এস আলম ও তাঁর ছেলেসহ ৩০ ব্যাংক কর্মকর্তাকে দুদকের তলব
Published: 23rd, February 2025 GMT
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), তাঁর ছেলে আহসানুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ২৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মার্চ মাসের বিভিন্ন তারিখে তাঁদের রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের তলব করা হয়।
আজ রোববার দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের তলব করা হয়। এতে বলা হয়, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আহূত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএনসহ প্রয়োজনীয় রেকর্ড সঙ্গে আনতে হবে।
এর আগে এস আলমের ছেলে এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ব্যাংকটির ১২ শীর্ষ কর্মকর্তাকে তলব করে ১৭ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছিল দুদক। এবারের চিঠিতে এস আলমের সঙ্গে তাঁর ছেলে আহসানুল আলমকে আগামী ৫ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে ৬ মার্চ হাজির হতে তলব করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এসভিপি ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখাপ্রধান মোহাম্মদ কাইসার আলী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন খান, সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো.
৯ মার্চ তলব করা হয়েছে ব্যাংকটির সাবেক সদস্য আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ আলী, মো. শফিকুর রহমান, মো. নাজিবুর রহমান, মো. শামসুজ্জামান, মো. আব্দুস সাদেক ভূঁইয়া ও রাফি আহমেদ বেগকে।
১০ মার্চ তলব করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মো. মাহবুব-উল-আলম, ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সাবেক পর্যবেক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম মো. ইস্কান্দার মিয়া, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, হুমায়ুন বখতিয়ার ও মো. আবদুস সালামকে।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এইচ জি মহিউদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. ইস্কান্দার আলী খান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এন আর এম বোরহান, পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার, সাবেক মেম্বার সেক্রেটারি আবু বকর রফিক ও সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ আবুল বাশারকে ১১ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ।
আরও পড়ুনএবার এস আলম ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন এস আলম ইসল ম ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
নর্ববষের প্রথম প্রহরে ঘর আলো করে আসা ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে চান রাকিবুল
‘বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে আমাদের পরিবারে এসেছে স্বর্গীয় অতিথি, আসমানি পরী। এতে পহেলা বৈশাখের আনন্দে ভিন্ন মাত্র যুক্ত করেছে। সদ্য ভূমিষ্ঠ দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনের মাঝে বাসা বেঁধেছে নতুন স্বপ্নের। স্বল্প আয়ের সংসারে যত সংকট আসুক না কেনো ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাবো।’
সোমবার পহেলা বৈশাখের দিনে মিরপুর-১ নম্বরে অবস্থিত মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার স্বাভাবকি প্রসব রুমের সামনে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সমকালের সঙ্গে এসব কথা বলেন বাবা রাকিবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অর্থ সংকটে নিজে পাড়াশোনায় ঠিকভাবে এগোতে পারেনি। তবে সন্তানকে সেই সংকট দেখতে হবে না। নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছোট সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চাই। সন্তান চিকিৎসক হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূ্ল্যে সেবা করবে, এটা আমার স্বপ্ন। সে গর্ভে আসার আগে থেকে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আশা করি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমার দুই সন্তানকে সুস্থ রাখুক। আর কোনো সন্তান নিতে চাই না। আমরা এই দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।’
সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় ২নং শয্যায় শুয়ে রয়েছেন রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তার পাশে রয়েছে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান। সাদা দুধের মতো গায়ের রং। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয়েছে। বাবা রাকিবুল ইসমালের বড় ভাই রাজীব আহমেদ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু নাম জেবিন তাবাসসুম রেখেছে। তাবাসসুমের বাবা বলেন, সন্তান গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও গর্ভের সন্তান যাতে সুস্থ এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়েছি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। নয় মাসে এই হাসপাতালের তিন বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। সব পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। কোনো জটিলতা ছিল না।
গত রোববার বিকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ভর্তি হয় জেসমিন আক্তার। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে সন্তান হওয়ার কথা ছিল। রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চিকিৎসকরাও আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সকাল সাড়ে সাতটায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। আমিনবাজার থেকে ইজিবাইকে করে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে আসতে পেরেছি। নিজের ইজিবাইক থাকার কারণে যাতায়াতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত সাত বছর ধরে ঢাকাতে থাকি। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসা। ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। অল্প পড়াশোনা করার কারণে কোনো চাকরি হয়নি। ২০২২ সালে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। নিজে এখন ইজিবাইক চালাই। আমাদের প্রথম সন্তানের বয়স দেড় বছর। তার নাম রাবেয়া খাতুন। দ্বিতীয় সন্তান বৈশাখের প্রথম দিনে হবে এমন ধারণ বা কল্পনাও ছিল না। তবে বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে সন্তান হওয়ার কারণে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকেরা এসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নার্স ও চিকিৎসকরা মা ও শিশুর আলাদা যত্ন নিয়েছেন। আর আমার বাবা নাতিনের জন্য নতুন জমা উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। যদিও এখনও পরানো হয়নি। বাচ্চা হওয়ার পর বাজার থেকে নতুন তোয়ালে কেনা হয়েছে। এটি দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। এখন শিশুটি সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, শুধু ক্ষুধা লাগলে কান্না করে। মায়ের দুধই তার একমাত্র খাবার।
রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার গৃহিণী। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন। জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ভোলা। তিনি পড়াশোনা করেননি। জেসমিন সংসার সামলায় আর রাকিবুলের সময় কাটে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। শুধু রাতে স্বামী স্ত্রীর দেখা হয়। বাচ্চা দেখভাল করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন জেসমিনের মা-বাবা।
জেসমিন আক্তার বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম নেওয়াতে আলাদা আনন্দ আছে। তবে সুস্থ বাচ্চা পৃথীবিতে এসেছে, এটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। প্রথম সন্তানটিও এই হাসপাতাল থেকে প্রসব করা।
জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. ইকবার কবীর বলেন, নবজাতকের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। সাধারণত নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি হলে স্বাভাবিক ওজন ধরা হয়। তবুও আমরা এরইমধ্যে কিছু মৌলিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। অন্য কোনো জটিলতাও নেই। নবজাতক যদি সঠিকভাবে খেতে পারে তাহলে রক্ত পরীক্ষা লাগে না। স্বাভাবিক প্রসবের পর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার জেসমিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।