খুচরা বাজারে এখনো সয়াবিন তেলের সংকট
Published: 24th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারের একটি রিয়াজউদ্দিন বাজার। পাইকারি-খুচরা মিলিয়ে অন্তত ৫০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয় এখানে। গত দুই দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট রয়েছে। যেসব দোকানে আছে, সেখানেও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি বাজারেও। রোজাকে সামনে রেখে খুচরা পর্যায়ে এখনো বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো।
দেশে বোতলজাত তেলের এই সংকট অনেক দিন ধরে চলছে। গত নভেম্বরে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শুল্ক-কর কমানোর পরও সংকট কাটেনি। বাজারে সংকট থাকলেও বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানির তথ্য রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তবে ভিন্ন তথ্য বলছে সরকারি সংস্থাগুলো। বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে বোতলজাত সয়াবিন মজুতের প্রমাণ পেয়েছে তারা। তাদের ভাষ্য, কোম্পানিগুলো এখন সরবরাহ বাড়িয়েছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী নিজেরা সয়াবিন মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। দোকানিরা ১৭৫ টাকার সয়াবিন ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ক্রেতাদের।
বাজারে সংকট, দাম বেশিচট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ খুচরা দোকানে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন প্রায় নেই বলা চলে। গুটিকয়েক দোকানে তেল পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। আবার এসব তেলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যও মুছে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, যেখানে ৫ লিটার বোতলজাত তেল ৮৫০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে দোকানিরা দাম চাইছেন এক হাজার টাকা।
নগরের বহদ্দারহাট ও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল নেই। থাকলেও দাম বাড়তি চাইছেন বিক্রেতারা। দোকানিদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না। দিলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। কোম্পানি তেল দেওয়ার কথা বললেও তেল সরবরাহ করছে না।
কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের দোকানি মোহাম্মদ হাসিব বলেন, বাজারে এখন তেল নেই। গত সপ্তাহে তেল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো তেল দেয়নি। আবার তেলের সঙ্গে বাজারে কম চলে এমন পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
টি কে গ্রুপের বিক্রয়কর্মী নিউটন মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, বহদ্দারহাট বাজারে আজ ১২০ কার্টন সয়াবিন তেল দিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি কয়েকজন দোকানিকে বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে দেখেছেন। তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করার অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি জানান।
বহদ্দারহাট বাজারের মুহাম্মদ ফরিদুল হক বলেন, ‘একটি কোম্পানি থেকে ২০ কার্টন সয়াবিন তেল অর্ডার দিয়ে পেয়েছি মাত্র দুই কার্টন। আবার সরিষার তেল নিতে হবে, এমন শর্তে সয়াবিন দিয়েছে।’
সংকট অনেকটা ‘কৃত্রিম’বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের খবরে বাজারগুলো ঘুরে দেখেছে বাজার তদারকি সংস্থাগুলো। এর মধ্যে অভিযানে গিয়ে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের পর্যাপ্ত মজুত দেখেছেন তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বাজারের এ সংকট অনেকটা কৃত্রিম। তারা বাজারে বিভিন্ন সময় গিয়ে অধিকাংশ দোকানেই সয়াবিন পেয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আসন্ন রমজানের বাজার নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভায় একই কথা জানানো হয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, গোয়েন্দা দপ্তর থেকেও বলা হয়, বোতলজাত সয়াবিনের সংকট থাকার কথা নয়। যথেষ্ট পরিমাণে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
বাজারে তেল সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, তেল সরবরাহ কিছুটা কম। তবে যেটুকু সরবরাহ করা হচ্ছে, সেটিও কিছু দোকানি মজুত করে দাম বেশি নিচ্ছেন। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রয়কর্মীরা দিচ্ছেন ৮৩৭ টাকা দরে। যেটি বিক্রি করার কথা ৮৫০ টাকায়, দোকানিরা দাম নিচ্ছেন এক হাজার টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকট অনেকটা কৃত্রিম। আমরা বাজারে গিয়ে সয়াবিনের মজুত পেয়েছি বেশ কয়েকটি দোকানে। জরিমানা করা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে সয়াবিনের বাজার অস্থিতিশীল না হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল সরবর হ সরবর হ ক
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চ রক্তচাপ মোকাবিলায় বাজেট বৃদ্ধি জরুরি
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ কমাতে ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে। তবে, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তচাপজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ ও মৃত্যু কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃণমূল পর্যায়ের সকল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের জন্য বর্ধিত এবং টেকসই অর্থায়ন জরুরি।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে আয়োজিত ‘উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) কর্মশালাটির আয়োজন করে। কর্মশালায় সিলেট বিভাগে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার ৪৭ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যা মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী। তবে এসব রোগ মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ