কিছুদিন আগেও শোনা যেত, তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি বোঝে না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। বইমেলায় কোন বই বেশি চলছে? গতকাল রোববার ২৩তম দিনে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন এই প্রতিবেদক। লেখক, পাঠক ও বিক্রয়কর্মীরা যে উত্তর দিয়েছেন, তাতে এগিয়ে রয়েছে রাজনীতি। কারণ, চলতি বইমেলায় যেসব গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই ছাপা হয়েছে, এর বড় অংশ রাজনীতিকেন্দ্রিক।
শোভা প্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি মেহেরুন্নেসা জানান, এবার তাদের স্টল থেকে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হচ্ছে রাজনীতি ও সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা বইগুলো। তিনি বলেন, ‘পাঠকদের মাঝে রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহ প্রবল। ফলে তারা বইগুলো কিনছেন ও সেগুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপক সম্রাট খান লিয়ন জানান, চিরায়ত বইয়ের পাশাপাশি উপন্যাস, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাসের বই কিনছেন পাঠকরা।
বেঙ্গল বুকসের স্টলের হিসাব ব্যবস্থাপক তৌফিক হাসান জানান, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অনুবাদগ্রন্থ।
স্বাস্থ্যবিষয়ক বই বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশনসের বিক্রয়কর্মী আবদুল্লাহ আল ইমরান।
স্টুডেন্ট ওয়েজের বিক্রয়কর্মী আবরার হারুণ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ও আহমদ ছফার বইগুলো বাছাই করতে হয় না পাঠকদের। দেখেই নিয়ে নেন।
হকারে অতিষ্ঠ
দিন যত এগোচ্ছে, ততই যেন চুড়ি, টিপ, খাবার, ফুলের হকারদের দৌরাত্ম্য মেলায় বাড়ছে। বিশেষত টিএসসির মেলা প্রাঙ্গণের গেট দিয়ে প্রবেশ করলে তাই মনে হয়। ভিন্ন ভিন্ন খাবারের স্টলে হঠাৎ মনে হয়, এটা বাণিজ্য মেলা। কালীমন্দিরের গেটের পাশে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢুকতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ খাবারের ভ্যানগুলোর কারণে বেগ পেতে হয়। আর পুলিশ পাহারা থাকা সত্ত্বেও মেলার ভেতরে প্রচুর সংখ্যক হকার দেখা যায়।
টিএসসির গেটে বিকেল ৫টার দিকে এক শিশু মেলায় প্রবেশের সময় তার বাবাকে প্রশ্ন করে, ‘বই কোথায়? এখানে তো সব খাবার!’
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মনিরুল ইসলাম শ্রাবণের ছোট নদী ছোট ঢেউ (জ্ঞানজ্যোতি), সিদ্দিক মাহমুদুর রহমানের দি বার্ডস অ্যান্ড দি লিটল ফটোগ্রাফার (দ্বীপজ), মোজাম্মেল হক নিয়োগীর রক্তপ্রেমের গোধূলি (ভাবনা), সৈয়দ নাজমুল হাসানের ইচ্ছে ঘুড়ি (মুক্তপ্রকাশ) ও শেলী সেলিনার বই পড়ুয়া ভূত (জনতা)।
মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা: প্রিভিলেজের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। রেহনুমা আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন শাওলী মাহবুব।
তাসলিমা বলেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নারীদের আমরা দেখেছি মিছিলের সম্মুখভাগে মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে স্লোগানে সামিল হতে। কিন্তু আন্দোলন সফল হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসহ নানা পর্যায়ে নারীদের অনুপস্থিতি আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে। বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।’
লেখক বলছি মঞ্চে আলোচনা করেন ড.
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কাজী আনারকলি, মামুন সারওয়ার, আফসার নিজাম, তাসনীম মাহমুদ প্রমুখ।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মো. মাহাবুবুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন, সরকার আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল ল ইসল ম র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনা হাসপাতালে গিয়ে বলেছিলেন ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’: চিফ প্রসিকিউটর
পতনের কিছুদিন আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলির কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদের জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।’’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যে সন্তানেরা শহীদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেওয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি। এমনকি, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন, তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে—এই কথাটিও লিখতে দেওয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে—এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা–আক্রমণ করেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই? আমরা আদালতকে জানিয়েছি, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে, কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল!’’
শেখ হাসিনার এমন নির্মমতার প্রমাণগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই–বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ