ভারত শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিয়ে স্বার্থ আদায় করেছে
Published: 23rd, February 2025 GMT
বিগত সময়ে ভারত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে। বাংলাদেশকে ভারতীয় আধিপত্য থেকে বের হয়ে আসতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চালু রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনকেও ঢেলে সাজাতে হবে নিরপেক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রসঙ্গ ভারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ‘ন্যারেটিভ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসির (আইআইএলডি) পরিচালক শফিউল আলম শাহীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারত বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পরিবর্তে দল কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে; যে কারণে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত সংখ্যালঘু কার্ড খেলে তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে।
ভারতকে দল কিংবা ব্যক্তিভিত্তিক সম্পর্ক তৈরির নীতি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হতে আহ্বান জানান শফিউল আলম শাহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নীতি কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মূল চিন্তার কারণ হচ্ছে তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা।
ভারতের কেমন বাংলাদেশ নীতি হওয়া উচিত, সে বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন দেশ সম্ভব হয়েছিল শুধু বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে। অন্য কোনো কারণে নয়। এটা ভারতকে অসাধারণ সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছিল, তবে তারা সেটা হারিয়েছে। [ভারতের নদীর] পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্তে হত্যাসহ নানান উদাসীনতা ছিল। তবে সেটি গত ১৬ বছরে নতুন মাত্রা যোগ করে। যার কারণে বাংলাদেশের মানুষকে ভারত স্থায়ীভাবে হারিয়েছে। তবে সেটা কবে ফিরে পাবে, ঠিক নেই।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুস্তাইন জহির বলেন, জুলাই-পরবর্তী নতুন প্রজন্মের ভারতবিষয়ক অভিজ্ঞতা এবং একাত্তরের সময়ের প্রজন্মের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে নতুন প্রজন্মের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। এ প্রজন্মকে ভারতনীতির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক নায়েল রহমান বলেন, বাংলাদেশের ভারতনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ-উপযোগী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে হলে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থকে সমন্বয় করতে হবে।
আলোচনা সভা পরিচালনা নুসরাত তাসনিম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজন ম
এছাড়াও পড়ুন:
সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত
সংঘর্ষ ও খুনের পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট পৌরসভার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত বিএনপির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশেষ একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন এবং ১৫ জন গুরুতরভাবে জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিরসরাইয়ের জনগণের পাশে থাকার লক্ষ্যে অনুমোদিত তিন কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হলো।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বসে ঠিক করা হবে। কমিটি গঠনের পর হত্যাসহ নানা নৈরাজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ মার্চ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন ঘোষিত বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপির দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা শুরু হলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ফুল দিতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ মার্চ সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন বেলা ১১টায় মিছিল গণজমায়েত করে প্রশাসনের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে যান মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। এরপর উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষের সেই ঘটনায় বিএনপির আরও অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।