জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) জয়ী হয়েছে। সোমবার সকালে (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, সিডিইউ পেয়েছে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট, যা দলটিকে স্পষ্ট বিজয় এনে দিয়েছে। দলের নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎস নতুন চ্যান্সেলর হতে চলেছেন। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে কট্টর ডানপন্থি দল আল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। আগের ২০২১ সালের নির্বাচনে এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থানে ছিল, এবার রেকর্ড জয় পেয়ে ওই জায়গা থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে এসেছে।

নির্বাচনে জিতে মেয়াৎস (৬৯) জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক উত্থানের মধ্য দিয়ে এএফডি দ্বিতীয় স্থান পাওয়ায় মেয়াৎসকে জোট গঠনে জটিল ও দীর্ঘ দরকষাকষির আলোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেনকে ৬৮০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তার ঘোষণা জার্মানির

আবারও ৭ গোল দিলো জার্মানি

এএফডি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সমর্থন পেয়ে ধন্য হলেও জার্মানির মূলধারার দলগুলো কট্টর ডানপন্থি দলটির সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করেছে। ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এএফডি দেশটির পরবর্তী সরকারের অংশ হতে পারবে না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন দলের মধ্যে ভোট ভাগ হয়ে যাওয়া এই নির্বাচনে জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজের নেতৃত্বাধীন এসপিডি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে।

এছাড়া, সমাজতান্ত্রিক দল ডি লিঙ্কে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ শতাংশ সীমার অনেক ওপরে।  

শলৎজের নেতৃত্বাধীন ‘ট্রাফিক লাইট’ জোট বিভক্ত রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে, যার ফলে রবিবারের আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জার্মানির মতো স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এটি একটি বিরল ঘটনা।  

এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে এবং জার্মানির অভিবাসন নীতির ওপর নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।  

এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতাদের বাদ রেখে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার সিদ্ধান্ত ইউরোপ জুড়ে আলোড়ন তুলেছে।  

মের্ৎস এই বিষয়ে রবিবার বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘স্বাধীনতা’ অর্জন তার প্রধান লক্ষ্য।” তিনি বলেন, “আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে ইউরোপকে দ্রুত শক্তিশালী করা, যেন আমরা ধাপে ধাপে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।”  

তিনি আরো বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে টেলিভিশনে আমাকে এমন কিছু বলতে হবে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর এটা স্পষ্ট যে, অন্তত এই প্রশাসনের একটি অংশ ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন।”  

তবে, নতুন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ কম নয়। নাজি যুগের পর থেকে জার্মানির স্থিতিশীলতা ও উন্নতি নির্ভর করেছে ন্যাটো জোট, সস্তা রুশ জ্বালানি এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর। কিন্তু এই ভিত্তি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভিবাসন সংকট মের্ৎস প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক দশম ক ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

জার্মানিতে নির্বাচনে জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সিডিইউ-সিএসইউ, সরকার গঠন কীভাবে

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মেৎর্সের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট সিডিইউ-সিএসইউ জয়ী হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি জোটটি। তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ৩০ শতাংশ পিছিয়ে আছে।

ইতিমধ্যে মেৎর্সের জোটের সমর্থকেরা বিজয় উদ্‌যাপন করছেন। তাঁদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন মেৎর্স। তিনি বলেন, ‘চলুন, আজ রাতে উদ্‌যাপন করি এবং সকালে আমরা কাজে নেমে পড়ব।’

তাঁর সামনে যে দায়িত্ব রয়েছে, তা তিনি জানেন বলেও উল্লেখ করেন মেৎর্স।
নির্বাচনে অপর বিজয়ী দল হলো কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। দলটি ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে রেকর্ড দ্বিতীয় স্থান অর্জনকে উদ্‌যাপন করছে।

এএফডির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন অ্যালিস ভায়ডেল। যদিও তাঁর দল আরও ভালো ফলাফলের আশা করেছিল। গতকাল রোববার মধ্যরাতে প্রাথমিক ফলাফল আসতে শুরু হওয়ার পর এএফডিকে অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জেডডিএফের একটি জরিপ অনুসারে, দলটি ৩৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছিল।

এএফডি নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেল বলেন, ‘জার্মানরা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।’
ফ্রিডরিখ মেৎর্সের জোট গঠনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে বিশ্বাস তাঁর। এ প্রসঙ্গে ভায়ডেল আরও বলেন, ‘নতুন নির্বাচন হবে—আমার মনে হয় না আমাদের আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

নির্বাচনের ফলাফলসংক্রান্ত মানচিত্রে দেখা গেছে, পূর্বদিকের অংশ হালকা নীল রং হয়ে আছে। আর মানচিত্রের বাকি অংশের প্রায় পুরোটাই কালো হয়ে আছে, যা সিডিইউর রং।

গত বছর ওলাফ শলৎজের নেতৃত্বাধীন তিনদলীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর মেৎর্স ভোটারদের কাছে তাঁর দলের জন্য ভোট চান।

ওলাফ শলৎজ বলেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি চার বছরের মধ্যে স্থবির অর্থনীতি থেকে শুরু করে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত জার্মানির সমস্যাগুলোর যতটা সম্ভব সমাধান করতে পারবেন।

নির্বাচনে জার্মান ভোটারদের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। ৮৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং তাদের জোটভুক্ত দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি ভোট আশা করেছিল। তবে এত ভোটার উপস্থিতির পরও তারা তা পায়নি।

এএফডির সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন মেৎর্স। জার্মানিতে সাধারণত মূলধারার দলগুলোকে কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট করতে দেখা যায় না।

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের মেৎর্সের জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও এ দল নির্বাচনে তাদের এ যাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। দলটি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ও বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল তাঁর দলের জন্য একটি তিক্ত পরাজয়। তিনি জোট গঠনের আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

সিডিইউর তুলনামূলক দুর্বল ফলাফলের কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুটি দল জোট গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না।

জার্মানিতে বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার ছিল গ্রিনস। আর দলটির নেতা রোবার্ত হাবেক। তবে ভোটের আগে মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি তাঁকে ‘হিট পাম্পের প্রতিনিধি’ হিসেবে উপহাস করেছিলেন।

৬৯ বছর বয়সী মেৎর্স কখনো মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি। তবে প্রচারণাকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জার্মান চ্যান্সেলর হলে ইউরোপে নেতৃত্ব দেখাবেন এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেৎর্সের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে এটাই প্রমাণ হয় যে জার্মানরাও মার্কিন নাগরিকদের মতো করেই কাণ্ডজ্ঞানহীন এজেন্ডা, বিশেষ করে জ্বালানি ও অভিবাসন নিয়ে ক্লান্ত।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় মেৎর্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাখোঁ লিখেছেন, ‘আমরা ফ্রান্স ও জার্মানির জন্য একসঙ্গে দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে এবং একটি শক্তিশালী ও সার্বভৌম ইউরোপের জন্য কাজ করতে আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘আমরা জীবনের সুরক্ষা দিতে, ইউক্রেনের প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং ইউরোপকে শক্তিশালী করতে জার্মানির সঙ্গে আমাদের যৌথ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জার্মানিতে নির্বাচনে জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সিডিইউ-সিএসইউ, সরকার গঠন কীভাবে
  • বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ
  • জার্মানিতে নির্বাচনে এগিয়ে ডানপন্থি সিডিইউ
  • জার্মানির উগ্র ডানপন্থী দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী ভাইডেল চীনা ভাষায় অনর্গল কথা বলেন