ভরা ফাগুন। বাগানে বাগানে গাছ ভরে উঠেছে আমের মুকুলে। মাতাল করা মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারপাশ। কিছু মুকুল নাক ফুলের মতো আকার ধারণ করেছে। আবার দুই-একটি আকার পেয়েছে মটরদানার মতো। এমন অবস্থায় হঠাৎ বৃষ্টিতে রাজশাহীর আম চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা গাছভরা আমের মুকুলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী মহানগরের কিছু এলাকা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় বৃষ্টি হয়েছে। ছিল ধুলি ঝড়। বাঘায় বৃষ্টির সঙ্গে শিলাও পড়েছে।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরের আগে বৃষ্টি হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। একইদিন সকালে বৃষ্টি হয়েছে নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায়। এই তিন জেলাতেই সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। হঠাৎ বৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন আম চাষিরা।

আরো পড়ুন:

খুলনায় দিনভর বৃষ্টি, রবিশস্যের ক্ষতির শঙ্কা

বাগেরহাটে বৃষ্টি, উপকার হবে ধানের 

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ রবিবার সকাল থেকেই লোকজন নিয়ে বাগানে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। এতদিন সবকিছু ভালোই ছিল। হঠাৎ শনিবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শিলাবৃষ্টি হলো। সেইসঙ্গে ছিল বাতাস। এখন তো চিন্তায় পড়ে গেলাম।”

তিনি আরো বলেন, “এখনো মুকুল ফুটন্ত অবস্থায়। অল্প কিছু গুটি ধরেছে। যেগুলোর গুটি হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হবে না। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ফুটন্ত মুকুলের ক্ষতি হবে। অনেক মুকুল ঝরে যাবে। একদিনেই মাটিতে প্রচুর পড়ে থাকা মুকুল দেখা যাচ্ছে। এখন গাছে থাকা মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হবে, কীটপতঙ্গ বাড়বে। রেহাই পেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে শুরু করেছি।”

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.

শফিকুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা ছত্রাকনাশক স্প্রে করা শুরু করেছেন। মুকুল ফুটন্ত অবস্থায় থাকলে এখন স্প্রে করে লাভ হবে না। যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ফলন একটু কমতে পারে। তবে, যে গাছে এখনো মুকুল পুরোপুরি ফোটেনি, সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আমচাষি ইসমাইল খান জানান, রবিবার ভোরের আগে তাদের এলাকায় কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ মুকুল ফুটন্ত অবস্থায় থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। যেসব মুকুল গুটি হয়ে গেছে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না, বরং লাভ হবে।

নওগাঁর পত্নীতলার আমচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, রবিবার সকাল ১১টার দিকে তাদের এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত রোদ হলে মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে। এখনকার মতো ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকলে মুকুলের ক্ষতি তেমন হবে না বলেও তিনি মনে করছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, শনিবার দুপুরে তারা নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি হয়েছে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল। রবিবার রাজশাহী মহানগরে বৃষ্টি হয়নি। আগের দিন শিলাবৃষ্টির কথাও তারা জানেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান জানান, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও নওগাঁয় গড়ে ৭০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটে গেছে। ক্ষতির তেমন আশঙ্কা করছেন না তিনি। 

ড. আজিজুর রহমান বলেন, “খুব জোরে বৃষ্টি হয়নি। ফোটা ফোটা বৃষ্টি হয়েছে। এমন নমিন্যাল বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এবার আমের অন ইয়ার। তাই ফলন ভালো হবে। এ রকম অল্প বৃষ্টিতে আমের ফলন খুব একটা কমবে না।”

গত মৌসুমে রাজশাহীর চার জেলায় ৯৩ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। অফ ইয়ার ছিল বলে গত মৌসুমে আমের ফলন ছিল কম। এবার কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও আমের অন-ইয়ার বলে উৎপাদন গত মৌসুমের চেয়েও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল ফল অবস থ য় ফ টন ত এল ক য় করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নাট্যকার মোমেনার ‘আত্মজয়’ ২৭ ফেব্রুয়ারি 

মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার। ‘আত্মজয়’ নামে নাটকটি লিখেছেন মোমেনা চৌধুরী, নির্দেশনায় শামীম সাগর। ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হবে নাটকটি। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা মোমেনা চৌধুরী এ প্রথম মঞ্চের জন্য কোনো নাটক লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে টুকটাক লিখতাম। করোনার সময় কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে ১৯টি ছোটগল্প লিখেছিলাম। সেখান থেকেই নাটক লেখার সাহস পেলাম।’ আত্মহত্যা থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে আত্মজয়।

মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে অস্থিরতা, মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আর্থসামাজিক অবস্থা– সবকিছু মিলিয়ে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় খবর পাই, ছোটখাট বিষয় নিয়ে মানুষ আত্মহত্যা করছে। মানুষকে আত্মহত্যা থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্যই আত্মজয় লেখা। আত্মজয়ের জন্য চাই আত্মবিশ্বাস। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। এ বিষয়টাই উঠে এসেছে নাটকটিতে।’

নির্দেশক শামীম সাগর বলেন, ‘আত্মজয় নাটকের মধ্য দিয়ে শূন্যন থিয়েটারের সঙ্গে আমার যাত্রা শুরু হলো। আত্মহত্যা প্রবণতা একটি জটিল সামাজিক ও মানসিক সংকট, যা প্রতিরোধযোগ্য। সাংস্কৃতিক মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করে আমরা এ সংকট মোকাবিলার পথ দেখাতে পারি। সেই চেষ্টাই রয়েছে ‘আত্মজয়’ নাটকে।

আত্মজয় দিয়ে এক বছর পর মঞ্চে ফিরছেন তাহমিনা সুলতানা মৌ। একসময় ‘সুবচন’ ও ‘বটতলা’ নাট্যদলের হয়ে মঞ্চে নিয়মিত দেখা গেলেও এখন অনেকটাই অনিয়মিত তিনি। আত্মজয় নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন মমতাজ বেগম চরিত্রে। মৌ বলেন, ‘সব সময় মঞ্চে অভিনয় করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করার ফলে মঞ্চের জন্য সময় বের করাটা কঠিন হয়ে যায়। অনেক দিন পর মঞ্চে আবারও অভিনয় করব ভেবে খুব ভালো লাগছে।’

আত্মজয় নাটকে আরও অভিনয় করেছেন রাফিউল রকি, আনুশকা দেবনাথ, মিতু রহমান, তানভীর সানি ও মোমেনা চৌধুরী। আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠান্ডু রায়হান, আবহ সংগীত করেছেন নির্ঝর চৌধুরী, পোশাক পরিকল্পনায় সামিউন জাহান দোলা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ