যে এলাকার শুঁটকিমহালে শ্রমিক কেবল নারী
Published: 24th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার প্রায় সবখানেই এখন লবণ উৎপাদনের ধুম। তবে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া সৈকতে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের তোড়জোড়। সৈকতজুড়ে রয়েছে ২৫টির বেশি শুঁটকিমহাল, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘শুঁটকি কিল্যা’ হিসেবে। এসব শুঁটকিমহালে শ্রমিকদের সবাই নারী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা শুঁটকি উৎপাদনে কাজ করেন।
সম্প্রতি সরেজমিন মৌলভিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরের তীরঘেঁষা গ্রামটির কয়েকটি মহালে শুঁটকি উৎপাদন করছেন ৫০ জনের বেশি নারী। ফরিদুল আলম নামের এক ব্যক্তির শুঁটকিমহালে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকি উৎপাদনের জন্য বাঁশের মাচা রয়েছে সাতটি। প্রতিটি মাচায় দু-তিনজন করে নারী শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদন করছেন। মাচায় শুকাতে দেওয়া মাছের বেশির ভাগই চিংড়ি। কিছু মাচায় ছুরি, ফাইস্যা ও লইট্যা মাছ শুকাতে দেওয়া হয়েছে।
সকাল ছয়টা থেকে মহালটিতে কাজ করতে আসেন মৌলভিপাড়ার খুশী বেগম (২৫)। স্বামী গিয়াস উদ্দিন পেশায় জেলে। খুশী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে মাছ ধরা পড়ছে কম। এ কারণে তাঁর স্বামী কিছুদিন ধরে বেকার। তিনি সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুঁটকিমহালে কাজ করে ২৫০ টাকা মজুরি পান। তবে তাঁর উপার্জনের টাকায় সংসার চলে না। এলাকায় শুঁটকিমহালে কাজ করা ছাড়া নারীদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, এলাকার পুরুষেরা লবণমাঠে কাজ করেন, নারীরা শুঁটকিমহালে। শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ হলে নারী শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েন বলে জানান দুই সন্তানের জননী খুশী বেগম।
খুশীর পাশে দাঁড়িয়ে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ করছিলেন আরেক নারী শ্রমিক রাবেয়া বেগম (৩৪)। তাঁর স্বামী আবদুর রহিম পেশায় কৃষক। রাবেয়া বেগম বলেন, তিনি শুঁটকিমহালে কাজ করছেন ২০ দিন ধরে। তাঁর সংসারে ২ ছেলে, ২ মেয়ে। সারা দিন কাজ করে তিনিও ২৫০ টাকা পান। তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতেই কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলায় লবণমাঠে কাজ করা পুরুষ শ্রমিকেরা মজুরি পান দৈনিক ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। শুঁটকিমহালে নারীদের কম মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে মহালের মালিক ফরিদুল আলম বলেন, পুরুষ শ্রমিকেরা মহালে কাজ করলে সাগরে নেমে ট্রলার থেকে মাছ কিনে ধুয়ে মহালে নিয়ে আসা, সন্ধ্যায় সেই মাছ গুদামে নেওয়াসহ বিভিন্ন বাড়তি কাজ করেন। তবে নারী শ্রমিকেরা কেবল মাচায় মাছ শুকাতে দেন। এর বাইরে কাজ তেমন করেন না। এ কারণে নারী শ্রমিকদের মজুরি অপেক্ষাকৃত কম।
ফরিদুল আলমের দক্ষিণ পাশে মো.
মহালের মালিকেরা জানান, কুতুবদিয়ায় শুঁটকি কেনার ব্যবসায়ী রয়েছেন ২৩ জন। তাঁরা মহালের শুঁটকি কিনে ট্রলারে করে নিয়ে যান চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে। সেখান থেকে শুঁটকি সরবরাহ হয় তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
ফরিদুল আলমের মহাল থেকে অন্তত এক হাজার কেজি শুঁটকি কিনতে দেখা যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলামকে। তাঁর বাড়ি উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের তারলেরচর গ্রামে। ১২ বছর ধরে তিনি শুঁটকির ব্যবসা করছেন। কুতুবদিয়ার শুঁটকি ট্রলারে ভরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করেন। কুতুবদিয়ার বিষমুক্ত শুঁটকির স্বাদ ও কদর দুটোই বেশি জানিয়ে দিদারুল ইসলাম (৪৩) প্রথম আলোকে বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে তিনি ৩ হাজার কেজি শুঁটকি সরবরাহ করতেন। তবে এখন ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি শুঁটকি খাতুনগঞ্জে সরবরাহ করেন। কারণ, সাগরে মাছ তেমন ধরা পড়ছে না।
মহালের কয়েকজন মালিক জানান, ট্রলার থেকে তাঁরা প্রতি মণ কাঁচা চিংড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে শুঁটকি করেন। প্রতি মণে কাঁচা মাছ থেকে পান ১০ কেজি শুঁটকি। প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি করলে ১০ কেজিতে লাভ থাকে ১ হাজার টাকার মতো। শ্রমিকসহ মহালের আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিলে ৫০০ টাকার বেশি থাকে না। সাগরে বেশি মাছ ধরা পড়লে তখন বেশি লাভ করা যায়। প্রতি সপ্তাহে এ এলাকার মহাল থেকে অন্তত তিন মেট্রিকটন শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে বলেও জানান মালিকেরা।
মাচায় মাছ শুকিয়ে চলছে শুঁটকি উৎপাদনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২৫০ ট ক ক জ কর উপজ ল উৎপ দ ব যবস করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’
নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’
এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।