সারা দিন কাজ করেও সংসার চলে না শারীরিক প্রতিবন্ধী গোপীর
Published: 24th, February 2025 GMT
জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া বাজার। বাজারের দক্ষিণ পাশে মুলিয়া-বাহিরগ্রাম সড়কের পাশে ছোট একটি একচালা দোকান। ওপরে টিনের চালা, চারপাশে নেই কোনো বেড়া। সেখানে বসে নষ্ট হওয়া ইলেকট্রিক মালামাল মেরামত করেন প্রতিবন্ধী এক যুবক। নাম তাঁর গোপী বিশ্বাস (৩২)। তাঁর বাড়ি বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাজলা নদীর পশ্চিম তীরের পানতিতা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের নিতাই বিশ্বাস ও কল্পনা বিশ্বাস দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট।
জন্ম থেকেই একটি পা অচল গোপীর। চলাচল করতে হয় লাঠিতে ভর দিয়ে। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী হলেও ছোটবেলা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্থায়ী হতে পারেননি কোথাও। সবশেষে ইলেকট্রনিক মালামাল মেরামতকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে বর্তমানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ কাজে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না গোপীর। তাই পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন তিনি।
গত শুক্রবার বিকেলে গোপীর দোকানে বসে ঘণ্টাখানেক আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। এ সময় কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প বলেন তিনি। গোপী বলেন, ‘গরিব ঘরে জন্মাইছি। পড়াশোনা বেশি করতি পারিনি। যখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম, তহন থেকে স্কুলে পাশের এক দাদার দোকান থেকে টর্চলাইট, গ্যাস লাইটসহ বিভিন্ন জিনিস মেরামতের কাজ শিখতে থাকি। এর পর থেকে প্রায় ১৮ বছর ধরে এই মালামাল মেরামতের কাজ করি। মেরামতের কাজে আয় কম হওয়ায় মাঝে ভ্যান চালাইছি, চা বেচিছি। এমনকি ওয়েল্ডিংয়ের কাজও করিছি কিছুদিন। অনেকেই আমারে কাজে নিতে চাইত না। কারণ, অন্য সবার মতো তো আমি সব কাজ করতে পারি না।’
কেউ কাজে নিতে না চাইলেও জীবনযুদ্ধে থেমে থাকেননি জানিয়ে গোপী বলেন, ‘আমি বারবার চেষ্টা করিছি, যাতে কর্ম করে বাঁচতি পারি, কারও সাহায্য না নিতি হয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ওসব কাজে টিকতে পারিনি। এ কারণে ঘুরেফিরে আবার মেরামতের কাজে ফিরিছি। ১৫ বছরের মতো মুলিয়া বাজারে মাদুর পেতেই মেরামতের কাজ চালাইছি। গত তিন বছর হলো এই দোকানটায় বইছি। সারা দিন এখানে বসে টর্চলাইট, গ্যাস লাইট, এলইডি বাল্ব, স্প্রে মেশিন (কৃষিকাজে ব্যবহৃত), রাইস কুকারসহ বিভিন্ন জিনিস মেরামত করতেছি।’
দোকানে বসে লাইট মেরামত করছেন গোপী বিশ্বাস। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া বাজারে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র মত র ক জ
এছাড়াও পড়ুন:
হজ ফ্লাইট শুরু, মধ্য রাতে ঢাকা ছাড়লেন ৩৯৮ যাত্রী
চলতি বছরের হজযাত্রা শুরু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বাংলাদেশি হজযাত্রী বহনকারী প্রথম প্লেনটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সৌদি আরবের জাতীয় ক্যারিয়ার সাউদিয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে এ বছরের হজ ফ্লাইট। প্রথম ফ্লাইটে (এসভি ৩৮০৩) পবিত্র হজ পালনের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন ৩৯৮ জন হজযাত্রী।
হজ যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। এ বছর ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। এবারও ‘রোড টু মক্কা’ কর্মসূচির আওতায় ঢাকাতেই দুই দেশের ইমিগ্রেশন হবে যাত্রীদের।
আজ প্রথম দিনে মোট ১০টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ১৮০ জন হজযাত্রী সৌদি যাবেন। এর মধ্যে আটটি ফ্লাইট সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবং দুটি ফ্লাইট মদিনায় প্রিন্স মুহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পেই ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে যাওয়া যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। সৌদি আরব থেকে আসা ইমিগ্রেশনের ৭৫ সদস্যদের একটি দল শাহজালাল বিমানবন্দরে বসে সে দেশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবে। এতে হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। আর ফেরার সময় হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন সৌদি আরবেই করতে হবে। আর সিলেট ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট দিয়ে গমনকারী যাত্রীদের সৌদি আরবের আগমনী ইমিগ্রেশন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে হজ ফ্লাইট-২০২৫ উদ্বোধন করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ সময় তিনি হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। উপদেষ্টা হজযাত্রীদের সৌদি আরবের আইনকানুন মেনে চলা এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। খালিদ হোসেন বলেন, এ দেশের হজযাত্রীরা যাতে যৌক্তিক খরচে হজ পালন করতে পারেন সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি।
এ বছর তিনটি এয়ারলাইন্স ২৩২টি প্রাক-হজ ফ্লাইটের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহন করবে। বাংলাদেশ বিমান ১১৮টি প্রাক-হজ ফ্লাইটে ৪৪ হাজার ৩০৭ জন, সাউদিয়া ৮০টি ফ্লাইটে ৩২ হাজার ৭৪০ জন ও ফ্লাইনাস ৩৪টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৬৫ জন হজযাত্রী পরিবহন করবে। ৩১ মে প্রাক-হজ ফ্লাইট শেষ হবে। হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজযাত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন সরকারি মাধ্যমে এবং বেসরকারি মাধ্যমে ৮১ হাজার ৯০০ জন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৫ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, এ বছর হজযাত্রীদের জন্য যোগাযোগ সুবিধাসহ বিভিন্ন দরকারি ফিচার সম্বলিত একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল সিম রোমিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।