক বছর পূর্বে এক তরুণীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায় সিমান্ত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দিলে সমস্যার সমাধানে পারিবারিকভাবে একাধিকবার সালিশি বৈঠক হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীকে নিয়ে ঘোরাফেরা করে সিমান্ত। ওইদিন রাতে এ বিষয়ে স্বামীর কাছে জানতে চায় সাথি। তখন স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে হত্যা করে সিমান্ত। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে সে পালিয়ে যায়। 

সাথির বাবা মনছুর শেখ বলেন, তাঁর মেয়েকে স্বামী সীমান্ত ও তাদের পরিবারের লোকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক করেছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ড বলে জানানোর পর আসামিদের উপযুক্ত শাস্তির আশায় সোমবার দুপুরে থানায় হত্যা মামলার এজাহার দিয়েছেন। 

কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ বলেন, এক তরুণীর সঙ্গে স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের জেরে ওই গৃহবধূকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন ওই গৃহবধূর বাবা। পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ