ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকাল স্থগিত করেছে ইসরায়েল। এই ঘটনাকে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ৬২০ ফিলিস্তিনির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে নেতানিয়াহুর নোংরা খেলা হিসেবে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মি হস্তান্তরের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত হবে। একই সঙ্গে হামাসের জিম্মি হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে তিনি ‘অবমাননাকর’ অভিহিত করেছেন। সামরিক কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে আমরা যে কোনো মুহূর্তে প্রস্তুত। আলোচনার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে যুদ্ধের লক্ষ্য আমরা পূরণ করবই। 

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের পরিচালক স্টিফেন জুনেস আলজাজিরাকে বলেন, বন্দি মুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত খুবই বিরক্তিকর। এটা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্টত লঙ্ঘন। হামাসের হাতে থাকা এক মায়ের লাশ ফেরত নিয়ে ইসরায়েল নতুন করে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ওই মায়ের নাম শিরি বিবাস। তাঁর লাশ ভেবে হামাস অন্য একটি লাশ হস্তান্তর করে। এতে ক্ষুব্ধ হন নেতানিয়াহু। তবে হামাস দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ভুলবশত অন্য লাশ পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের সময়সীমা শেষ হবে। গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। রয়টার্স জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা কারামুক্ত স্বজনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের আচরণে তারা চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ। বন্দিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। স্বজনের মুক্তির আনন্দ শোকে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনি বন্দির স্বজন আবু আলিয়া বলেন, স্বজন মুক্তি পাবে, এজন্য শিশুদের নিয়ে এসেছি। সারাদিন তারা ঠান্ডা ও বৃষ্টির মধ্যে অপেক্ষা করেছে। এই অবমাননা অত্যন্ত ভারী। এক ঘণ্টা অপেক্ষা এক দিনের সমান। ইসরায়েলের এই আচরণ হৃদয়কে আঘাত করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে জিম্মি ইসরায়েলিদের ৬২ জন এখনও মুক্তি পায়নি। তাদের অর্ধেক মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

আলজাজিরা জানায়, পশ্চিম তীরের জেনিন, তুলকারেম ও নুর শামস শরণার্থী শিবির থেকে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিবিরগুলোতে জাতিসংঘের কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়ে সেখানে সামরিক ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, স্থানচ্যুত বাসিন্দারা শিবিরে ফিরতে পারবে না। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪৯ জন আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজারো ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।   

অন্যদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহর জানাজায় গতকাল হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। গত সেপ্টেম্বরে রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হন। হিজবুল্লাহর বর্তমান নেতা নাইম কাসেম এক ঘোষণায় বলেন, হিজবুল্লাহ সর্বদা নাসরাল্লাহর পথ অনুসরণ করবে। এর আগে মারাইস এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

এ দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট বিশেষত পুলিশ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নিয়মিত বাহিনী, গোয়েন্দা দপ্তরসহ র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ; তারা প্রতিনিয়ত আইনের ব্যত্যয় করছে। গত দুই দশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে প্রায় চার হাজার নাগরিক। এর মধ্যে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা নাগরিকরা সব সময় চেয়েছি ক্রসফায়ারে নয়, বরং আইনগত প্রতিকারে সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। রাষ্ট্রের মদদে যখন আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে এসব নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, প্রকৃত অর্থে তখন রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পায়। কোনো সমাজ ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া চলতে পারে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে থাকা অনিয়ম, নিষ্ঠুর আচরণে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কার্যত বাংলাদেশে তা-ই ঘটেছে। যখন আমরা জানতে পারি একজন আসামিকে হেফাজতে রেখে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো ঘটনা ঘটেছে, তখন আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমরা একটি সভ্য সমাজে বসবাস করছি! এ ধরনের আচরণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের দুঃসাহস আমাদের হতবাক করে। কাজেই উত্থাপিত অভিযোগটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে অভিযোগটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় নিয়ে ন্যায়সংগত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কী করে এতটা অধঃপতন হলো? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তারা কি তাহলে রাজনৈতিক প্রচ্ছন্ন বলয়ে ঢুকে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে বা পেয়েছে? এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মবহির্ভূত আচরণ ও কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ হয়তো উঠতেই থাকবে।
বিনা পরোয়ানায় আসামি বা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ না করাটা যে অন্যায় কিংবা বলা যায় আইনের ব্যত্যয়, এই বার্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনে রাখতে হবে। আসামিকে না পেয়ে স্ত্রী কিংবা সন্তানদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বাভাবিক পদ্ধতি বলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে মনে হয়। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় পিতাকে আটক করতে গিয়ে না পেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেসন্তানকে আটক করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও দেওয়া হয়েছে। যদিও হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পরে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।

আমরা চাই আমাদের নিরাপত্তা। একই সঙ্গে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বা থাকবেন, তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণ যেন আইন ও বিধিসম্মত হয়। অন্যথায় আইনের শাসন ও জবাবদিহি শব্দ দুটি অকার্যকর হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা রয়ে যাবে। নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়ে দেশের কোনো মানুষের প্রাণহানি ঘটুক, সেটি কারও কাম্য নয়। কেননা, জীবনের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
এ দেশে ক্রসফায়ারে হত্যা বন্ধ হোক চিরতরে। কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করে থানা হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ‘গুম’-এর মতো ঘটনা যেন এ দেশে আর কখনও ফিরে না আসে সেই অঙ্গীকার করতে হবে। বিগত দিনে কে কী করেছে তা আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই। সামনের দিনে এ পরিস্থিতি যেন কোনো ক্রমেই না ঘটতে পারে সেই পথে চলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, অন্যথায় তাদের নিয়ে যে সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা গভীর ক্ষত তৈরি করবে। 

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির: মানবাধিকারকর্মী
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই ৭ আচরণ বা অভ্যাস আপনাকে অনেকের মধ্যে আলাদা করবেই
  • বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর
  • কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়, পুলিশ সব নাগরিকের: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন