Prothomalo:
2025-04-17@16:42:29 GMT

অবকাঠামোয় বিশেষ বরাদ্দ দিন

Published: 24th, February 2025 GMT

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো পূর্ণতা পায়নি। শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকের সংকট, আবাসন সমস্যা, ল্যাব ও গ্রন্থাগারের অপ্রতুলতা এবং গবেষণার অভাব—এসব সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।

বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের খোলা মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে, যা শিক্ষার পরিবেশ ও মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ছাড়া সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হলো অবকাঠামোগত সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি বিভাগের জন্য মাত্র ৩৬টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ৭৫টি। এ ছাড়া শিক্ষকসংকটও একটি বড় সমস্যা। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৬৭ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার মধ্যে অনেকে শিক্ষাছুটিতে আছেন।

ফলে পাঠদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ল্যাব, গ্রন্থাগার ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধার অভাবও শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করছে। প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম একটি গুচ্ছ ভবনে চলছে। এটি কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে। ক্লাস কম হওয়ায় সিলেবাস ঠিকমতো শেষ করা যায় না, ফলে সেশনজট বাড়ছে। এ ছাড়া গবেষণার সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এসব সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, সেশনজট নিরসন, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ জরুরি। সেশনজট কমাতে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লাসের সময়সূচি আরও নমনীয় ও কার্যকর করা দরকার।

এসব লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড, ল্যাব–সুবিধা ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা উন্নয়ন সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ইতিমধ্যে সংকট নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সমস্যা তুলে ধরেছেন এবং প্রকল্প অনুমোদনের চেষ্টা করছেন। তবে শুধু উপাচার্যের একার প্রচেষ্টায় এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট

উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাস। উপাচার্যকে অপসারণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে গত প্রায় ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ছে সেশনজট। 

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে জড়ো হন একশ’র মতো শিক্ষার্থী। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের সময় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার তারা তালা ভেঙে ৬টি হলে উঠলেও কর্তৃপক্ষ খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়নি। ২ মাস হল বন্ধ থাকায় ধুলাবালি জমেছে। এর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

মিছিল শেষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে উপাচার্যকে অপসারণ, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। যদি এটা করা না হয় তাহলে আমাদের ‘নতুন জুলাই’ হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের এই যুদ্ধ হবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নজরুলের বিরুদ্ধে, যেসব ছাত্র উপদেষ্টা আমাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে ক্ষমতায় বসেছে তাদের বিরুদ্ধে। 

এদিকে ‘কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক উপাচার্যকে হয়রানি ও তাকে অপসারণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি দুর্বার বাংলা চত্বরে গিয়ে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মানববন্ধনে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।  

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি। 
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের ১ দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাব না। 

সেকশন অফিসার ইমদাদুল বলেন, উপাচার্যকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার সামনেই মারধর করা হয়। ছাত্ররা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, এই রকম গালিগালাজ আমার জীবনে আমি শুনিনি। স্যারকে রক্ষা করতে গেলে আমাকেও মারধর করে।  

কুয়েটের কর্মচারী ইমদাদ মোড়ল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবি মানতে রাজি না। কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল এবং তার গায়ে থু থু দিয়েছিল। এখন তাকে অপসারণের টার্গেট নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। 

এ দিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট। আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩/৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।

২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। এরপর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে কুয়েটের আবাসিক হল ও একাডেমিক কার্যক্রম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যতিক্রমী একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেশনজট মুক্ত খুবি
  • পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট