Prothomalo:
2025-02-24@06:09:09 GMT

অবকাঠামোয় বিশেষ বরাদ্দ দিন

Published: 24th, February 2025 GMT

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো পূর্ণতা পায়নি। শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকের সংকট, আবাসন সমস্যা, ল্যাব ও গ্রন্থাগারের অপ্রতুলতা এবং গবেষণার অভাব—এসব সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।

বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের খোলা মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে, যা শিক্ষার পরিবেশ ও মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ছাড়া সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হলো অবকাঠামোগত সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি বিভাগের জন্য মাত্র ৩৬টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ৭৫টি। এ ছাড়া শিক্ষকসংকটও একটি বড় সমস্যা। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৬৭ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার মধ্যে অনেকে শিক্ষাছুটিতে আছেন।

ফলে পাঠদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ল্যাব, গ্রন্থাগার ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধার অভাবও শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করছে। প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম একটি গুচ্ছ ভবনে চলছে। এটি কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে। ক্লাস কম হওয়ায় সিলেবাস ঠিকমতো শেষ করা যায় না, ফলে সেশনজট বাড়ছে। এ ছাড়া গবেষণার সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এসব সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, সেশনজট নিরসন, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ জরুরি। সেশনজট কমাতে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লাসের সময়সূচি আরও নমনীয় ও কার্যকর করা দরকার।

এসব লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড, ল্যাব–সুবিধা ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা উন্নয়ন সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ইতিমধ্যে সংকট নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সমস্যা তুলে ধরেছেন এবং প্রকল্প অনুমোদনের চেষ্টা করছেন। তবে শুধু উপাচার্যের একার প্রচেষ্টায় এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষসংকট, বাড়ছে সেশনজট

কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে তোলা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ৭৫টি কক্ষ প্রয়োজন; কিন্তু আছে মাত্র ৩৬টি। কক্ষসংকটের কারণে অনেক সময় খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকসংকটের কারণে অধিকাংশ বিভাগে সেশনজট বাড়ছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ১৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। নানা সংকটের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আবাসন, পাঠদান কক্ষ, শিক্ষক, পরিবহন ও গ্রন্থাগারে বইয়ের সংকট প্রকট। এর মধ্যে বেশি ভোগাচ্ছে পাঠদান কক্ষসংকট।

অবকাঠামোগত সংকটে শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একটি গুচ্ছ ভবনেই চলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম। শিক্ষকদের অফিসকক্ষ, ল্যাব ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরের কক্ষসংকট থাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার দশায় আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থী নাবিলা জান্নাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের পাঁচটি ব্যাচে এখন ৪৫০ শিক্ষার্থী আছে। এ জন্য মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ আছে। আরেকটি কক্ষ আছে, অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। যখন আমরা ওই কক্ষে ক্লাস করতে যাই তখন দেখা যায়, সেখানে অন্যদের পাঠদান চলছে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ ছাড়া কক্ষসংকটের কারণে আমাদের ক্লাস কম হয়। শিক্ষকেরা আন্তরিক থাকলেও তাঁরা পাঠদান করাতে পারেন না। এতে সিলেবাস এগোয় না। এরই মধ্যে আমরা এক বছরের সেশনজটের কবলে পড়ে গেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্তমানে ১৬৭ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রায় ১৫০টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। এর মধ্যে আবার অনেকে শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ফলে পাঠদান চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৩৬টি শ্রেণিকক্ষ আছে বলে জানান সহকারী রেজিস্ট্রার (সম্পত্তি শাখা) মো. সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, দুটি একাডেমিক ভবনে ২৮টি এবং প্রশাসনিক ভবনে ৮টি শ্রেণিকক্ষ আছে। একইভাবে ল্যাবেরও সংকট আছে। ল্যাবের জন্য কক্ষ আছে ৩২টি। এ ছাড়া আলাদা করে শিক্ষকদের বসার জন্য কক্ষসংকট তো আছেই। বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকদের অফিস মিলিয়ে ৬৮টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষে তিন–চারজন শিক্ষক গাদাগাদি করে বসেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, অধিকাংশ বিভাগে বর্তমানে সাতটি ব্যাচ আছে। এর বিপরীতে পাঠদান করান গড়ে ৫ জন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষসংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় সেশনজট বাড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় পড়াশোনার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কিছু শিক্ষক নিজেদের উদ্যাগে গবেষণা করেন। গবেষণা খাতে বরাদ্দও অপ্রতুল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন বলেন, ‘গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোনো কাজই হয়নি। আমি এসেছি অল্প কয়েক দিন হলো। এসেই দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সংকট আছে। এসব সংকট মোকাবিলায় প্রকল্প অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমি নিজেই মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে এসেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষসংকট, বাড়ছে সেশনজট