ইউএসএআইডির ২ হাজার কর্মীকে ছুটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু
Published: 24th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) কর্মীদের বেতনসহ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। গতকার রোববার শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে সংস্থাটির হয়ে কর্মরত প্রায় ২ হাজার কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন। কর্মীদের কাছে পাঠানো এ–সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি যাচাই করেছে রয়টার্স।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সময় রোববার মধ্যরাতের আগমুর্হূত থেকে ইউএসএআইডিতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া সব কর্মীর ছুটি কার্যকর হয়েছে। তবে সংস্থাটিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত কর্মীদের বহাল রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সেই সঙ্গে ইউএসএআইডি একটি ‘রিডাকশন ইন ফোর্স’ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে সংস্থাটির প্রায় দুই হাজার কর্মী পড়বেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলেও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
আরও পড়ুনইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা রুখতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইউএসএআইডিতে কাটছাঁট পদক্ষেপের তদারক করছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই)। বিদেশে মার্কিন সহায়তার সরবরাহ এবং প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ইউএসএআইডি।
গত শুক্রবার একজন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের হাজার হাজার ইউএসএআইডি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানোর পথ পরিষ্কার করে দিয়েছেন। দেশটির সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর জন্য এটা বড় একটি ধাক্কা। এসব ইউনিয়ন প্রচেষ্টাটিকে রুখে দেওয়ার জন্য মামলা করেছিলেন।
আরও পড়ুনইউএসএআইডি বন্ধে তৎপর ট্রাম্প–মাস্ক: ‘এটি আমাদের শত্রুদের জন্য উপহার’০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইউএসএআইডির দুজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার অনুমান, ট্রাম্প প্রশাসনের এ প্রক্রিয়ার আওতায় সংস্থাটির প্রায় ৪ হাজার ৬০০ কর্মীর বেশির ভাগ এবং পররাষ্ট্রসহ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দপ্তরগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হবে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই ইউএসএআইডির ওপর খড়্গহস্ত হন তিনি। ট্রাম্প সংস্থাটি ভেঙে দিতে চান।
আরও পড়ুনইউএসএআইডির মহাপরিদর্শক বরখাস্ত১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ক্ষমতা নেওয়ার পরপর ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অনাহার ও প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কর্মসূচি থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় দেওয়াসহ সবকিছুর জন্য বরাদ্দ বন্ধ করেছেন।
আরও পড়ুনফেডারেল কর্মীদের মাস্কের ই–মেইল: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাজের হিসাব দাও, নইলে চাকরি নেই২১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র কর ম দ র র কর ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেছেন, আজকে আট মাস পরে আমার উপলব্ধি হচ্ছে আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মনে হয় সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে যতটুকু বুঝি। এরা কারা করছে আমরা সবাই বুঝি। খুনি হাসিনাকে যেমন আশেপাশে সবাই ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিল, আমি চাই না আর কেউ ফ্যাসিস্ট হোক।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শামসি আরা জামান। এ সময় প্রিয়র চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিরা জামানও তার সঙ্গে ছিলেন।
সামসি আরা জামান বলেন, আমি এত রাজনীতি বুঝি না। আমি মা। ১৯ জুলাই যখন আমার ছেলে নিহত হয়, ২০ আগস্ট যখন মামলা করতে আসি, আমাকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, প্রিয় ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আস্তে আস্তে পুরো থানা ভরে গেলো। আন্দোলনে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন ক্ষমতার চর্চা চলছে, কে কীভাবে কে ক্ষমতায় যাবে। যে ক্ষমতাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিদায় করেছে, সেই আবার ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এই সংগঠন ক্ষমতার জন্য না, জনগণের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছে। আগামীতে কেউ যেন ফ্যাস্টিস্ট না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আমিও সঙ্গে থাকবো।
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে জিমনেশিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, শামসুল আলম সজ্জন ও বাকী বিল্লাহ; সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না প্রমুখ।
রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সকল শহীদ পরিবারে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের উপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসিনার পতনের বছরপূর্তি হবার আগেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা আমাদেরকে পুনর্বার রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার চঞ্চল বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।
সম্মেলনে শুভকামনা জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন্সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।