বান্দরবানের লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের করা মামলায় গ্রেপ্তার ম্রো নেতা রিংরঙ ম্রোর মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকার আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো। রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। 

সমাবেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি আধিপত্য বিস্তার করে ভূমি দখল করে রেখেছে। কাগজপত্র, ভূমি ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী তাদের এই দখল অবৈধ। ইজারা নেওয়ার পর থেকে ২৮ বছর তারা কোনো রাবার চাষ করেনি।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী, রাবার চাষের জন্য ভূমি ইজারা নেওয়ার পর ১০ বছর চাষ না হলে ইজারা বাতিল হবে। কিন্তু ২৮ বছর পার হয়ে গেলেও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির ইজারা বাতিল করা হয়নি।

রেং ইয়ং বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। রিংরঙ ম্রো ভূমি রক্ষার আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়ায় এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা খুবই ন্যক্কারজনক। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পুলিশের সাধারণ পোশাকে এ ধরনের গ্রেপ্তারের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, প্রশাসন কি রাবার ইন্ডাস্ট্রির কথায় ওঠেন-বসেন? রিংরঙ ম্রোর মিথ্যা মামলা যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে কেন গ্রেপ্তার করল? তাকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে এবং মামলা প্রত্যাহার না করলে, আমরা আন্দোলন করে যাব। এখনই সাবধান না হলে দেশব্যাপী পাহাড়ি জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ইন্ডাস্ট্রির সন্ত্রাসীরা ম্রোকে তুলে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সময়েও এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে দহরম-মহরম ছিল। এখনও তা বলবৎ আছে।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের সুফল কি কেবল বাঙালিরা পাবে? আমরা যারা পাহাড়ি তাদের জন্য কি এর সুফলের কোনো ভাগ থাকবে না? অবৈধ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমরা বুঝব শেখ হাসিনার চরিত্র আর এই সরকারের চরিত্রের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।’

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজকে ১৯৯৬ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাবার চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। লিজ নেওয়ার পর থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল, ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হুমকি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব র ইন ড স ট র ইন ড স ট র র ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবী (সা.)-এর শুভাগমন

আজ আমরা যে সমৃদ্ধ পৃথিবীকে দেখি, একটা সময় পৃথিবী এমন ছিল না। আজ শান্তি ও সৌহার্দ্যে জীবন যাপন করছে বিপুল মানুষ, শিক্ষা, গবেষণা ও নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা, জীবনকে আরও মধুর, মনোরম ও পরিশীলিত করতে উদ্‌গ্রীব উঠছি—একসময় এতটা সহিষ্ণু ছিল না পৃথিবী, অসভ্য কলহের হাতে জর্জরিত হয়েছে তখন বিশ্ব। মানবজাতি আত্মধ্বংসের দিকে ঝুঁকছিল এবং নিজেদের অপকর্মের কারণে টিকে থাকার সব অধিকার হারিয়েছিল। মানুষ তখন উন্মত্ত ও হিংস্র পশুর মতো আচরণ করেছিল। সব সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, শালীনতা, নৈতিকতা এবং নাগরিক আইনকানুন ভেসে গিয়েছিল বাতাসে। সে যুগকে বলা হতো বর্বরতার যুগ।

খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকে এই যুগের উদ্ভব হয়। ইতিহাসবিদ এইচ জি ওয়েলস বলেন, ‘এ সময় বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক দর্শনের যেন মরণ হয়েছিল। পৃথিবীতে মানুষ বলতে আর কিছু ছিল না’ (আ শর্ট হিস্টোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড, ১২৪)। রবার্ট ব্রিফল্ট বলেন, ‘বর্বরতার এমন আঁধার ছিল আদিম বন্যতার চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর ও বীভৎস’ (দ্য মেকিং অব দ্য হিউম্যানিটি, ১৬৪)। জে এইচ ডেনিসন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার বালাই ছিল না। নব্য অধিকর্তারা ঐক্য ও শৃঙ্খলার পরিবর্তে বিভাজন ও ধ্বংসের কাজে মগ্ন থাকেন’ (ইমোশন অ্যাজ দ্য বেসিস অব সিভিলাইজেশন, ২৬৫)।

ঠিক সেই সময় পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আরবে এমন এক ব্যক্তির জন্ম দেন, যিনি মানবজাতিকে শুধু ধ্বংসের কবল থেকে উদ্ধার করেননি, তাঁকে এমন সুউচ্চ মহিমায় উন্নীত করেছেন, যা ইতিহাসবিদদের জ্ঞান এবং কবিদের কল্পনারও অতীত। তাঁর কীর্তি ও কৃতিত্ব উপস্থাপন করার মতো অকাট্য ঐতিহাসিক প্রমাণ আজ যদি না থাকত, তাহলে বিশ্বাস করাই কঠিন হতো। তাই তিনি শুধু সমগ্র বিশ্বের জন্য রাসুল ছিলেন না, ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। (আল কোরআন, ৪:৭৯ ও ২১:১০৭)

আরও পড়ুনঅন্ধ যে সাহাবির জন্য নাজিল হলো আয়াত২৯ আগস্ট ২০২৩

তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ষষ্ঠ শতাব্দীতে। আরবে সে বছরকে বলা হতো হাতির বছর। সে বছর ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র মক্কা নগরীতে আমিনা বিনতে ওয়াহাবের গর্ভে বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। নবী–জীবনের প্রসিদ্ধ বর্ণনাগুলো ১২ তারিখ বলা হয়েছে। তবে মিসরের খ্যাতনামা গবেষক ও বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ পাশা ফালাকি জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গাণিতিক সূত্র ধরে দীর্ঘ গবেষণার পর এই বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন যে তার জন্ম ‘হস্তীর বছর’ রবিউল আউয়ালের ৯ তারিখে। ইংরেজি সাল মোতাবেক ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ বা ২২ এপ্রিল। খ্যাতিমান সিরাত গবেষক সাইয়েদ সুলাইমান নদভি ও সালমান মানসুরপুরিও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। (তারিখে খাযরাম, ১/৬২; রহমাতুল লিল আলামিন, ১/৩ ও ৩৯)

সেদিন ছিল সোমবার। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, ‘রাসুল (সা.) সোমবার জন্মগ্রহণ করেন, সোমবার নবুয়ত লাভ করেন, সোমবার ইন্তেকাল করেন, সোমবার মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, সোমবার মদিনায় পৌঁছান, সোমবার হাজারে আসওয়াদ উত্তোলন করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর–২৫০৬)

আরও পড়ুনসুরা হাশরের ২২থেকে ২৪ আয়াতের ফজিলত১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মহানবী (সা.)-এর আগমন ছিল যেন মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল। তিনি আরবের মক্কায় সন্তান ইসমাইলের সঙ্গে কাবা শরিফের নির্মাণ সম্পন্ন করে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের নিকট আপনার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করবে; তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবে আর তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (আল কোরআন ০২:১২৯)

মহানবী (সা.) হলেন শেষ নবী। তিনি এসেছেন নবী আগমনের ধারাবাহিকতায় ঈসা (আ.)-এর পর। ঈসা (আ.) নিজেও তাঁর উম্মতকে মহানবী (সা.) শুভাগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন, ‘আমি একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পর আসবেন, যাঁর নাম আহমদ’ (আল কোরআন ৬১:৬)। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবেও তাঁর আগমনবার্তা দেওয়া হয়েছে। (আল কোরআন ০৭:১৫৭)

তাঁর পিতা ছিলেন আবদুল্লাহ। দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন তৎকালীন পবিত্র কাবাঘরের তত্ত্বাবধায়ক। জন্মের আগেই পিতা মারা যান। মা আমিনা দাদা আবদুল মুত্তালিবকে তাঁর শুভাগমনের সুসংবাদ দিলে তিনি তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৫৮)। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় তাঁর নাম মুহাম্মদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (আল কোরআন, ৩: ১৪৪, ৩৩:৪০, ৪৭:২ ও ৪৮:২৯)

জন্মের পর তাঁকে প্রথম কোলে নেন আমিনার দাসী বারাকা, যিনি উম্মে আইমান নামে পরিচিতি ছিলেন। কয়েক দিন আবু লাহাবের দাসী সুওয়াইবার দুধ পানের পর সে সময়ের আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী হালিমা সাদিয়া তাঁর ধাত্রীমাতা নিযুক্ত হন, তখন নবীজির (সা.) বয়স মাত্র আট দিন। হালিমার কাছেই ছয় বছর বয়স পর্যন্ত থাকেন মুহাম্মদ (সা.)। (সিরাতে মুস্তফা, ১/৭৫)

আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর হাসি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মায়ের কোলে ফিরে ছয় বছর বয়সে পিতার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যান। সেখানে আমিনা তাঁর মায়ের বাড়িতে এক মাস অবস্থান করে ফেরার সময় আবওয়া নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয় (শারহুল মাওয়াহিব, ১/১৬০)। পরবর্তীকালে দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে লালিত–পালিত হতে থাকেন। আট বছর বয়সে তিনিও মারা গেলে চাচা আবু তালিবের নিকট তাঁর প্রতিপালনের ভার এসে পড়ে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ১/৭৬)।

নবীজির (সা.) প্রাথমিক জীবনের সেই এতিম, পথহারা ও নিঃস্ব অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে নবুয়তের পর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি কি তোমাকে এতিম অবস্থায় পাননি? অতঃপর তোমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আর তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথ না জানা অবস্থায়, অতঃপর তিনি পথনির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তোমাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর তিনি অভাব মুক্ত করেছেন।’ (আল কোরআন ৯৩: ৬-৮)

মহানবী (সা.) তাই জীবনভর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন। তাঁর জন্মতারিখের বিষয়টি যদিও হাদিসে কোথাও উল্লেখ নেই, কিন্তু সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করার শোকরের কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এদিন নিয়মিত রোজা রেখেছেন। আবু কাতাদা বলেন, ‘রাসুল (সা.)-কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই নবুয়ত লাভ করেছি।”’ (সহিহ মুসলিম, ২/৮৮৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের কর্ম আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই, এমন অবস্থায় আমার কর্ম উপস্থাপিত হোক, যখন আমি রোজা।’ (তিরমিজি, হাদিস ৭৪৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর কথা বলার ভঙ্গি০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ