দীর্ঘ ১৫ বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন কাল সোমবার
Published: 23rd, February 2025 GMT
খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল সোমবার ওই সম্মেলন করবে দলটি। নগরের ৫টি থানা কমিটির ৫০৫ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব।
সম্মেলন ঘিরে কাউন্সিলর ও দলীয় নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। মঞ্চ নির্মাণ, সাজসজ্জায় প্রস্তুতি একবারে শেষ পর্যায়ে। রাতে দলীয় কার্যালয় ও শিববাড়ী মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। এ ছাড়া প্রার্থীরা নিজেদের ছবিসংবলিত প্যানা ও প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেছেন। সম্মেলন সফল করতে কাজ করছে ২১টি উপকমিটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে এ সম্মেলন হবে। সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান অতিথি ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশেষ অতিথি করা হচ্ছে।
সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য একটি চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক করা হয়েছে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ হোসেন রনিকে। কমিশনের সদস্যরা হলেন রফিকুল হক, হালিমা আকতার খানম ও সাইদুর রহমান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ হোসেন রনি জানান, সম্মেলনে সভাপতি পদে তিনজন নেতা, সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছয়জন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম জহির ও সাহাজী কামাল টিপু। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন বর্তমান কমিটির সদস্যসচিব শফিকুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী। সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শের আলম, মাসুদ পারভেজ, মাহবুব হাসান পিয়ারু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম তারিক ও শেখ সাদী। তারিকুল ইসলাম ছাড়া বাকি সবাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। সম্মেলনের সব বিষয়ে মনিটরিং করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি এবং খুলনার সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দুই বছরের ওই কমিটির কার্যক্রম শেষ হয় ২০২১ সালে। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল ইসলাম তুহিনকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর পর থেকে খুলনা বিএনপিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যায়। একটা সময় দলের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যান নজরুল ইসলাম। খুলনা বিএনপির নতুন অভিভাবক হয়ে ওঠেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও আজিজুল বারী হেলাল।
সবশেষ আহ্বায়ক কমিটি গত তিন বছরে মহানগর বিএনপির সম্মেলন দিতে পারেনি। এ বিষয়ে নগর বিএনপির নেতারা জানান, একদিকে পতিত সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা অন্যদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস—এসবের মধ্যে ওই সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা কঠিন সময় পার করেছেন। দীর্ঘদিন নেতা–কর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। এর মধ্যেও নতুন কমিটির নেতারা ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছেন। সবশেষ গত ডিসেম্বরে পাঁচটি থানা বিএনপির সম্মেলন করা হয়েছে।
এদিকে সম্মেলন সফল করার জন্য আজ রোববার দুপুরে নগরের কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে মহানগর শাখা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনা বিএনপিতে এই প্রথমবার ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে। সম্মেলন ঘিরে নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত।
এই সময় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, সার্কিট হাউস মাঠে সোমবার সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হবে। দুপুর ১২টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের প্রথম পর্বের পর বেলা সাড়ে ৩টায় জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম ভবনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিলে ভোটার রয়েছেন ৫টি থানার ৫০৫ জন। ইতিমধ্যে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সম্মেলনে নগরের ৩১টি ওয়ার্ড বিএনপির ৪ হাজার ডেলিগেট থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজার করে নেতা–কর্মী উপস্থিত থাকবেন। কাউন্সিলর, আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মীর সমাগম হবে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব এনপ র স ক ল ইসল ম র সদস য কর ম র কম ট র কর ছ ন গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।
২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।