সড়ক হওয়ায় ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। এর পর আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সংস্কার বা মেরামতের। এ চিত্র বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধানডোবা এলাকার গ্রামীণ সড়কের।
জানা গেছে, ২০০২ সালে নীলখোলা বাসাইল ভায়া চেঙ্গুটিয়া সড়কের ধানডোবা গোমস্তা বাড়ির সামনে থেকে রামসিদ্দি বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কটি এলজিইডির রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-১৯ প্রকল্পের আওতায় পিচ-পাথর দিয়ে পাকা করা হয়। ধীরে ধীরে সড়কটির পিচ-পাথর উঠে যেতে শুরু করে। এতে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম কাজল জানান, এলাকাটি বিএনপি অধ্যুষিত। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গত ১৭ বছরে সড়কটি মেরামতের প্রয়োজন মনে করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ আগস্টের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ খান সরেজমিন সড়কটি দেখেছেন। বেহাল সড়ক দেখে তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।
একই এলাকার শফিকুল ইসলাম সিকদার, রজ্জব সরদার ও মাসুদ খান বলেন, পিচ-পাথর উঠে ইট বেরিয়ে গেছে। পুরো এলাকা লাল মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। পুরো সড়ক ভেঙেচুরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুর রহমান জানান, সড়কটি এলজিইডির আইডিভুক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে সড়ক এলজিইডির আইডিভুক্ত করতে উপজেলা পরিষদে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। মাসিক সমন্বয় সভায় প্রস্তাবটি পাস হলেই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাব।
বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, রাস্তাটির আইডি নম্বর নেই। নতুন আইডি নম্বর করার জন্য অনেক আগেই উপজেলা পরিষদে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন করে পাঠাতে হলে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উন্নয়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে জেলা পরিষদে পাঠানো হয়েছে। পরিষদের সভায় অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করে দ্রুতই সড়কটি মেরামতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫০০ মিটারের কাজ না করেই ঠিকাদার হাওয়া। এই ৫০০ মিটারই দুর্ভোগে ফেলেছে এলাকাবাসীকে। তারা ধুলায় একাকার হচ্ছেন। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া সড়কের চিত্র এটি। স্থানীয়রা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া সড়কটি পিরোজপুর, নাজিরপুর, টুঙ্গিপাড়া, জিয়ানগর ভাণ্ডারিয়া উপজেলা থেকে ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় যাতায়াতের সহজ পথ। এ সড়কের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাস ডিপো, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ উল্লেখযোগ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির টুঙ্গিপাড়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে চওড়া করার কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তার পরই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ফোরকান আলী বলেন, সড়কটির প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। কখনও কখনও যানজট, ধুলাবালির মধ্যে পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই তিনি দ্রুত এই আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক রইচ বিশ্বাস বলেন, সড়কের সব জায়গা ভালো। কিন্তু গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখানে ভ্যান চালাতে গেলে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে বয়স্ক যাত্রীর অসুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে ভ্যানের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের ৫০০ মিটার অংশটুকুর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সড়কটি খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু মাত্র আধা কিলোমিটারের কাজ বাকি রয়েছে। এই আধা কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় ধুলাবালি ওড়ে। এতে পথচারী ও ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ ছাড়া বাসের জানালা বন্ধ করতে হয়। কখনও কখনও যানজটে আটকা পড়তে হয়। আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল শেখ বলেন, যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাটগাতী হাটে পরিবহনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ওই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকার কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করার দাবি জানান তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ওই সড়কের ৫০০ মিটারের নির্মাণকাজের সব বাধা অপসারিত হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ফান্ড ছাড় করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।