Samakal:
2025-03-28@16:00:51 GMT

মধ্যম আয় ও ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশ

Published: 23rd, February 2025 GMT

মধ্যম আয় ও ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে। একসঙ্গে আটকে গেছে ঋণের ফাঁদেও। বিগত সরকারের সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে প্রচার ছিল, তা ফাঁপা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানের যথার্থতা প্রমাণ করা যায়নি। উচ্চ বেকারত্বই তার বড় প্রমাণ। 
ঢাকায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো: সংস্কার এজেন্ডা’ শিরোনামে এক অধিবেশনে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অধিবেশনটির সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.

সেলিম রায়হান। 

সমাপনী দিনে গতকাল চারটি কর্মঅধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের সম্মেলনে সব মিলে ছিল মোট ২৪টি কর্মঅধিবেশন। দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এতে। গত শুক্রবার  সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। 
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো-সংক্রান্ত এ কর্মঅধিবেশনে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। রপ্তানির অবস্থাও যে খুব ভালো, সে কথা বলা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধে বেশি ব্যয় হচ্ছে। রাজস্ব আয়ের তুলনায় স্থানীয় ঋণও বাড়ছে। 

তিনি বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশের আলোকে সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্য  তৈরি হবে কিনা–সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বাস্তবে তার প্রতিফলন ছিল না।  প্রবৃদ্ধি হলে কর্মসংস্থান বাড়ত। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়েনি। কিছু ক্ষেত্রে বরং কমেছে।  
আলোচনায়  গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও বলেন, দেশ মধ্যমে আয়ের দেশের পাশাপাশি ঋণের ফাঁদেও আটকে পড়েছে। বড় বড় প্রকল্পের রেয়াতকাল শেষ হচ্ছে। এখন সুদাসল পরিশোধের সময় এসেছে। 
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি)  কাতার থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবসায়ীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বাস্তবসম্মত হতে পারে না। নেপাল ও ভুটানের মতো দেশও এলডিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভর্তুকি থেকে উৎপাদন সক্ষমতার দিকে যেতে হবে। 

অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের  সভাপতি বিআইডিএস সাবেক মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ বলেন, কৃষিকে বাঁচাতে হবে। স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। নতুন জাত উদ্ভাবনে নজর দিতে হবে। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, স্বাস্থ্য খাত বরাবরের মতোই অবহেলিত। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ। এ হার করোনাকালেও বাড়েনি। দেশে মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় ৪২ ডলারেও কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে এটি ৮৮ ডলার হওয়ার কথা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। 

শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ
দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে  শ্রম-সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ড. সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, শ্রম আইন এবং নীতিমালা থেকে কেন সুবিধা পান না অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। ন্যায্য মজুরি কিংবা অন্যান্য মৌলিক অধিকার খর্ব হলেও আইনের আশ্রয় পান না এসব খাতের শ্রমিকরা। আবার প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জীবন ধারণের মতো ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ বাস্তবতায় শ্রম আইনের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।  
‘শ্রমবাজার অগ্রাধিকার নির্ধারণ’ বিষয়ক এই কর্মঅধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমু পোটিয়াইনেন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ানাতুল ইসলাম, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।
চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। 
সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। 
সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা। 
গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।
দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি। 
সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।
এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ