জার্মানিতে নির্বাচনে এগিয়ে ডানপন্থি সিডিইউ
Published: 24th, February 2025 GMT
জার্মানিতে দেশটির ২১তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোজোনের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির নেতৃত্ব কারা দেবে, তা নির্ধারণ করতে আগাম এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জার্মানির প্রায় ৫৯ মিলিয়ন ভোটার। নির্বাচনে ৬৩০টি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৯টি দলের মোট ৪ হাজার ৫০৬ জন প্রার্থী। দেশটির এ নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। খবর ডয়েচে ভেলে, আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসির
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন সিডিইউ। চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পথে আছেন দলটির নেতা ফ্রিডরিখ ম্যার্জ। হিটলারের পতনের পর প্রথমবারের মতো চরম ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (এএফডি) দেশটির প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান পেতে পারে; যা ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে জনমত জরিপ বলছে, এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে না কোনো দলই। তাই সরকার গঠনে করতে হবে জোট। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, জোট গঠনে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। এতে ইউরোপে সৃষ্টি হতে পারে রাজনৈতিক শূন্যতা।
দেশটিতে এমন এক সময়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। এ ছাড়া একের পর এক মর্মান্তিক হামলার কারণে দেশটিতে অভিবাসন ও নিরাপত্তা ইস্যু ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। জয়ী হলে আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের অধিকাংশ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যার্জ। তবে তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও অবকাঠামোর দুর্বলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচনের আগের দিন প্রযুক্তি ধনকুবের ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে কট্টরবাদী দল এএফডিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দলটির নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও শেয়ার করে বলেন, একমাত্র এএফডিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে। তবে জার্মানির অন্যান্য দলের নেতারা মাস্কের এই কর্মকাণ্ডকে নির্বাচন প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জার্মানির উগ্র ডানপন্থী দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী ভাইডেল চীনা ভাষায় অনর্গল কথা বলেন
জার্মানির রাজনৈতিক দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সহনেতা অ্যালিস ভাইডেল বিভিন্ন কারণেই ব্যতিক্রমী একজন ব্যক্তি। একদিকে তাঁর উগ্র ডানপন্থী দলে রয়েছে পুরুষের আধিপত্য। অন্যদিকে, অভিবাসনবিরোধী দলটি নিজেকে প্রথাগত পারিবারিক মূল্যবোধ ও সাধারণ মানুষের রক্ষাকর্তা হিসেবে তুলে ধরে থাকে। তবে আপাতদৃষ্টিতে ভাইডেলের সঙ্গে এসব সাংঘর্ষিক।
৪৬ বছর বয়সী ভাইডেলের জীবনসঙ্গী শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণকারী এক নারী। তাঁরা দত্তক নেওয়া দুই সন্তানকে একসঙ্গে লালন-পালন করছেন।
ভাইডেলের চলচ্চিত্রকার হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করেছেন চীনে। ইংরেজি ও মান্দারিন ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন তিনি।
ভাইডেলের জন্ম পশ্চিম জার্মানিতে। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বাধীন এএফডি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সাবেক পূর্ব জার্মানিতে, যা সাবেক কমিউনিস্ট জার্মানি হিসেবেও পরিচিত। রাজনীতি শুরুর আগে ভাইডেল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস ও জার্মানির অ্যালিয়ানজ গ্লোবাল ইনভেস্টরসে চাকরি করেছেন। তা ছাড়া কিছুদিন ফ্রিল্যান্স বাণিজ্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
ব্যতিক্রমী কর্মজীবনের কারণেই ভাইডেল এএফডির জন্য ‘সম্পদে’ পরিণত হয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, জার্মানির কর্তৃপক্ষগুলো এএফডিকে গণতন্ত্রবিরোধী মনে করে। কিন্তু ভাইডেলের উদার মনোভাবের কারণে দলটি সমাজের বহু মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে।
ভাইডেলকে প্রায় সময় কালো স্যুট, সাদা শার্ট ও গলায় মুক্তার মালা পরতে দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের কিছু সহকর্মীর চেয়ে নানা বিষয়ে তিনি বেশি দক্ষ। তবে সমালোচকেরা তাঁকে ভয়ানক সুবিধাবাদী ও ‘ভালো মানুষের মুখোশধারী’ বলে মনে করেন।
এএফডি বেশি পুরোনো দল নয়। ১২ বছর আগে যাত্রা শুরু করা দলটি জার্মানির আজ রোববারের নির্বাচনে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি এ আশঙ্কাও করা হচ্ছে দলটি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির শাসনব্যবস্থাকে জটিল করে তুলতে পারে।
জার্মানির বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অলিভার লেম্বকে বলেন, ‘ভাইডেল এমন এক ব্যক্তি, যিনি এএফডির প্রথাগত রাজনৈতিক এলাকার বাইরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণির কাছে আবেদন তৈরি করতে পারেন। [দলটির] উন্মাদ ও চরমপন্থীদের আখড়ায় শুধু তাঁকেই পরিপক্ব বলে মনে হয়।’
এএফডির এ নেতার আমলে গত কয়েক বছরে দলটির সমর্থক বেড়েছে। এ সময় মূলত অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ও চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের ভঙ্গুর জোটের কার্যক্রমে সৃষ্ট হতাশা থেকে লাভবান হয়েছে দলটি। শলৎজের নেতৃত্বাধীন জোট গত নভেম্বরে ভেঙে গেছে।
জার্মানিতে সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ক্ষোভ উসকে দিয়েছেন ভাইডেল। সহিংসতার ঘটনায় একাধিক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজকের নির্বাচন নিয়ে চালানো কিছু জরিপে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ সমর্থন রয়েছে রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ)। ২১ শতাংশ নিয়ে এরপরই রয়েছে এএফডি। ১৬ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে শলৎজের নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।
এএফডি এবারের আগে কখনো চ্যান্সেলর প্রার্থী দেয়নি। ভাইডেল এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন যে এখনই তাঁর দলের সরকারের শরিক হওয়ার তেমন একটা সম্ভাবনা নেই। তাঁর এ মন্তব্যের কারণে অন্যান্য দলগুলো এএফডির সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে এএফডিকে ঘিরে একধরনের সহযোগিতা না করার মনোভাব গড়ে উঠেছে।
এসপিডি প্রধান ওলাফ শলৎজের (বাঁয়ে) নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার ও এএফডি প্রধান অ্যালিস ভাইডেলের নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার। জার্মানির হামবুর্গে, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫