কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা, গুলিতে তরুণের মৃত্যু
Published: 24th, February 2025 GMT
কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে শাহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিমানবাহিনীর ঘাঁটির পাশে সমিতিপাড়ার প্রবীণ শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিনের ছেলে। আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমিতিপাড়ার পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ হোসেন নামের এক তরুণের সঙ্গে বিমানবাহিনীর একটি তল্লাশিচৌকিকে হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এরপর জাহেদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা চলা ওই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শিহাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে আসতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজনকে সরিয়ে দেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
দুপুরে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন আইএসপিআর-এর সহকারী পরিচালক আয়শা ছিদ্দিকা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ ১৯টি গ্রাম-মহল্লা নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড। ৭০ হাজার বাসিন্দার ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ১ নং ওয়ার্ডের খাস জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। কয়েক বছর ধরে কিছু এলাকাতে বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনের জন্য তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারের ঠায় হয়েছে। এখন আরও ৮৫টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি সকালে ১ নং ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।
বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা প্রসঙ্গে ১ নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর আকতার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, উচ্ছেদের সঙ্গে হামলার সম্পৃক্ততা নেই। হামলা ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ (২৯) নামের মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণের হেলমেট না পরার ঘটনা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গুলিতে একজনের মৃত্যুর খবর পেলাম। পরে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যান।’
নিহত শিহাবের বাবা নাছির উদ্দিন কক্সবাজার পিটিআই-এর সাবেক সুপার। মা আমেনা খাতুন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। থাকেন সমিতি পাড়াতে। গুলিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে আমেনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় ছেলে (শিহাব) ঘরের দরজায় দারিয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি মাথায় এসে লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উপড়ে পড়ে-মগজ বেরিয়ে আসে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম লেগেছে তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদমজী ইপিজেডে ঝুটের গোডাউন অগ্নিকাণ্ড
সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডে ইউ.এইচ.এম লিমিটেড ( উর্মী গ্রুপ) নামক গার্মেন্টস এর একটি কারখানার ঝুটের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে কারখানায় কর্মরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হলে আদমজী ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে আনেন। পরে উভয়ের প্রচেষ্টায় ১ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মিরন মিয়া বলেন, আমরা আগুন ধরার খবর শুনে সাথে সাথে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। আমাদের দুটি ইউনিটের ১ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। তাৎক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যায়নি।