বাফুফে ভবনের সামনের মাঠে একসঙ্গে ফটোসেশনে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল। অতীতে এই ফটোসেশনে সাবিনা খাতুন-মনিকা চাকমাদের দেখা যেত। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ১৮ জনের কেউই নেই এবার। ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে গতকাল ফটোসেশনে এমন দৃশ্য দেখে সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এসেছে সাবিনাদের প্রসঙ্গ।
সোমবার আমিরাতের উদ্দেশে দেশছাড়ার আগে দলের অধিনায়ক আফেইদা খন্দকারের কথাতে মনে হয়েছে, বিদ্রোহীদের নিয়ে তারা ভাবছেন না। গত বছর যারা নারী সাফের শিরোপা জিতিয়েছেন, সেই ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমাদের অভাব অনুভব করছেন না বলে জানান আফেইদা, ‘আমি অভাব অনুভব করছি না। কারণ, আগেও আমি এদের (বর্তমান দলের সতীর্থদের) সঙ্গে খেলেছি; অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২০ দলে একই সঙ্গে খেলেছি। সিনিয়ররা যেসব ধাপে অনুশীলন করেছে, আমরাও সেসব ধাপে অনুশীলন করেছি। আমাদের সবার কম-বেশি একই রকম অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। তারা হয়তো অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছে, আমরা হয়তো কম খেলেছি। কিন্তু তাদের মতোই আমরা প্র্যাকটিস করে গেছি। আমরাও একই ধারায় খেলি।’
সাবিনাদের আপত্তি যাঁকে নিয়ে, সেই পিটার বাটলার রোববার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কূটনীতিকের মতো। আফেইদাকে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে দেখতে যেমন চান, তেমনি করে বিদ্রোহীদের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা আছে বলে জানান বাটলার, ‘এটা পুরোপুরি নতুন একটি দল। আমরা নতুন একজন অধিনায়ক (আফেইদা) পেয়েছি। আমি মনে করি, সে দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতা রাখে এবং বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সব ধরনের গুণ তাঁর আছে। আমি ইংলিশ ফুটবলের প্রতিটি স্তরে খেলেছি। আপাতত পেছনে আর ফিরতে চাই না। তারা ফিরবে কি ফিরবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। তাদের জন্য দরজা সব সময়ই খোলা থাকবে।’
মেয়েদের বর্তমান দলে আছেন সাফজয়ী ৮ ফুটবলার। বাকি ২৩ জনের মধ্যে একেবারেই নতুন মুখ ৯ জন। নতুন এই দল নিয়ে আশাবাদী আফেইদা, ‘আমাদের স্ট্রাইকার লাইন ভালো আছে। ডিফেন্স, মিডফিল্ডও ভালো। আমাদের পুরো দলটিই ভালো। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো রেজাল্ট করে দেশে ফিরব।’
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞা আছে আফেইদার। সর্বশেষ সাফে ভারতের বিপক্ষে গোল করা আফেইদার বিশ্বাস, পুরো দলকে আগলে রাখতে পারবেন তিনি, ‘আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়কত্ব করেছি। ওই দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় এখানে রয়েছে। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। পেছন থেকে তাদের সমর্থন দিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ আমি সেই চেষ্টা করব।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইমোতে প্রেম: চট্টগ্রামে তরুণী খুন, প্রেমিক গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সন্তানের জননী টুম্পা আক্তারের সাথে ইমো অ্যাপে প্রেম গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে বসবাসকারী বেকার ইব্রাহিম হাওলাদারের। এই প্রেমের সূত্র ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান টুম্পা। বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘি এলাকায়।
তবে সুখের হয়নি সে জীবন। অন্য পুরুষের সাথে টুম্পার সম্পর্ক থাকতে পারে। সবসময় এমন সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। সেই সন্দেহ থেকেই একদিন টুম্পার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ইব্রাহিম।
সম্পুর্ণ ক্লু লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।
মাহবুব আলম খান জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বন্দর থানার ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচ তলার একটি বাসা থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে একই এলাকার একটি দোকানের ক্যাশমেমো থেকে পাওয়া নম্বর ধরেই এগোয় তদন্ত। এরপরই শনাক্ত হয় ইব্রাহিম; যিনি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন।
পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় বাসের ভেতর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটিত হয় খুনের রহস্য।
পুলিশ জানায়, ইমোতে প্রেমে সম্পর্কের সূত্র ধরে টুম্পা ও ইব্রাহীম বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন। ভিকটিম টুম্পা আক্তার একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার পরিচয় মূলত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তারের পরই জানতে পারি। তারা বন্দর এলাকার ওই বাসায় লিভ টুগেদার করত। কাগজে-কলমে তাদের বিয়ে হয়নি। দুজন ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে তাদের মুখে মুখে বিয়ে হয়।
টুম্পা আক্তার যখন কর্মস্থলে যেতেন ইব্রাহিম মোবাইল নিয়ে যেতে দিতেন না। মোবাইল বাসায় রেখে যেতেন। বাসায় রাখার পর অনেকসময় তার ফোনে পুরুষ কণ্ঠে কল আসত। ইব্রাহিমের সন্দেহ হয় তার কথিত স্ত্রীর আরও কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়।
ঘটনার দিন এই বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহিমের মাথার কাছে একটি শেলফে থাকা রশি দিয়ে টুম্পার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই সময় টুম্পার বাচ্চাটি পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠলে তাকে একজন মহিলার কাছে দিয়ে ইব্রাহিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ হতাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস