বইয়ের প্রথম লাইন ‘মাকে আমার মনেই পড়ে না।’ এই কথাটা যেকোনো মানুষের মন শূন্য করে দেবে নিঃসন্দেহে। গবেষক গোলাম মুরশিদের মৃত্যুর ঠিক ছয় মাস পর প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বই ‘আত্মকথা ইতিকথা’র প্রথম লাইন এটি। এবং বইয়েই মাতৃহীন একটি মানুষের অস্থিরতা টের পাওয়া যায়। আত্মজীবনী পুরোটা শেষ করে যেতে পারেননি। যা পাওয়া গেলো তাই নিয়ে এই বই। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’ এ এভাবেই নিজেকে মেলে ধরলেন গোলাম মুরশিদ।
পাঁচ বছর হতে মাত্র কয়েক মাস, ঠিক এ সময় বসন্ত রোগে মারা গিয়েছিলেন গোলাম মুরশিদের মা। সেই থেকে তাঁর একাকী জীবন। নানুর স্নেহ, পিতার শাসন, বিয়ের পর স্ত্রী এলিজা মুরশিদের ভালোবাসা আর সারা জীবনের অধ্যাবসয় ‘আত্মকথা ইতিকথায়’ উঠে এসেছে। এতে রয়েছে এগারোটি বিষয়: মায়ের কথা, বাবার কথা, শিক্ষাজীবনের কথা, অশিক্ষার কথা, অসাংবাদিকতার ইতিকথা, বিবিসির কথা, প্রবাসের নানা কথা, বিলেতে শিক্ষকতার কথা, লেখালেখির কথা।
জীবনের কতো প্রসঙ্গ বাদ রয়ে গেছে! মৃত্যুর মাসখানেক আগেও বলেছিলেন, যদি আরও কিছু দিন সময় পেতাম! কিন্তু সময় বড়ো নিষ্ঠুর। তাই সময় শেষ হয়ে গেলো।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় ঝুমকি বসুর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ছাতিম ফুলের গন্ধ’
আমাদের একজন ডা.
তবে ‘আত্মকথা ইতিকথা’য় যা পাওয়া গেছে, তা কম নয়। এই একনিষ্ঠ গবেষকের অনেক খামখেয়ালি কাজ এবং সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। জানা গেছে অনেক পাগলামির কথা। যেমন, আইএসসি পরীক্ষা চলাকালীন গণিত পরীক্ষার আগের রাতে রাত একটা পর্যন্ত ওস্তাদ গুল মোহাম্মদের উচ্চাঙ্গসংগীত শুনে নিজের হোস্টেলে ফিরেছিলেন। আবার তিনি ভালো রেজাল্ট করলে শিক্ষকতা করতে হবে এই ভয়ে এম. এ. ক্লাসে ভালোভাবে লেখাপড়া করেননি। তাঁর ‘অশিক্ষার ইতিকথা’ থেকে উদ্ধৃত করছি: ‘... আমার আশঙ্কা হইয়াছিল যে কোনো কারণে আমি যদি প্রথম শ্রেণী পাই, তাহা হইলে আমার কী হইবে? লোকে ভাবিবে, আমি লেখাপড়ায় ভালো, আমি ময়ূরপক্ষী। কিন্তু আমি তো জানি, আমি আসলে তিতির, ময়ূরের কয়েকটি পালক নিজের পাখায় গুঁজিয়া দিয়া ময়ূর সাজিতে চেষ্টা করিতেছি। ধরা যাউক, আমাকে কোনো কলেজে পড়াইতে বলিলে, কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার মূর্খতা এবং অজ্ঞতার সহিত আমার সত্যিকার চেহারা দাঁত মেলিয়া দেখা দিবে। সেই লজ্জা এবং দুর্গতি হইতে আমাকে তখন কে রক্ষা করিবে? সুতরাং ভাবিলাম, টেইক ইট ইজি। লেখাপড়া করার তেমন দরকার নাই!’
তারপরও তিনি প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন! লিখেছেন, ‘আমার মূর্খতা এবং অজ্ঞানতা চারিদিকে ছড়াইয়া দেওয়ার প্রথম শ্রেণীর সনদ দেওয়া হইল। বস্তুত দশচক্রে বিদ্বান সাজিয়া কর্মপথে যাত্রা করিলাম।’ তাঁর কর্মযজ্ঞের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এর আড়ালের সেই পরিশ্রম, একনিষ্ঠতা, ছোটো ছোটো গল্পকথা, হাসি-কান্নার কথা কম মানুষেরই জানা আছে। ‘আত্মকথা ইতিকথা’য় সেই কথাগুলো রয়েছে। রয়েছে তাঁর বিভিন্ন গবেষণার নেপথ্যকথাও।
গোলাম মুরশিদ আপদমস্তক গবেষক ছিলেন। গবেষককে কী কী করতে হয়, কতো দিকে দৃষ্টি দিতে হয়, কী ধরনের প্রশ্ন গবেষণাকে এগিয়ে নেয় ইত্যাদি বিষয়গুলো রয়েছে এ বইয়ে। তাই যে কোনো গবেষকের জন্যও বইটি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া যাঁরা তাঁর জীবন সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য তো অবশ্যই। বইটি সম্পাদনা করেছেন স্বরোচিষ সরকার। এবং প্রকাশ করেছে অবসর। গোলাম মুরশিদের আরও কিছু অসম্পূর্ণ-অগোছালো পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত তা প্রকাশিত হবে।
তারা//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, ৫ কেন্দ্রে আসনবণ্টন, অনলাইনে প্রবেশপত্র প্রকাশ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর থেকে শাবিপ্রবির ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে ভর্তি–ইচ্ছুরা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত তারিখে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চার দিন আগে থেকে প্রবেশপত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের জন্য ওয়েসাইটের ‘লগইন’র ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন কিংবা তা সংগ্রহ করতে পারছেন না। এ রকম প্রায় আড়াই হাজার আবেদনকারীর সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এ কারণে যাঁরা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন না, তাঁদের ভর্তি কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
এদিকে, শাবিপ্রবির ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেখানে পাসওয়ার্ড পুনরায় ফেরত পেতে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ (উচ্চমাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধনকৃত ফোন নম্বরসহ) দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনচায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ, প্রয়োজন নেই আইইএলটিএস৯ ঘণ্টা আগেভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এবার স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে শাবিপ্রবি। এবার মোট আবেদন পড়েছে ৮৬ হাজার ৪১৬টি। দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় এ-১ ইউনিটে (বিজ্ঞান) শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ২৭০ জন, ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ে ৩৪ হাজার ৩৬৯, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ১২, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ৩ হাজার ৭৮০ ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ৫ হাজার ৬২৭ জনসহ ওই ইউনিটে সর্বমোট ২৯ হাজার ১১৬ জন আবেদনকারী অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া এ-২ (স্থাপত্য) ইউনিটের ভর্তি ১ হাজার ২৪২ জন শাবিপ্রবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন।
অন্যদিকে, বি ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ) শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৯৮৩ জন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৬৩৬, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫৬, যবিপ্রবিতে ৩ হাজার ১৪ ও সিভাসুতে ১ হাজর ৪২৭ জনসহ মোট ৫৬ হাজার ৫৮ জন আবদেনকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা। একই দিন বেলা ৩টায় এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, এমসিকিউ ১০০, মেধাতালিকা ২০০ নম্বরে২০ জানুয়ারি ২০২৫আসন কতশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাসহ মোট আসন ১ হাজার ৬৭১টি। ২৮টি বিভাগে মূল আসন ১ হাজার ৫৬৬। এ বছর এ ইউনিটে (বিজ্ঞান শাখা) মোট আসন ৯৮৫টি এবং বি ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা) মোট ৫৮১টি আসন রয়েছে। এসব আসন ছাড়াও অতিরিক্ত ১০৫টি কোটা আসন রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ২৮, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী/জাতিসত্তা/হরিজন-দলিত কোটা ২৮, প্রতিবন্ধী কোটা ১৪, পোষ্য কোটা ২০, চা–শ্রমিক কোটা ৫, বিকেএসপি (খেলোয়াড়) কোটা ১০।
আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষা–২০২৫ নতুন রুটিন প্রকাশ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫