৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর মুক্তি ছাড়া কোনো আলাপ নয়: হামাস
Published: 24th, February 2025 GMT
আগে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই কেবল গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবে হামাস।
হামাস নেতা বাসেম নাঈম গতকাল রোববার এ কথা বলেন।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য নাঈম রয়টার্সকে বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে শত্রুদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনার শর্ত হচ্ছে আগে ৬২০ বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, যাদের ৬ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি এবং ৪ জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। ছয় জিম্মিকে ও চার মৃতদেহ গত শনিবারই হস্তান্তর করা হয়েছে।’
বাসেম নাঈম জোর দিয়ে আরও বলেন, চুক্তিতে সেসব শর্ত থাকে, শত্রুরাও যেন তা মেনে চলে, তা মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করা হয়। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে গতকাল বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং জিম্মি মুক্তির সময় অসম্মানজনক অনুষ্ঠান বাতিল না করা পর্যন্ত ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দী ও বন্দীদের হস্তান্তর করার অপেক্ষা করবে ইসরায়েল।’
ইসরায়েলের অভিযোগ, সম্প্রতি জিম্মি মুক্তি দেওয়ার সময় হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও বলেছেন, জিম্মিদের সম্মান রক্ষা পায়নি, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
হোয়াইট হাউস থেকেও ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। গতকাল হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, ‘হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের সঙ্গে বর্বর আচরণ করেছে। (ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি) পিছিয়ে দেওয়া এর যথাযথ জবাব হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস বলেন, ‘হামাস সম্পর্কে ইসরায়েল যে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতেই সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছেন।’
হামাস জিম্মিদের মুক্তির সময় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ওই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মুখোশ পরা হামাসের যোদ্ধারা জিম্মিদের একটি মঞ্চে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত গাজাবাসীর উদ্দেশে জিম্মিদের হাত নাড়াতে এবং বক্তব্যও দিতে দেখা যায়। জিম্মিদের মৃতদেহের কফিনগুলোও ভিড়ের ভেতর দিয়ে আনা হয়।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পিছিয়ে দেওয়ায় বন্দীদের পরিবারগুলোর মধ্য হতাশা নেমে এসেছে।
আরও পড়ুনছয় জিম্মিকে ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন না নেতানিয়াহু২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইসরায়েলের কারাগার থেকে শনিবার মুক্তি পাবেন ভাই, গাজায় সেই অপেক্ষায় ছিলেন ঘাসান ওয়াশাহি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার কারাগার থেকে কে কে মুক্তি পাচ্ছেন, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়। আমরা অপেক্ষা করি, আশায় থাকি, এবার হয়তো আমার ভাই ইসলামের নাম আসবে, কিন্তু কখনো তাঁর নাম তালিকায় থাকে না।’
তাঁর মা ছেলের মুক্তির আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন বলেও জানান ঘাসান ওয়াশাহি। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত যখন মুক্তির তালিকায় তাঁর নাম এল, ইসরায়েল চুক্তিই স্থগিত করে দিল।’
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনে হামাসের মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ দ র ম ক ত ইসর য় ল র ক র বন দ
এছাড়াও পড়ুন:
শবে কদরের বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
লাইলাতুল কদর, যাকে শবে কদরও বলা হয়, তার অর্থ—মহিমান্বিত রজনী। কদর শব্দের অর্থ: ১. সম্মান করা: বিভিন্ন ফজিলতের কারণে এই রজনি সম্মানের অথবা যে ব্যক্তি উদ্যাপন করে সে সম্মানের পাত্র; ২। নির্ধারণ করা: এ রজনিতে পরবর্তী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
এ রাতে মুসলিমদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তাই একে লাইলাতুল কদর নামে অভিহিত করা হয়েছে।
শবে কদরের বৈশিষ্ট্য
মূলত কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে শবে কদরের রাতে মক্কার জাবালে নুর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত রাসুলের (সা.) ওপর সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে।’ (সুরা কদর, আয়াত: ১)
এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, সবকিছুর পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়, এমনকি কে হজ্জ করবে, তাও লিখে দেওয়া হয়। যেমন, আল্লাহ বলেনন, ‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে।’ (সুরা দুখান, আয়াত: ৩-৫)
এ রাতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ–তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন, সুরা কদর; যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।
আরও পড়ুনরমজানে মহানবীর (সা.) আল্লাহভীতি২২ মার্চ ২০২৫ফজিলত
আল্লাহ বলেন, ‘শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত: ৩)
অর্থাৎ এ-রাতে ইবাদত করা তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। এ ছাড়া এ রাতে সৎ ও ধার্মিক মুসলিমদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নেয়ামত বর্ষিত হয়। রাসুল (সা.) সাহাবিদের এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও একনিষ্ঠতা নিয়ে এ রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮০২)
এ-রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করে ইবাদতরত মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত: ৪-৫)
হাদিসের বর্ননা অনুযায়ী, এ-রাতে যারা আল্লাহর আরাধনায় নিরত থাকবে, আল্লাহ তার ওপর থেকে দোজখের আগুন নিষিদ্ধ করে দেবেন।
আরও পড়ুনরমজানে মহানবী (সা.) যেভাবে বক্তব্য রাখতেন২১ মার্চ ২০২৫