হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে দলীয় রাজনীতি মানুষের পছন্দ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষক, নার্স বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা উচিত নয়।

বিবিএসের করা স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক জনমত জরিপে মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে বিবিএসের পক্ষ থেকে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের দেওয়া হয়। বিবিএস ৬৪ জেলার শহর ও গ্রামের ৮ হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর জরিপ করেছে। জরিপে প্রতিটি পরিবার থেকে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী একজন নারী বা পুরুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।

জনমতের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে রাজনীতি করলে হাসপাতালে সেবার মান পড়ে যায়, ঝুঁকি বাড়ে রোগীদের। আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় (বিএমআরসি, বিএমডিসি) দলীয় রাজনীতি প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। জ্ঞান, পাণ্ডিত্য, দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়ে নিয়োগ বা পদোন্নতিতে বা গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের মধ্যে এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতাপ নিয়ে আছে বিএনপি-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং জামায়াত-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের আগে স্বাস্থ্য খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)। তাঁদের অনেকেই এখন কোণঠাসা হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৫ বছরের শাসনামলে অনেক যোগ্য চিকিৎসক ও শিক্ষক যথাস্থানে বসতে পারেননি ড্যাব বা এসডিএফের সদস্য হওয়ার কারণে।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনমতের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে রাজনীতি করলে হাসপাতালে সেবার মান পড়ে যায়, ঝুঁকি বাড়ে রোগীদের। একইভাবে নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়ে মেডিকেল শিক্ষার ওপর, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।’

জরিপে কী পাওয়া গেছে

জরিপকারীরা মানুষের কাছে চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ কর্মস্থলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন। জরিপ ফলাফলে দেখা গেছে, ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কর্মস্থলে চিকিৎসকসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর রাজনীতির বিপক্ষে। রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন ২১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না এমন বলেছেন ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষ।

স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের রাজনীতির বিপক্ষে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের হার বেশি। শহরের ৭৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ রাজনীতি চান না। গ্রামে তা ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ। রাজনীতির বিপক্ষে এই মনোভাব নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রায় সমান। বয়সের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা তুলনামূলকভাবে বেশি রাজনীতির বিপক্ষে।

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন বরিশালের ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এই হার সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ। যাঁরা কখনো স্কুলে যাননি, যাঁরা অল্প শিক্ষিত অথবা যাঁরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী—সব ধরনের মানুষই রাজনীতির বিপক্ষে। একইভাবে মতামত জানতে কৃষিকাজ, ব্যবসা, সরকারি চাকরিজীবী, বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, বেকার, অবসরপ্রাপ্ত, গৃহিণীসহ অনেক পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন জরিপকারীরা। সব পেশার মানুষই কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের ৮৫ শতাংশ বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁরা চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিপক্ষে। অন্যদিকে এই হার সবচেয়ে কম বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে। তাঁদের ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ চিকিৎসকদের রাজনীতির বিপক্ষে।

চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতি এবং বিবিএসের জরিপের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যক্ষ আবু মুহাম্মদ জাকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উত্তরদাতাদের মতামতের সঙ্গে শতভাগ সহমত পোষণ করি। অতীতে সেবাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির মারাত্মক অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। রাজনীতি করলে করতে হবে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা মেডিকেল কলেজের বাইরে। এটা যেন আর না হয়, সেই সুপারিশ আমরা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দেব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক ও চ কর জ ব ব ব এস মত মত সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের আয়ারল্যান্ডে ক্যারিয়ারের সুযোগ, পরীক্ষা তিনটি

আয়ারল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপদেশ, যার রাজধানী ডাবলিন। এটি একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। দেশটি কেলটিক সংস্কৃতি, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নত অর্থনীতির জন্য পরিচিত। অর্থনৈতিকভাবে আয়ারল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ। তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, আর্থিক পরিষেবা, কৃষি ও পর্যটন দেশটির প্রধান খাত। গুগল, অ্যাপল, ফেসবুকসহ অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানির ইউরোপীয় সদর দপ্তর এখানে। দেশটিতে দুগ্ধ ও গবাদিপশু খাতও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত।

আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্য খাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট মোকাবিলার জন্য। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডে কর্মরত মোট চিকিৎসকদের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদেশি, যা দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর তাদের নির্ভরশীলতার প্রমাণ। একই বছরের হিসাব অনুযায়ী, নার্সদের ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডের নার্সিং কর্মীদের প্রায় ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিলেন বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি। আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিল ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও মিসরের মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাওয়া কঠিন।

আয়ারল্যান্ডে স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মিসর, সুদান ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ থেকে হাজারো স্বাস্থ্যকর্মী এখানে কাজ করছেন। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশি চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম, আর নার্সদের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। যেসব বাংলাদেশি চিকিৎসক এই দেশে কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেন ভারত-পাকিস্তান কিংবা ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজেই আয়ারল্যান্ডের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন অথচ বাংলাদেশিরা পিছিয়ে রয়েছেন? এর পেছনে বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রশাসনিক কারণ রয়েছে, যা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি। আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিল (IMC) ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও মিসরের মেডিকেল ডিগ্রি সহজেই স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি পাওয়া কঠিন। যার ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অতিরিক্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। একইভাবে নার্সদের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়। আয়ারল্যান্ডের নার্সিং বোর্ড (NMBI) ফিলিপাইন, ভারত ও নাইজেরিয়ার নার্সদের স্বীকৃতি দেয়, কারণ এসব দেশের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তি না থাকার ফলে বাংলাদেশি নার্সরা আবেদন করলে তাঁরা নানা জটিলতার সম্মুখীন হন।

আরও পড়ুনরোমানিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা, সুযোগ-সুবিধা ও আবেদনের পদ্ধতি জেনে নিন১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশি চিকিৎসকদের আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে হলে সাধারণত তিনটি প্রধান ধাপে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করতে হয়। যেমন—

১. আইএমসি রেজিস্ট্রেশন: আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিলে নিবন্ধন করতে হয়, যা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে।

২. প্রেস (PRES) পরীক্ষা: যদি ডিগ্রি স্বীকৃত না হয়, তাহলে PRES (Pre-Registration Examination System) পরীক্ষা দিতে হয়, যার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা, ক্লিনিক্যাল স্কিলস পরীক্ষা ও সুপারভাইজড ইন্টার্নশিপ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

৩. বিকল্প পথ: যদি কোনো ডাক্তার PLAB বা MRCP পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাহলে তাঁরা PRES পরীক্ষা ছাড়াই IMC রেজিস্ট্রেশন পেতে পারেন। স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করতে চাইলে CESR (Certificate of Eligibility for Specialist Registration) বা সমমানের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তবে PRES পরীক্ষা বা PLAB/MRCP/FRCS পাস করলেও IMC রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য তাঁদের ভাষার দক্ষতার পরীক্ষা (IELTS বা OET) বাধ্যতামূলক।

আয়ারল্যান্ডে কাজ করার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের আইইএলটিএস বা ওইটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা বাধ্যতামূলক। IELTS-এ অন্তত ৭.০ স্কোর ও OET-তে ‘বি’ গ্রেড প্রয়োজন। ভারতের মতো দেশগুলোর চিকিৎসকেরা ও নার্সরা ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহণের কারণে সহজেই এই পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এটি তুলনামূলক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে এটি আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তির অভাবও আরেকটি বড় সমস্যা। ফিলিপাইন, ভারত, নাইজেরিয়া ও সুদানের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর্মী সরবরাহের আনুষ্ঠানিক চুক্তি থাকায় তাদের চিকিৎসক ও নার্সরা সহজেই অনুমোদন পান। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন কোনো চুক্তি না থাকায় তাঁরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো চাকরির সংযোগ বা স্পনসরশিপ পাওয়া। আয়ারল্যান্ডের হাসপাতালে সরাসরি আবেদন করতে হলে স্পনসরশিপ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশিদের জন্য পাওয়া বেশ কঠিন। ভারত বা অন্য দেশের জন্য নির্দিষ্ট কিছু রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি রয়েছে, যারা হাসপাতালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, কিন্তু বাংলাদেশিদের জন্য তেমন কিছু নেই। যার ফলে তাঁরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছেন।

আরও পড়ুনহার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ’র সুযোগ বাংলাদেশিদের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কী করতে পারে বাংলাদেশ

এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রথমত, সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিল (IMC) ও নার্সিং বোর্ডের (NMBI) সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। ভারতের মতো বাংলাদেশকেও স্বীকৃতি পেলে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য চাকরি পাওয়া সহজ হবে;

দ্বিতীয়ত, সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী সরবরাহের আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিপাইন ও ভারতের মতো বাংলাদেশকেও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করতে হবে। এটি হলে বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের জন্য কাজের সুযোগ সহজ হবে;

তৃতীয়ত, IELTS ও OET পরীক্ষার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারিভাবে থাকলেও সরকারি পর্যায়ে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোয় ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান চালু করলে ভবিষ্যতে এই বাধা অনেকটাই দূর করা সম্ভব;

চতুর্থত, চাকরির সংযোগ ও স্পনসরশিপ পেতে নির্দিষ্ট কিছু রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি তৈরি করা দরকার। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য রিক্রুটমেন্ট সংস্থা গঠন করতে হবে, যারা আয়ারল্যান্ডের হাসপাতালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশকে বিশেষায়িত চিকিৎসক তৈরি করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আয়ারল্যান্ডে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চাহিদা অনেক বেশি, বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়া, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি ও সার্জারির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ যদি এ বিষয়ে বিশেষায়িত চিকিৎসকদের তৈরি করতে পারে, তাহলে তাঁরা সহজেই আয়ারল্যান্ডের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে ভিসা–সুবিধা সহজীকরণের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ‘Critical Skills Employment Permit’ নামের একটি বিশেষ কর্মসংস্থান প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট পেশাজীবী সহজেই কাজের অনুমতি পান। বাংলাদেশ যদি এই প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তাহলে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আয়ারল্যান্ডে প্রবেশ করা আরও সহজ হবে।

আয়ারল্যান্ডে চিকিৎসক ও নার্সদের বেতনকাঠামোও বেশ আকর্ষণীয়। একজন এন্ট্রি-লেভেলের চিকিৎসক বছরে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ইউরো আয় করতে পারেন, যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ইউরোর মধ্যে হয়ে থাকে। কনসালট্যান্ট পর্যায়ের চিকিৎসকদের বেতন আরও বেশি, যা ২ লাখ ১০ হাজার ইউরোর বেশি হতে পারে। নার্সদের ক্ষেত্রেও একইভাবে বেতনকাঠামো ভালো, যা এন্ট্রি-লেভেলে বছরে প্রায় ৩০ হাজার ইউরো থেকে শুরু হয় এবং সিনিয়র পর্যায়ে ৫৫ হাজার ইউরোর বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ যদি আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্য খাতে প্রবেশের জন্য পদক্ষেপ নেয়, তাহলে একদিকে যেমন চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো আয়ারল্যান্ডও দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এটি দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে প্রস্তুতি কেমন, জেনে নিন ধাপগুলো১৪ এপ্রিল ২০২৪

এই লক্ষ্যে সরকারের প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করা, যাতে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সরা আয়ারল্যান্ডসহ অন্য উন্নত দেশে কাজের সুযোগ পান। প্রথমত, মেডিকেল ও নার্সিং ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে;

দ্বিতীয়ত, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি;

তৃতীয়ত, সরাসরি চাকরির সুযোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনশক্তি রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী সরবরাহের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করা যেতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি রিক্রুটমেন্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আইরিশ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করাও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও আগামী দিনের রাজনৈতিক সরকার যদি এ সম্ভাবনাময় খাতের উন্নতির জন্য উদ্যোগ নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সরা আয়ারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে কাজের সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

*সৈয়দ আতিকুর রব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
  • আজ দেশের সব মেডিকেল কলেজে ‘একাডেমিক শাটডাউন’ কর্মসূচি
  • মুন্সীগঞ্জে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড 
  • রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, রোগীদের ভোগান্তি
  • চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ‌‘কমপ্লিট শাটডাউন’ 
  • রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে
  • খুমেক হাসপাতালে পাঁচ দফা দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
  • চট্টগ্রামেও কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
  • বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের আয়ারল্যান্ডে ক্যারিয়ারের সুযোগ, পরীক্ষা তিনটি