বেচাকেনা শেষ। ভাঙা হাট। স্থানীয় লোকজন বলেন, ‘চিকনাগুলের গরুর বাজার’। এর অবস্থান সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। আগে-পিছে দরজা আর বেষ্টনীহীন টিনশেডের একটি ঘর। ভেতরে দুই সারিতে অসংখ্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে রাখা। সেসব খুঁটিতে চারটি গরু বাঁধা। পাশেই একটি বেঞ্চ। সেখানে বসেন আছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। কপালে তাঁর চিন্তার ভাঁজ।

কাছে গেলে লোকটির নিমগ্নতা কাটে। শুরুতে ক্রেতা ভেবে ভ্রম করেন। পরে পরিচয় জানতে পেরে মনের যাবতীয় সুখ-দুঃখের ঝাঁপি মেলে ধরেন। মো.

ইলিয়াস নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ক্রেতাহীন ভাঙা হাটে একা বসে নিজের অতীত আর বর্তমানের হিসাব কষছেন। ব্যবসায় লাভ খুবই কম হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইলিয়াসের সঙ্গে কথা হয়। স্থানীয় দেশি গরুর বাজার হিসেবে সিলেটজুড়ে এ হাটের বেশ সুনাম। প্রতিদিন হাটে বেচাকেনা চললেও সোম ও বৃহস্পতিবার বাজারবার হিসেবে পরিচিত। ওই দুই দিন আশপাশের গ্রাম ও উপজেলা থেকে লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলে। অবশ্য শীতকালে রাত ১০টার দিকেই কেনাকাটা শেষ হয়ে যায়।

ইলিয়াস বলেন, ‘গরুর ব্যবসায় আর আগের মতো ইনকাম নাই। পরশু (গত মঙ্গলবার) পাঁচটা গরু বেচছি। গতকাল (গত বুধবার) আর আইজ (গত বৃহস্পতিবার) একটা গরুও বিক্রি হইছে না। চিন্তাত আছি। সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হয়। সবজির মৌসুম হওয়ায় এখন আমরার এলাকাত সবজির দাম একটু কম। এর বাইরে সব জিনিসের দাম বাড়তি। হালকাপাতলা কিনলেই আয় শেষ।’

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গৌরকুচি গ্রামে ইলিয়াসের বাড়ি। সংসারে মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। পাঁচজনের পরিবার চালাতে তাঁকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। ইলিয়াস বলেন, নিজে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। আর কোনো কাজ না জানায় ১০ বছর আগে গরুর ব্যবসায় নেমেছেন। এর পাশাপাশি জাফলং পাথরকোয়ারিতে পাথর তোলার কাজ করতেন। তবে ২০২০ সালের পর কোয়ারিতে পাথর তোলা বন্ধ হয়ে পড়ায় সে কাজ বন্ধ আছে। এখন একমাত্র গরু বিক্রির আয়েই তাঁর সংসার চলে।

প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি গরু ইলিয়াস বিক্রি করতে পারেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর ও তোয়াকুল বাজার আর বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিনি গরু কেনেন। এ ছাড়া রাজশাহী থেকেও মাঝেমধ্যে কেনেন। চিকনাগুল বাজারে গরু রাখার ঘর আর নিজের আবাসনের জন্য প্রতি মাসে ভাড়াবাবদ ১০ হাজার টাকা তাঁর খরচ হয়। এর বাইরে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার টাকা এবং খাওয়াবাবদ প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে।

ইলিয়াস বলেন, চিকনাগুল বাজারে ১৯ জন গরু ব্যবসায়ী আছেন। চাহিদার চেয়ে বেশি ব্যবসায়ী থাকায় সব ব্যবসায়ীই খুব বেশি গরু বিক্রি করতে পারেন না। সব খরচ বাদে তাঁর প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে। এ টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে আর মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ আয় থেকে কুলোতে পারেন না। তাই সব সময় ধারকর্জ করে সংসার চালাতে হয়।

দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাপন আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসের দাম চড়া। বিকল্প ব্যবসার কথা ভাবতে হইব। নইলে ঠেকা যাইত নায়!’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পুলিশের বিপ্লব কুমার ও মেহেদী হাসান সাময়িক বরখাস্ত

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই যুগ্ম কমিশনারকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ডিএমপির (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।

গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মৌখিক বা লিখিতভাবে না জানিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বরখাস্ত করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিপ্লব কুমার সরকার ও এস এম মেহেদী হাসান গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মৌখিক বা লিখিতভাবে অবহিত না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাই তাঁদের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

সাময়িক বরখাস্তকালীন বিপ্লব কুমার সরকার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে এবং এস এম মেহেদী হাসান সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন। বিধি অনুযায়ী তাঁরা খোরপোষ ভাতা পাবেন।

আরও পড়ুনসাবেক দুই আইজিপিসহ ৮৮ পুলিশের নামে হত্যা মামলা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭টি খুনের মামলার আসামি হয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, লালবাগ, শেরেবাংলা, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন থানায় এসব মামলা করেছেন নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

এস এম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, নিউমার্কেট, আদাবর ও ধানমন্ডি থানায় আটটি মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুনসাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব সরকারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত২০ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ