খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল সোমবার ওই সম্মেলন করবে দলটি। নগরের ৫টি থানা কমিটির ৫০৫ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব।

সম্মেলন ঘিরে কাউন্সিলর ও দলীয় নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। মঞ্চ নির্মাণ, সাজসজ্জায় প্রস্তুতি একবারে শেষ পর্যায়ে। রাতে দলীয় কার্যালয় ও শিববাড়ী মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। এ ছাড়া প্রার্থীরা নিজেদের ছবিসংবলিত প্যানা ও প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেছেন। সম্মেলন সফল করতে কাজ করছে ২১টি উপকমিটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে এ সম্মেলন হবে। সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান অতিথি ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশেষ অতিথি করা হচ্ছে।

সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য একটি চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক করা হয়েছে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ হোসেন রনিকে। কমিশনের সদস্যরা হলেন রফিকুল হক, হালিমা আকতার খানম ও সাইদুর রহমান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দেন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ হোসেন রনি জানান, সম্মেলনে সভাপতি পদে তিনজন নেতা, সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছয়জন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম জহির ও সাহাজী কামাল টিপু। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন বর্তমান কমিটির সদস্যসচিব শফিকুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী। সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শের আলম, মাসুদ পারভেজ, মাহবুব হাসান পিয়ারু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম তারিক ও শেখ সাদী। তারিকুল ইসলাম ছাড়া বাকি সবাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। সম্মেলনের সব বিষয়ে মনিটরিং করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি এবং খুলনার সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দুই বছরের ওই কমিটির কার্যক্রম শেষ হয় ২০২১ সালে। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল ইসলাম তুহিনকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর পর থেকে খুলনা বিএনপিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যায়। একটা সময় দলের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যান নজরুল ইসলাম। খুলনা বিএনপির নতুন অভিভাবক হয়ে ওঠেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও আজিজুল বারী হেলাল।

সবশেষ আহ্বায়ক কমিটি গত তিন বছরে মহানগর বিএনপির সম্মেলন দিতে পারেনি। এ বিষয়ে নগর বিএনপির নেতারা জানান, একদিকে পতিত সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা অন্যদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস—এসবের মধ্যে ওই সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা কঠিন সময় পার করেছেন। দীর্ঘদিন নেতা–কর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। এর মধ্যেও নতুন কমিটির নেতারা ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছেন। সবশেষ গত ডিসেম্বরে পাঁচটি থানা বিএনপির সম্মেলন করা হয়েছে।

এদিকে সম্মেলন সফল করার জন্য আজ রোববার দুপুরে নগরের কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে মহানগর শাখা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনা বিএনপিতে এই প্রথমবার ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে। সম্মেলন ঘিরে নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত।

এই সময় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, সার্কিট হাউস মাঠে সোমবার সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হবে। দুপুর ১২টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের প্রথম পর্বের পর বেলা সাড়ে ৩টায় জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম ভবনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিলে ভোটার রয়েছেন ৫টি থানার ৫০৫ জন। ইতিমধ্যে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সম্মেলনে নগরের ৩১টি ওয়ার্ড বিএনপির ৪ হাজার ডেলিগেট থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজার করে নেতা–কর্মী উপস্থিত থাকবেন। কাউন্সিলর, আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মীর সমাগম হবে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব এনপ র স ক ল ইসল ম র সদস য কর ম র কম ট র কর ছ ন গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

কলমাকান্দায় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মুদি দোকানি গ্রেপ্তার

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মাদ্রাসাপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগে মোজাম্মেল হোসেন (৫৫) নামে এক মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ মোজাম্মেল হোসেনকে আদালতে পাঠিয়েছে।

মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মোজাম্মেল হোসেনকে আসামি করে কলমাকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মোজাম্মেল উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের দক্ষিণ চৈতানগর গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে।   

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি সকালে ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফি দেওয়ার জন্য তার বাবার কাছ থেকে ১৩০ টাকা নেয়। মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মোজাম্মেল হোসেনের দোকান থেকে ১০ টাকার একটি কলম কিনে মনের ভুলে বাকী টাকা দোকানে ফেলে রেখে চলে যায়। কিছুসময় পর ফেলে আসা টাকা আনতে পুনরায় মোজাম্মেলের দোকানে যায় ওই শিক্ষার্থী। এসময় মোজাম্মেল বলেন, দোকানে টাকা নেই। বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আনতে। পরে সে মোজাম্মেলের বাড়িতে টাকা আনতে যায়। এসময় মোজাম্মেল ওই শিক্ষার্থীর পিছু নেন। সে ঘরে প্রবেশ করতেই মোজাম্মেল ঘরের দরজা বন্ধ করে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ রয়েছে, ১৭ ও ১৯ জানুয়ারি চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে পুনরায় ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন মোজাম্মেল। আর এ ঘটনাটি কাউকে বললে ওই শিক্ষার্থীকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও ভয় দেখান মোজাম্মেল। এরপর থেকে ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় যেতে রাজি হচ্ছিল না। কেন সে মাদ্রাসায় যেতে চায় না এর কারণ তার মা জানতে চাইলে কয়েকদিন পর বিষয়টি সে খুলে বলে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন সমকালকে জানান, মঙ্গলবার সকালে এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পরপরই মোজাম্মেল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে দুপুরে নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ