এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), তাঁর ছেলে আহসানুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ২৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মার্চ মাসের বিভিন্ন তারিখে তাঁদের রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের তলব করা হয়।

আজ রোববার দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের তলব করা হয়। এতে বলা হয়, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আহূত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএনসহ প্রয়োজনীয় রেকর্ড সঙ্গে আনতে হবে।

এর আগে এস আলমের ছেলে এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ব্যাংকটির ১২ শীর্ষ কর্মকর্তাকে তলব করে ১৭ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছিল দুদক। এবারের চিঠিতে এস আলমের সঙ্গে তাঁর ছেলে আহসানুল আলমকে আগামী ৫ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে ৬ মার্চ হাজির হতে তলব করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এসভিপি ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখাপ্রধান মোহাম্মদ কাইসার আলী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন খান, সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো.

মিজানুর রহমান, মো. সোহরাব হোসেন, সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোহন মিয়া, সাবেক ইভিপি মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহকে।

৯ মার্চ তলব করা হয়েছে ব্যাংকটির সাবেক সদস্য আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ আলী, মো. শফিকুর রহমান, মো. নাজিবুর রহমান, মো. শামসুজ্জামান, মো. আব্দুস সাদেক ভূঁইয়া ও রাফি আহমেদ বেগকে।

১০ মার্চ তলব করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মো. মাহবুব-উল-আলম, ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সাবেক পর্যবেক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম মো. ইস্কান্দার মিয়া, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, হুমায়ুন বখতিয়ার ও মো. আবদুস সালামকে।

এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এইচ জি মহিউদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. ইস্কান্দার আলী খান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এন আর এম বোরহান, পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার, সাবেক মেম্বার সেক্রেটারি আবু বকর রফিক ও সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ আবুল বাশারকে ১১ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ।

আরও পড়ুনএবার এস আলম ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন এস আলম ইসল ম ল আলম

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।

অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ