চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা আগামীকাল সোমবার চীন যাচ্ছেন। এই সফরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির চারজন নেতাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার রাত পৌনে ১১টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীনের উদ্দেশে যাত্রা করবে প্রতিনিধিদলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

সফরকারী প্রতিনিধিদলে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচজন নেতা রয়েছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য দলের আটজন নেতা চীন সফরে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান মো.

শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামান, জাতীয় ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষক মো. নাহিয়ান সাজ্জাদ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাফি সালমান রিফাত, সহমুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মিতু আক্তার।

বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের এই সফরে দুজন সাংবাদিকও রয়েছেন। তাঁরা হলেন ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার কূটনৈতিক প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান।

সফর উপলক্ষে আজ রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে প্রতিনিধিদলের নিজস্ব গাড়ি ভিআইপি পার্কিংয়ে প্রবেশ এবং লাউঞ্জ ব্যবহার করার অনুমতি প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।

এর আগে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক দল র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এবারে ঈদের বাজারে ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি মিলছে

রোজা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন চলছে ঈদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি। দেশে প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়লেও এবার ঢালাওভাবে সে রকম কিছু ঘটেনি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অধিকাংশ পণ্যের দামই রোজার আগের অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। তেমনি অনেক ক্রেতার মুখেও কিছুটা স্বস্তির ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁদের মতে, অনেক পণ্যের দামই কিছুটা আগের মতো আছে।

তবে ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ব্রয়লার, সোনালি ও দেশি মুরগি। এ দুটির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি মসলার দামও খানিকটা বেড়েছে। এ নিয়ে কয়েকজন ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়লেও তা নাগালের মধ্যেই আছে।

বরাবরের মতো সকালে বাজারে ক্রেতাসমাগম বেশি থাকে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। আজ শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও তেজগাঁও এলাকার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০-৩৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০–৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। আর প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৬৮০ টাকা, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬১০–৬৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

টাউন হল বাজারের মুরগি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে আমাদেরও পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। এক কেজি সোনালি মুরগি ৩১০ টাকায় বিক্রি করলে আমাদের ২০ টাকা লাভ হয়। কেউ কেউ আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।’

বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেকটাই আগের মতো। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু-এক জায়গায় অবশ্য ৮০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

ঈদ উপলক্ষে মসলার মধ্যে দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম বেড়েছে। টাউন হল বাজারের মসলা ব্যবসায়ী পলাশ পাল জানান, প্রতি কেজি দারুচিনির দাম ৪০ টাকা ও গোলমরিচের দাম ৮০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন এলাচি প্রকারভেদে ৪ হাজার ৬০০-৫ হাজার টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৩০০-১ হাজার ৩৫০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ১০০–১ হাজার ২০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৪৫০ টাকা, জিরা ৬০০-৮০০ টাকা, জায়ফল ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৬০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০-৬০০ টাকা, জয়ত্রি ৩ হাজার ৪০০-৩ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া (খোলা) ৪৫০-৫০০ টাকা, শুকনা মরিচ ২৮০-৩০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া (খোলা) ৩৫০-৩৬০ টাকা, ধনেগুঁড়া ৩৫০-৩৬০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০-১৬০ টাকা, দেশি রসুন ৭০-৮০ টাকা, বিদেশি রসুন ১৮০-২২০ টাকা, কাঁচা হলুদ ২৮০-৩২০ টাকা, দেশি আদা ২০০-২৩০ টাকা, বিদেশি আদা ১২০-১৩০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রকার ও মানভেদে প্রতি কেজি কিশমিশ ৫৬০-৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৫০-৫০০ টাকা, কাঠবাদাম ১ হাজার-১ হাজার ১০০ টাকা, পেস্তাবাদাম ২ হাজার ৬০০-২ হাজার ৭০০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৫০০-১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মসলা ব্যবসায়ী সোহান রহমান বলেন, মসলার দাম পাঁচ ছয় মাস আগে যা বেড়েছে, এখনো তা–ই রয়েছে। নতুন করে শুধু দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে।

মাছের দাম সার্বিকভাবে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে; শুধু রুই-কাতলা ও পাঙাশের দাম কেজিতে ২০–৫০ টাকা বেড়েছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আজিজ বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় চিংড়ি, রুই ও আইড় মাছের দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে।

ঈদ উপলক্ষে মাছের বাজারে ক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। এখন আকার ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙাশ আকারভেদে ২০০-২৫০ টাকা, কই মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০-১ হাজার ৪০০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার ৬০০-২ হাজার ৪০০ টাকা, রুই ৩৫০-৫০০ টাকা, কাতল ৩০০-৬০০ টাকা, মৃগেল ২৮০-৩৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-১ হাজার ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা ও রুপচাঁদা ৮০০-১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে এখনো কিছুটা স্বস্তি মিলছে। শুধু লেবু ও শসার দাম রোজার শুরু থেকেই চড়া রয়েছে। এখনো প্রতি কেজি শসা ৮০-১০০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু প্রকারভেদে ৪০-১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সবজি আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে।

ঈদের খাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিত সেমাই ও পোলাওয়ের চাল অনেকটা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। যেমন খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত ২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই ৫০ টাকা ও সাধারণ লম্বা সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সেমাইয়ের দাম আরও পাঁচ টাকা কমে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। পোলাওয়ের চাল ১০০-১৪০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক থাকায় প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ