শিক্ষার্থীদের আর কত অপেক্ষা করতে হবে
Published: 24th, February 2025 GMT
শিক্ষাবছরের প্রায় দুই মাস পার হতে চললেও সরকার বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। অন্যদিকে ‘মূল্য’ দিয়ে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই কেনা যাচ্ছে বাংলাবাজার, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন বাজারে। কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে পাঠ্যবইয়ের কালোবাজারি রহিত করা যায়নি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য বলছে, প্রায় সাত কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের। শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই দেরি দুই মাস পেরিয়ে তৃতীয় মাসে গিয়ে পড়তে যাচ্ছে।
এনসিটিবির সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই ছাপানোর আয়োজন করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা জানানো হয়েছে। নতুন করে হিসাব করে দেখা যায়, মোট বই ছাপতে হবে আসলে ৩৯ কোটি ৬০ লাখের মতো। এর মধ্যে ৭ কোটি ছাপা হওয়া বাকি। মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বই প্রয়োজন প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকে ১১ কোটি ৭৫ লাখের মতো পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করা হয়নি। প্রাথমিকের প্রায় ৫৪ লাখ বই সরবরাহ বাকি আছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করা হবে। সেই সময় অনেক আগেই চলে গেছে। এখন এনসিটিবি মনে করে, চলতি মাসের শেষ নাগাদ যেসব পাঠ্যবইয়ের পরীক্ষা হয়, সেগুলো পাওয়া যাবে। যদিও পাঠ্যবই মুদ্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, ফেব্রুয়ারি শেষ হতে মাত্র ৪ দিন বাকি। এর মধ্যে বাকি বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এরপর রোজা ও ঈদের ছুটি। পাঠ্যবই পেতে শিক্ষার্থীদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?
প্রায় প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের সময়মতো বই পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। কিন্তু এবারের সমস্যাটি অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের বই পেতে যদি মার্চ মাস লেগে যায়, তাদের হাতে সময় থাকবে মাত্র ৯ মাস। চলতি বছর কিছু বই পরিমার্জন করতে হবে, সেটা নিশ্চয়ই এনসিটিবির অজানা ছিল না। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। এরপরও প্রায় পাঁচ মাস এনসিটিবি সময় পেয়েছে। কিন্তু তারা কাজটি ঠিকমতো করেনি। এর পেছনে কাদের কারসাজি ও গাফিলতি ছিল, খুঁজে বের করা হোক।
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বই পাচ্ছে না, কিন্তু তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলে পুরো সেট কিনতে পাওয়া যায় বাংলাবাজার, নীলক্ষেতে। এর ব্যাখ্যা কী? অভিযোগ আছে, বই ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও কারও সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কালোবাজারে বিনা মূল্যের বই বিক্রি করেন। বিনা মূল্যের বই বিতরণ দেরি হওয়ার কারণেই মূলত এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং পাঠ্যবই কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ঠ যবই এনস ট ব সরবর হ বই ছ প
এছাড়াও পড়ুন:
চাল সংগ্রহে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে খাদ্য অধিদপ্তর
চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহের ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে খাদ্য অধিদপ্তর। এ জন্য ব্যর্থ কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে। এর বাইরেও চাল সরবরাহে ব্যর্থ মিলারদের বিরুদ্ধে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে সাড়ে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে তিন লাখ ৮৭ হাজার টন সেদ্ধ চাল এবং ৭১ হাজার ৯৬৫ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
আমন সংগ্রহ অভিযান সফল করতে সব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি), কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের মজুতের বড় একটি অংশ আসে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান ও চাল কেনার মাধ্যমে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে সেদ্ধ চাল কেনা শুরু হয়েছে, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। এছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে আতপ চাল।
তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় তা কিনতে পারছে না।
চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে চুক্তি না করা এবং চুক্তি করে চাল সরবরাহ না করা মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে এর আগেও চিঠি পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
বিএইচ